Breakingদেশবাংলা

‘আল্লাহ আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরাইছে’

অদম্য ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস ও মনোবল কাজে লাগিয়ে সংসার সামলানোর পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন মাদারীপুরের দোলা বেগম (৩৫)। এক সময় আয়ের পথ না থাকায় পরিবার নিয়ে প্রায় অনাহারে দিন কাটাত তার।

স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নাইট গার্ডের চাকরি করেন। সেখান থেকে যে বেতন পান তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। অন্যের বাড়িতে কাজে গিয়েও দোলা ঠিকমতো বেতন পাননি। পরবর্তীতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ৯ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সে ব্লক-বাটিক, ফেব্রিকস, নকশি কাঁথাসহ সেলাইয়ের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন উদ্যোক্তা জীবন।

দোলা বেগম মাদারীপুর শহরের পাকদি এলাকার নুর মোহাম্মদ হাওলাদারের স্ত্রী। তিনি তার নিজ ঘরেই তৈরি করছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ঋণ নিয়ে সেলাই মেশিনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে শুরু করেন ব্যবসায়ের প্রাথমিক কাজ। আস্তে আস্তে দোলা বুঝতে পারে মানুষের পছন্দ ও চাহিদার বিষয়। অল্পদিনেই তার তৈরি পোশাক ও মডেল পছন্দ হয় স্থানীয়দের। তারপর থেকেই তার জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করে। এখন প্রায় ১০০-২০০ জন নারীকে এসব প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করেছেন তিনি। নারীরা আজ নিজ সংসারে বোঝা না হয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা নিয়ে এসেছেন। তারা একদিকে কাজ শিখছে অন্য দিকে আর্থিকভাবেও সফল হয়েছেন সকলে। বর্তমানে দোলার মাসিক আয় ৪০-৫০ হাজার টাকা। দোলার কাছে কাজ করে খুশি অনেক মেয়ে। তারাও দোলার মতো একজন উদ্যোক্তা হতে চান।

উদ্যোক্তা দোলা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সংসারের বোঝা হয়ে না থেকে সেলাই কাজ শুরু করেছি। যা থেকে নিজেও স্বাবলম্বী হয়েছি অন্যদেরও উৎসাহিত করছি। যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে কাজ শুরু করার পর থেকে আল্লাহ আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরাইছে। এখন অনেক ভালো আছি। যা আয় করি তাতে আমার সংসার ভালোভাবে চলে। সঞ্চয়ও করতে পারি। তবে সহায়তা পেলে এই প্রশিক্ষণ কাজ ব্যাপক পরিসরে করা যাবে।

প্রশিক্ষণার্থী আরিফা আক্তার বলেন, দোলা আপুর থেকে কাজ শিখেছি। তার কাজের মান ও ধরন ভালো। এর জন্য আমরা সকলে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পেরেছি। আমি চাই আপুর মতো একজন সফল উদ্যোক্তা হতে।

ময়না বেগম নামে একজন বলেন, আমি কোন কাজ না পাওয়ায় দোলা আপুর কাছে গেলে সে আমাকে আগে ভালোভাবে কাজ শিখতে ও আত্মবিশ্বাসী হতে শিখেছি। এখন আমি সব কাজ করতে পারি।

মিনা আক্তার নামে আরেক নারী বলেন, দোলার থেকে কাজ শিখছি। এখন আমি নিজেও কয়েক জনকে প্রশিক্ষণ দেই। এ থেকে আমার মোটামুটি ভালো টাকা আয় হচ্ছে। দোলার উছিলায় আল্লায় আমাগো ভালো লাগছে। আল্লাহ প্রতিটা মানুষকে এক একটা উছিলায় বাচায়।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস.এম মাইনুল আহসান বলেন, বেকার যুব নারীদের আত্মকর্মসংস্হান ও স্বাবলম্বী করার জন্য অনেক প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেনিং শেষে অনেকেই উদ্যোক্তা হয়েছেন। আগ্রহীদের ঋণ দিয়ে থাকি উদ্যোক্তা হতে। দোলা বেগম এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন। তাকে দেখে অনেক নারীরা প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন।

সূত্রঃ ঢাকাপোস্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × one =

Back to top button