আন্তর্জাতিককরোনাভাইরাস

আশার বানী শোনালেন করোনা থেকে সুস্থ হওয়া এলিজাবেথ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়ে কাঁপুনির মাঝে করোনা চিকিৎসার ইতিবাচক ছবি ভেসে ওঠেছে। করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে সুস্থ হয়ে ওঠলেন এক মার্কিন তরুণী। আর সুস্থ হয়ে তার সহজ অথচ গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, ভয় পাবেন না। তবে অসুস্থ বোধ করলে ঘরেই থাকুন। মার্কিন তরুণীর এই বার্তাই যেন করোনা আতঙ্কের মাঝে একটুকরো আশার আলো দেখাচ্ছে।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে বসবাস করছেন যেখানে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার সবচাইতে বেশি। কিন্তু ৩৭ বছর বয়সী এই নারী বায়োইঞ্জিনিয়ার করোনায় আক্রান্ত হবার পর আবার সুস্থও হয়ে গেছেন। আর নিজের এই সুস্থ হওয়ার কথা জানিয়ে মানুষের মধ্যে ‘আশার সঞ্চারণ ঘটাতে চান’ এলিজাবেথ। তিনি বলেন, ‘আমি সুস্থ হয়ে গিয়েছি। অনেকেই সুস্থ হয়েছেন। কিন্তু তাই বলে বিষয়টিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। বিশেষত বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ সকলের সাবধানে থাকা উচিত। আর সে কারণেই প্রয়োজন ছাড়া আমাদের বাহিরে না বের হওয়া এবং নিজেদের যথা সম্ভব বাহির থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা সবচাইতে নিরাপদ।’

কিন্তু এই নিরাপত্তা গ্রহণের পরও কোন ভুল বশত আপনি করোনায় আক্রান্ত হলে কী করবেন? এলিজাবেথ ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম লক্ষ্য করেন তার সর্দি হয়েছে। মূলত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার তিনদিন পর তার মধ্যে এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া আরো ৫ জনকে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।

এলিজাবেথ জানান, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরও আমার বেশ ক্লান্ত লাগছিলো। বিষয়টি মোটেও স্বাভাবিক ছিলো না। কেননা এ সময় আমি ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাবার জন্য প্রস্তুতি নেই।

এরপর দিনের মধ্যবর্তী সময়ে এসে তার মাথা ব্যথা শুরু হয়। একটু পর শুরু হয় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। এরপরই তিনি তার অফিস ছেড়ে বাসায় চলে আসেন।

বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়েন এলিজাবেথ। কিন্তু ঘুম থেকে ওঠার পর দেখেন তার অনেক জ্বর। প্রায় ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা। তিনি বলেন, ‘আর ঠিক তখন থেকেই শরীরে কাঁপুনি, গলায় ব্যথা শুরু হয়। আর বিষয়টি নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই।’

এ সময় নতুন করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন স্থানে খবর প্রকাশ হচ্ছিল। কিন্তু তখনো যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসের প্রবেশ নিয়ে কোন তথ্য ছিলো না। তারপরও তার মনে আশা ছিলো। কেননা করোনার লক্ষণ অনুসারে প্রচণ্ড কাশি বা শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো না এলিজাবেথের। সে নিশ্চিত ছিলো, কভিড-১৯ ভাইরাসে তিনি আক্রান্ত নন। তিনি ভেবে ছিলেন, তার বাজে ভাবে ঠাণ্ডা লেগেছে। কিন্তু করোনায় তিনি আক্রান্ত হননি।

অবশ্য কয়েকদিন পরই তার এই ভুল ভাঙ্গে। কেননা অনুষ্ঠানে যাওয়া অনেকের মধ্যেই করেনা ভাইরাস পাওয়া গেছে বলে ফেসবুকে দেখতে পায় এলিজাবেথ। তিনি বলেন, সত্যিই দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো। আমাকের পরীক্ষার জন্য সিয়াটল ফ্লু রিসার্চ সেন্টারে যেতে হয়। ৭ মার্চ আমাকে ফোন করে জানানো হয়, কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত আমি।

অবশ্য ততদিনে কিছুটা ভালো অনুভব করতে শুরু করেন এলিজাবেথ। আর সে কারণে তাকে আরো ১০ দিন ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। এলিজাবেথ বলেন, ভাইরাসে আক্রান্ত হবার খবর পাওয়ার পর আমি নিজেও ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহও ছিলো আমার মধ্যে। আমি বোঝার চেষ্টা করেছি, আমার কি করলে ভালো লাগে। আর সেখান থেকেই আমার মনে হয়েছে প্রত্যেকের বিষয়টি সম্পর্কে জানা উচিত।

এলিজাবেথ বলেন, আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। প্রথমেই নিজেকে শান্ত রাখুন। সর্দির জন্য সাধারণ যে ওষুধগুলো রয়েছে ব্যবহার করুন। বেশি বেশি পানি পান করুন। এতে কিছুটা স্বস্তি পাবেন। তিনি বলেন, কোনভাবেই হতাশ হবেন না। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। আর সর্বোপরি সময়টা উপভোগের জন্য নিজের পছন্দের প্লেলিস্ট বেছে নিন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এলিজাবেথের সামান্য সংক্রমণ হয়েছিল। তার ওপর তিনি নিজেই যথেষ্ট সতর্ক। হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকেই তিনি দ্রুত আরোগ্য লাভ করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one + 11 =

Back to top button