হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে উদ্দেশ্য করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে পরিচালিত হচ্ছি সেই কাতারে আপনারাও আসবেন। আর না হলে যে স্লোগান একসময় দিয়েছিলেন ‘বাংলা হবে আফগান’ সেই আফগানিস্তানে আপনাদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা এবং তা ভাংচুরের প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এই সংগঠনের সদস্য সচিব।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকের সামনে অনুষ্ঠিত এই সভায় বাবুনগরীকে উদ্দেশ করে তাপস বলেন, “আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি কটূক্তি, বঙ্গবন্ধুর প্রতি আঘাত, বাংলার স্বাধীনতার উপর আঘাত বাংলার দামাল ছেলেরা কোনো দিন বরদাস্ত করবে না।
“সুতরাং আপনারা নিবৃত্ত হবেন এবং এই দেশকে একটি শান্তির নীড় হিসেবে আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেই কাতারে আপনারা আসবেন আর না হলে আপনারা যে স্লোগান এক সময় দিয়েছিলেন, বাংলা হবে আফগান সেই আফগানিস্তানে আপনাদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “জনাব বাবুনগরী আপনারা ভুলে গেছেন। মনে করেছেন একটি ভাস্কর্য ভাঙলেই বুঝি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা শান্তিপ্রিয়, আমরা সুন্দরভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলার জন্য আমরা নিয়োজিত আছি।
“কিন্তু তার মানে এই না যে, আপনারা পানি ঘোলা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, জাতির পিতার চেতনায় আঘাত করে আবার সেই জঙ্গিবাদে এই দেশকে নিয়ে যাবেন। সেই বাঙলা ভাই সৃষ্টি করবেন, সেই যুদ্ধাপরাধীদের আরেকবার ক্ষমতায় বসাবেন। সেই সুযোগ আর বাংলার মাটিতে আমরা হতে দিব না।”
যুদ্ধাপরাধের বিচার, জঙ্গিবাদ দমনের উদাহরণ টেনে ফজলে নূর তাপস মৌলবাদ মোকাবেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “ইনশাল্লাহ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলার বুক থেকে সকল মৌলবাদ নিষ্পন্ন হবে। সকল মৌলবাদকে আমরা নিশ্চিহ্ন করে দিব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকল প্রগতিশীল শক্তি আবার ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
তাপস বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ওপর এই অপশক্তির আক্রমণ আজকে নতুন না। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করার মাধ্যমে তারা মনে করেছিল যে, বাংলার বুক থেকে বঙ্গবন্ধু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু তা নিশ্চিহ্ন হয়নি। কারণ বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু একটি চেতনা, একটি আদর্শ, যেটি বাঙালি জাতির অন্তরে গেঁথে আছে। কোনোভাবেই সেটা মুছে দেওয়া যাবে না। নিশ্চিহ্ন করা যাবে না।”
দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আইনজীবীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, “ভাস্কর্য ভেঙে তারা মনে করেছে, তারা বিজয়ী হয়ে গেছে। আমরা আইনজীবী, যখনই সংবিধানবিরোধী কার্যক্রম হয়েছে, যখনই গণতন্ত্রকে আক্রমণ করা হয়েছে, যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত এসেছে তখনই দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছি। এখনও আমরা প্রস্তুত দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য।”
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারী, উসকানিদাতা ও ভাস্কর্য ভাংচুরকারীদের বিচার ও শাস্তির মুখোমুখি করতে সর্বোচ্চটা করার প্রতিশ্রুতি দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, যিনি একইসঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে আছেন।