ইসলামী দল নিয়ে জোট করার চেষ্টা করছি: চরমোনাই পীর
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ইসলামী দলগুলো ছাড়া আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অন্য যে ভোগবাদী দলগুলো আছে তাদের প্রতি জনগণের অনীহা তৈরি হচ্ছে।
করোনাভাইরাস, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণসহ সবকিছুতে সরকার ব্যর্থ। ক্ষমতাসীনরা এখন একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন চালাচ্ছে। ফলে দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক সংকট চলছে। যার পরিণতি কারও জন্যই শুভ নয়। এমন পরিস্থিতিতে আমরা ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে জোট করার প্রস্তুতি নিয়েছি। যারা আমাদের ডাকে সাড়া দেবে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই জোট করার পরিকল্পনা আছে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। ১৯৮৭ সালে দলটি প্রথমে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময়ে দলটির আমীর ছিলেন মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করিম। ২০০৬ সালে তিনি ইন্তেকাল করলে তার ছেলে মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম দলের আমীর নির্বাচিত হন। পরে ২০০৮ সালে দলের নাম পরিবর্তন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নামকরণ করা হয়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলটি গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব কটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল।
একাদশ সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর বলেন, প্রশাসনকে ব্যবহার করে জনগণের রায় ছাড়াই জোরপূর্বক তাদের এমপিদের নাম ঘোষণা করেছে। তখনই আমরা নির্বাচন বয়কট করেছিলাম। সরকারকে বলেছিলাম, ভবিষ্যতের জন্য এটা কল্যাণ বয়ে আনবে না। এটা দেশ ও জনগণের জন্য ক্ষতিকারক হবে। ইসলামী দলগুলোর রাজনীতি থেকে সাধারণ মানুষ কি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, নাকি আপনাদের রাজনৈতিক আদর্শে তারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে-এটা মনে করার কারণ নেই। কারণ, ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি এবং সাধারণ মানুষ শান্তি চায়। বরং ইসলামী দলগুলো ছাড়া আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য যে ভোগবাদী রাজনৈতিক দলগুলো আছে, তাদের প্রতি জনগণের অনীহা তৈরি হচ্ছে।
ভবিষ্যতে ইসলামী দলগুলো নিয়ে জোট করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, এ ক্ষেত্রে আমরা ইসলামী আদর্শটা সর্বপ্রথম প্রাধান্য দেব। দেশ এবং জনগণের কল্যাণার্থে যারা আমাদের সঙ্গে আসতে চায়, তাদের নিয়ে জোট করতে বাধা নেই। জোট করার প্রস্তুতি আমাদের আছে। যারা আমাদের ডাকে সাড়া দেবে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই জোট করার পরিকল্পনা আছে।
জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে তিনি বলেন, ইসলামের যে আদর্শ আছে সেখান থেকে অনেকটাই সরে গিয়ে জামায়াত রাজনীতি করছে। আমরা যেটা মনে করি, জামায়াতের কার্যক্রমে যা প্রকাশ পায় তা হল- ক্ষমতাই তাদের কাছে প্রধান। তারা শুধু ইসলামকে ব্যবহার করে রাজনীতি করছে।
আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে অন্য কোনো দল ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেতে পারবে বলে কি মনে করেন-এমন প্রশ্নের জবাবে চরমোনাই পীর বলেন, এমনটা মনে করেই আমরা ইসলামী আদর্শ নিয়ে মাঠে-ময়দানে কাজ করছি। আলহামদুলিল্লাহ আমরা ব্যাপক মানুষের সাড়া পাচ্ছি। একাদশ সংসদ নির্বাচনেই তো স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে জনগণ রায় দেয়ার মতো পরিবেশ আমরা লক্ষ করেছি। আমরা সব কটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিলাম।
সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা ওই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। বলেছিলাম, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীন আর কোনো সংসদীয় নির্বাচনে আমরা অংশ নেব না। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং অংশগ্রহণও করেছি।
করোনাকালীন পরিস্থিতি সম্পর্কে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর বলেন, এটা আল্লাহ?র পক্ষ থেকে একটা পরীক্ষা। তামাম দুনিয়ার ভেতরে যে করোনা মহামারী আকার ধারণ করেছে, তাদের যে ব্যবস্থাপনা সেদিক থেকে বাংলাদেশ সরকার অনেকটাই ব্যর্থ। সেভাবে তারা একটি পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারেনি। আর করোনার মধ্যেও জনপ্রতিনিধিরা, বিশেষ করে যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন তারা বিভিন্ন রকম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জার একটা বিষয়।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাকেলায় সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা কোনো মানের মধ্যেই পড়ে না। অনেক রোগী দেখা গেছে হাসপাতালে যাওয়ার পর আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। একপর্যায়ে অনেক রোগী মারাও গেছেন। তবে কিছু কিছু চিকিৎসক, প্রশাসনের লোকজন বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা পালন করেছেন, মানবতার পরিচয় দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু লোকজন দুর্নীতিসহ বিভিন্ন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সার্বিকভাবে যে দুর্নীতি চলছে তাতে বাংলাদেশকে কোনো সভ্য দেশ বলা যায় না। যারা দেশ পরিচালনা করে তাদের মধ্যে দুর্নীতি থাকলে সব জায়গায়ই অশান্তি বিরাজ করবে-এটাই বাস্তবতা।
মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘বর্তমান সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু সেটা না করা সরকারের হীনমন্যতার পরিচয় দিচ্ছে। সরকারের মন তো আরও উদার হওয়া উচিত। যারা দেশের কল্যাণ চায়, মানুষের উপকার চায়, তাদের সব রাজনৈতিক দলের পরামর্শ নেয়া দরকার। আমাদের সবাইকে নিয়েই তো সরকার। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীনরা এখন একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন চালাচ্ছে। ফলে দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক সংকট চলছে। যার পরিণতি কারও জন্যই শুভ নয়।’
দেশের অর্থনীতির নাজুক অবস্থা জানিয়ে মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, দেশের মানুষের ভেতরে কঠিন একটা আর্থিক দুর্বলতা দেখা দেয়ার মতো পরিবেশ আমরা লক্ষ করছি। কারণ, অনেক মানুষের এখন আয়-রোজগার একেবারে বন্ধ। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এটা একটা পর্যায়ে বিশাল অর্থনৈতিক সংকটে রূপ নেবে।
তিনি আরও বলেন, দেশবিরোধী, জনগণবিরোধী সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা সব সময় আন্দোলন করে আসছি। দেশ, জনগণ এবং ইসলামের স্বার্থে আমাদের সাধ্য অনুযায়ী আমরা ভবিষ্যতেও কাজ করব। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সুন্দরভাবে কাজ করার তৌফিক দান করেন। সূত্র যুগান্তর