ধর্ম ও জীবন

ইসলামের প্রথম শহীদ সাহাবী স্বামী-স্ত্রী

প্রিয় রাসুল নবুয়ত লাভের পূর্বে আরবসমাজে আল-আমিন, আস-সাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার কাছে বিভিন্ন গোত্রের মূল্যবান ধন-সম্পদ আমানত রাখ হতো। কারণ তিনি ছিলেন একজন বিশ্বস্ত আমানতদার। তিনি ছোটবেলা থেকে কখনো মিথ্যা কথা বলেননি। তাই মক্কার সকল মানুষ তার উপর বিশ্বাস ছিল প্রবল।

চল্লিশ বছর বয়সে নবুয়ত প্রাপ্ত হন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)। এরপর প্রিয় রাসুল সুরা শুয়ারার ২১৪ নম্বার আয়াতের নির্দেশ দেওয়া হয় নিজ পরিবারে শুরুতে ইসলামের দাওয়ার পেশ করতে। রাসুল শুরুতে পরিবারের সবইকে ডেকে বলেন ‘আমাদের প্রভু একমাত্র রব আল্লাহ ও আমি তার পক্ষ থেকে প্রেরিত শেষ নবী। ’ এ দাওয়াত পেশ করার পর তার চাচা আবু-তালিব দাওয়াত গ্রহণ না করলেও তাকে সাহায্য করবে বলে জানান। তবে চাচা আবু তালিব ঘোর বিরোধিতা করে মোহাম্মদকে গালিগালজ করেন।

রাসুলের দ্বীনের দাওয়াতের শুরুতে মক্কার একদম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকেরাই প্রথম দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত সুমাইয়া (রাঃ), হযরত ইয়াসির, হযরত বেলাল (রা.) ছিলেন মক্কার সেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোক। তারই শুরুতে এ দ্বীনের দাওয়াত গ্রহণ মুখোমুখি হন চরম নির্যাতনের। আজকে ইসলামে প্রথম শহীদ সুমাইয়া ও তার স্বামী কিভাবে দ্বীনের পথে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন সে বিষয়টি তুলে ধরবো।

ইসলামের প্রথম শহীদ হযরত সুমাইয়া (রাঃ) এর এই পৃথিবীতে জন্ম হয়েছিল একজন দাসী হিসাবে। রাসূল (সাঃ)দ্বীন ইসলাম প্রচার করার সাথে সাথে হযরত সুমাইয়া (রাঃ) ও তার স্বামী-ছেলে মুসলমান হয়ে যান।

হযরত সুমাইয়া (রাঃ) ছিলেন শুরুর দিক থেকে ইসলামগ্রহণ করার মাঝে ১৭ তম। ইসলাম গ্রহণ করার পর হযরত সুমাইয়া (রাঃ) এর উপর আবু জেহেল চরম অত্যাচার শুরু করে।

আবু জাহেল তাদেরকে মক্কার আল-বাতহা উপত্যকার মরুভূমির তপ্তবালুর মাঝে লোহার পোশাক পরিয়ে শুইয়ে রাখত। যেহেতু হযরত সুমাইয়া (রাঃ) এর কোন নিজস্ব গোত্র ছিল না তাই আবুজাহেল তার ইচ্ছামত হযরত সুমাইয়া (রাঃ) কে অত্যাচার করত।

রাসূল (সাঃ) যখন হযরত সুমাইয়া (রাঃ) এর পাশদিয়ে যেতেন তখন বলতেন- ‘হে ইয়াসিরের পরিবার- পরিজন! ধৈর্য্য ধর। তোমাদের জন্য সুসংবাদ। তোমাদের জন্য রয়েছে জান্নাত! ”

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন হযরত সুমাইয়া (রাঃ) কে জান্নাতের সুসংবাদ দিতেন তখন হযরত সুমাইয়া (রাঃ) রাসূল (সাঃ)কে বলতেন- “ইয়া রাসূলুল্লাহ(সাঃ)! আমি জান্নাতের সুগন্ধ এই তপ্ত মরুভূমির বুকেই শুয়েই পাচ্ছি। ’

দীর্ঘদিন অত্যাচার নির্যাতন করার পরও যখন হযরত সুমাইয়া (রাঃ) দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করলেন না তখন একদিন আবু জাহেল হযরত সুমাইয়া (রাঃ) এর লজ্জাস্থানে বর্শা নিক্ষেপ করে তাকে শহীদ করে ফেলেন।

হযরত সুমাইয়া (রাঃ) এর মৃত্যুর পর নরাধম আবু জেহেল উনারস্বামী হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির (রাঃ) কেও তীর বিদ্ধ করে শহীদ করে ফেলেন।

হযরত সুমাইয়া (রাঃ) এর শাহাদাতের ঘটনাটা ঘটে ৬১৫ খ্রীষ্টাব্দে। অর্থ্যাৎ রাসূল (সঃ) এর নব্যুয়তপাওয়ার পর ৫ বছর পর হযরত সুমাইয়া (রাঃ) শাহাদাত বরন করেন।

বদর যুদ্ধে আবু জেহেল নিহত হলে রাসূল (সাঃ) হযরত সুমাইয়া (রাঃ) এর ছেলে হযরত আম্মার রাযিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন- “আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তোমার মায়ের ঘাতককে হত্যা করেছেন।”

হযরত সুমাইয়া (রাঃ) এর একমাত্র সন্তান হযরত আম্মার (রাঃ) এর তত্ত্বাবধানেই মদীনার কুবা শহরে ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মসজিদ তৈরি হয়। আজ থেকে ১৪০০ বছরপূর্বে এই মহান মহিলা সাহাবী হযরত সুমাইয়া (রাঃ) ইসলামের সুমহান সৌন্দর্য্যে মুগ্ধহয়ে মুসলমান হয়ে যান।

ইসলামগ্রহন করার কারণে আবু জেহেল হযরত সুমাইয়া (রাঃ) এরপ্রতি কত অত্যাচার ইনা করেছিল কিন্তু হযরত সুমাইয়া (রাঃ) দ্বীন ইসলাম থেকে একচুলও সরে যাননি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − 3 =

Back to top button