আন্তর্জাতিক

আফগানিস্তান থেকে ১৪ দেশের প্রত্যাহার সম্পন্ন

কাতারের দোহায় স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে ৩১ আগস্টের ডেডলাইনের লক্ষ্যে চলছে আফগানিস্তান থেকে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহার। এরইমধ্যে ১৫ আগস্ট দেশটির নিয়ন্ত্রণ তালেবানের নেয়ার পর থেকেই সামরিক বাহিনীর সাথে সাথেই আফগানিস্তান থেকে নিজেদের বেসামরিক নাগরিকদের বের করে নিচ্ছে দেশগুলো।

একইসাথে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর দেশত্যাগে ইচ্ছুক আফগান নাগরিকদের আফগানিস্তান ছাড়তে সহায়তা করছে দেশগুলো। ইতোমধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত ১৪টি দেশ তাদের প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করেছে।

ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল স্যার নিক কার্টার সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছেন, “উপযুক্ত শত শত আফগানসহ সবাইকে উদ্ধার করতে না পারার কারণে তারা ‘ব্যথিত।
ব্রিটেনের প্রত্যাহার কার্যক্রমের ফ্লাইটে সবাইকে নিয়ে আসা সম্ভব না হলেও অন্য উপায়ে আফগানিস্তান থেকে বের হওয়া যাত্রীদের জন্য ‘ব্রিটেনের দরজা সবসময় খোলা থাকবে।”

ইতোমধ্যেই শুক্রবার পর্যন্ত আফগানিস্তান থেকে ব্রিটিশ নাগরিকসহ ১৪ হাজার পাঁচ শ’র বেশি লোককে সরিয়ে নিয়েছে ব্রিটেন।

এর আগে পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, হাঙ্গেরি, কানাডা, বেলজিয়াম, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও তুরস্ক তাদের প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করেছে।

২৫ আগস্ট প্রথম পশ্চিমা দেশ হিসেবে পোল্যান্ড আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করে। দেশটি নয় শ’ যাত্রীকে আফগানিস্তান থেকে বের করে নিয়েছে।
পরে একইদিনে প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করে বেলজিয়াম। মোট এক হাজার চার শ’ লোককে সরিয়ে নিয়েছে দেশটি।
২৫ আগস্ট ডেনমার্ক প্রায় এক হাজার লোককে বের করে নেয়ার পর দেশটি তাদের প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করে।

২৬ আগস্ট বোমা হামলার আগে বেসামরিক নাগরিক প্রত্যাহার শেষ করে তুরস্কের সামরিক বাহিনীর প্রথম দল দেশে ফিরে গিয়েছে। চাহিদার ওপর ভিত্তিক করে সোমবার আর দুইটি ফ্লাইট আফগানিস্তান থেকে তুরস্কে যাবে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিতে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়।

তুরস্ক অন্তত এক হাজার চার শ’ লোককে আফগানিস্তান থেকে বের করে নেয়। একইদিন জার্মানিও আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করে। দেশটি মোট পাঁচ হাজার তিন শ’ ৪৭ জনকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

অপরদিকে একইদিন কানাডাও নিজেদের প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করে। দেশটি প্রায় তিন হাজার সাত শ’ লোককে আফগানিস্তান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এছাড়া ২৬ আগস্ট মোট পাঁচ শ’ ৪০ জনকে বের করে নেয়ার পর আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করে হাঙ্গেরি। একইসাথে নিউজিল্যান্ড অন্তত দুই শ’ ৭৬ জনকে সরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে আফগানিস্তানে প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করে।

২৬ আগস্ট কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বোমা বিস্ফোরণে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভয়াবহ এই হামলায় ১৩ মার্কিন সৈন্যসহ ১৭৫ জন নিহত ও দুই শ’র বেশি লোক আহত হয়।

পরে ২৭ আগস্ট আবার বিমান চলাচল শুরু হয়।
শুক্রবার অস্ট্রেলিয়া আফগানিস্তান থেকে তাদের প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করে। দেশটি মোট চার হাজার এক শ’ লোককে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নিয়েছে।একইসাথে শুক্রবার স্পেন প্রায় দুই হাজার লোককে সরিয়ে নেয়ার পর আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করে।

মোট এক হাজার এক শ’ লোককে সরিয়ে নেয়ার পর শুক্রবার আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করে সুইডেন। একই সংখ্যক লোক সরিয়ে শুক্রবার প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করে নরওয়ে।

শুক্রবার ফ্রান্স প্রায় তিন হাজার লোককে সরিয়ে নেয়ার পর আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ করেছে।
শনিবার আফগানিস্তান থেকে ইতালির প্রত্যাহার কার্যক্রমের সর্বশেষ বিমানটি কাবুলে পৌঁছেছে। দেশটি আফগানিস্তান থেকে প্রায় পাঁচ হাজার লোককে সরিয়ে নিয়েছে।

১৫ আগস্ট তালেবান যোদ্ধারা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর বহুজাতিক বাহিনীর সদস্যসহ বিদেশী নাগরিক ও বিপুল সংখ্যক আফগান নাগরিকের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রসহ ২০টির বেশি দেশ তাদের নাগরিকদের সাথে সাথে বিপুল আফগান নাগরিককেও দেশটি থেকে বের করে নিয়ে যায়। বিভিন্ন দেশের সহায়তায় আফগানিস্তান থেকে এই পর্যন্ত অন্তত এক লাখ ১১ হাজার লোককে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

সূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি ও রয়টার্স

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three − two =

Back to top button