ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভারতে দুর্বল করোনা
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এ ভাইরাসের মূল যে উপশ্রেণি (সাব-টাইপ) ভারতসহ দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় ছড়িয়েছে সেটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের উপশ্রেণির তুলনায় এখন পর্যন্ত কিছুটা কম আক্রমণাত্মক আচরণ করছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’এর প্রকাশিত করোনাভাইরাস সংক্রান্ত একটি গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। তবে ভারতের যা জনঘনত্ব তাতে ভাইরাসের দুর্বলতার ভরসায় না থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাটাই এখন একমাত্র পথ বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভাইরাস অতি দ্রুত নিজেকে মিউটেট বা পরিবর্তিত করে আগামী দিনে আরো ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। কারণ অতি দ্রুত মিউটেট করার ক্ষমতা রয়েছে এ ভাইরাসের। তাই যেকোনো সময় এটি আরো ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
জানা গেছে, এ গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। সেই পরীক্ষার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন মার্কিন বিজ্ঞানী ফরেস্টার এবং তার সহযোগীরা। করোনাভাইরাসকে তিনটি উপশ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে, এ, বি এবং সি। গবেষকদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ‘এ’ এবং ‘সি’-র ভাইরাস দেখা গেলেও দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভাইরাসের যে ধরনটি মূলত দেখা যাচ্ছে, সেটি হচ্ছে‘বি’।
ভারত যেহেতু দক্ষিণ এশিয়াতেই অবস্থিত, সুতরাং ভারতেও ‘বি’ টাইপ ভাইরাস থাকার সম্ভাবনা অধিক। তবে ভবিষ্যতে এই ‘বি’ টাইপ পরিবর্তিত হয়ে ‘এ’ বা ‘সি’ টাইপে চলে যাচ্ছে কি না সেটা বোঝা যাবে সপ্তাহখানেক পরেই। আরো জানা গেছে যে, ‘এ’ এবং ‘সি’-র তুলনায় ‘বি’-র ক্ষমতা এখন পর্যন্ত তুলনামূলক ভাবে কম। যেসব জায়গায় ‘এ’ বা ‘সি’টাইপ করোনাভাইরাসের উপস্থিতি বেশি, সেখানকার তুলনায় ‘বি’ টাইপ এলাকায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর অনুপাত তুলনামূলকভাবে কম।
ওই প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’এর অধ্যাপক প্রিয়দর্শী বসু বলেন, করোনার সংক্রমণের ভয়াবহতা যে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম বলে মনে হচ্ছে তার ব্যাখ্যা দুই রকম। প্রথমত ‘হোস্ট ইমিউনিটি’ বা আক্রান্ত ব্যক্তির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। ভারতের মতো যে সব অঞ্চল ম্যালেরিয়া প্রবণ সেসব জায়গার মানুষের দেহে এমনিতেই একটি প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। বিসিজি ভ্যাকসিন নেয়ার ফলেও এটি ঘটে থাকতে পারে। দ্বিতীয় কারণটির প্রসঙ্গে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণাপত্রের উপরেই জোর দেন তিনি। তার মতে, এ ভাইরাসের মূল উৎস চীনের উহানে ‘এ’ থেকে পরিবর্তিত হয়ে ‘বি’ এবং ‘সি’ টাইপ তৈরি হয়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে তিন ধরণের ভাইরাসেরই উপস্থিতি দেখা গেছে বলেও জানান তিনি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার এখন পর্যন্ত ইউরোপের যেকোনো দেশের তুলনায় অনেকটাই কম তাই বিশেষজ্ঞদের মতে ভারত এখনও পর্যন্ত ‘বি’ ভাইরাস জোনে রয়েছে। তবে ভারতে পরীক্ষা কম হওয়ার কারণে করোনা সংক্রান্ত তথ্যও অ্যাকাডেমির কাছে কম ছিল। ভারতের নমুনা নিয়ে আরো কাজ হচ্ছে বলে জানা গেছে। আগামী সপ্তাহে আরও নতুন তথ্য পাওয়া যাবে। সূত্র- আনন্দবাজার