আল্লামা শফীর মৃত্যু: বাবুনগরী-মামুনুল হকসহ ৪৩ জনের বিরুদ্ধে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন
হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আহমদ শফীকে হত্যার প্ররোচনায় দায়েরকৃত মামলায় সংগঠনটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সোমবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল তৃতীয় জজ আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। বিকেলে বাংলাভিশন ডিজিটালকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন পিবিআইয়ের প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
তিনি বলেন, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আহমদ শফী হুজুর। তবে আল্লামা শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে গত ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিবলু কুমার দে’র আদালতে মামলার আবেদন করেন তার শ্যালক মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ওইদিনই পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পেয়ে তদন্ত শেষে মোট ৪৩ জনকে আসামি করে আজ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছি আমরা।
তিনি বলেন, সেই সময় ৩৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। তবে তদন্তে তাদের উল্লেখিত আসামিদের মধ্যে ৫ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং নতুন আরও ১২ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক আসামিদের নামগুলো জানাতে পারেন নি পিবিআই প্রধান।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় হেফাজতে ইসলামের সর্বোচ্চ নেতা ও হাটহাজারী মাদ্রাসার দীর্ঘদিনের পরিচালক আহমদ শফী মারা যান। তার আগের দিন ১৭ সেপ্টেম্বর শফীর অব্যাহতি এবং তার ছেলে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানির বহিষ্কার দাবিতে মাদ্রাসায় বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
সেই দ্বন্দ্বের জেরে ১৭ সেপ্টেম্বর শূরা কমিটির বৈঠকে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মহাপরিচালকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন ‘বড় হুজুর’ খ্যাত শফী আহমেদ। ওই বৈঠকে শফীর ছেলেসহ দুই শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় দৃশ্যত আহমদ শফীর সুদীর্ঘ দিনের কর্তৃত্বের অবসান ঘটে।
সেই বৈঠকের পরপরই আহমদ শফীকে মাদ্রাসা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ঢাকায় আনা হলে পরদিন তিনি মারা যান।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি মামুনুল হক ২০২০ সালের ১১ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় এসে হেফাজতের বর্তমান আমীর জুনাইদ বাবুনগরীর সাথে বৈঠক করে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানিকে বহিষ্কারের দাবি করেন আহমদ শফীর কাছে। আহমদ শফী বিক্ষুব্ধদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, আনাস মাদানিকে বহিষ্কার না করলে হেফাজতের তৎকালীন আমীরের চরম ক্ষতি করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয় বিক্ষুব্ধদের পক্ষ থেকে। এই সময় অসুস্থ আহমদ শফীকে বিক্ষুব্ধরা নানাভাবে বিরক্ত করেন এবং হুমকি দেন।
পরে ১৭ সেপ্টেম্বর আহমদ শফীকে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলেন এবং তার নাকে লাগানো অক্সিজেন নল খুলে ফেলেন বিক্ষুব্ধরা। এই সময় তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তার চিকিৎসার জন্য মাদ্রাসার বাইরে আনার চেষ্টা করেও পারা যায়নি।