শিল্প ও বাণিজ্য

ই-কমার্সে ডেলিভারি নির্বাহীর চাহিদা বাড়ছে

দেশের বাজারে ই-কমার্স ব্যবসার পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডেলিভারি নির্বাহী তথা ডেলিভারি বয়ের চাহিদা।  

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার বাজার রয়েছে ডেলিভারি ব্যবসায়।

করোনাকালে ডেলিভারি নির্বাহীদের চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে কেনাকাটার অন্যতম সুবিধা হচ্ছে অর্ডার করা পণ্য নিজের পছন্দমতো স্থানেই পান গ্রাহক। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময়ে দেশে ই-কমার্সের চাহিদা আরও গুরুত্বের সঙ্গে সামনে চলে আসে। ঘর থেকে বের হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরগুলোর গ্রাহকেরা কেনাকাটার জন্য বেছে নেন ই-কমার্সকেই। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে দরকারি বিভিন্ন পণ্য ও সেবার অর্ডার যেমন বাড়তে থাকে তেমনি বাড়তে থাকে ডেলিভারির কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাহিদা ও ব্যস্ততা।

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসা অর্ডার গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে পরিচিত নাম ই-কুরিয়ার। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপ্লব ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, কোভিড-১৯ এর শুরুর দিকে ডেলিভারি বয়দের চাহিদায় একটু ভাটা পড়েছিল। ই-কমার্সে অর্ডারও কম আসত। অনেক ডেলিভারি বয় রাজধানী ছেড়ে নিজেদের জেলায় চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর থেকে এদের চাহিদা আবার বাড়তে থাকে। ই-কমার্সে অর্ডার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়তে থাকে।

বিপ্লব ঘোষ আরও বলেন, আমাদের ই-কুরিয়ার দিয়ে যদি উদাহরণ দিই কোভিড-১৯ এর শুরুর দিকে আমাদের ডেলিভারি বয়ের সংখ্যা ছিল প্রায় পৌনে দুইশ। একেকজন রাইডার দিনে ৩৫ থেকে ৪৫টি পার্সেল ডেলিভারি করত। কোভিডের সময়ে ডেলিভারি বয়ের সংখ্যা নেমে আসল ৫০ জনে। বর্তমান সময়ে আমাদের ডেলিভারি বয়ের সংখ্যা আবার আগের মতো, দেড় শতাধিক। একেকজন ডেলিভারি বয় দিনে গড়ে ৪০টি করে পার্সেল ডেলিভারি করছেন। সেই হিসাব থেকে বললে, ডেলিভারি বয়দের চাহিদা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

ই-কমার্সের পণ্য গতানুগতিকভাবে ডেলিভারি দেওয়ার পাশাপাশি এই খাতের ডেলিভারিতে এসেছে নানা দিক। মুদি পণ্য, ওষুধ এবং খাবারের মতো পণ্য ডেলিভারিতে চাহিদা দেখা দিয়েছে ‘অন ডিমান্ড’। ফলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং ভিত্তিতেও কাজের সুযোগ বাড়ছে এই খাতে।

রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাও, সহজের মতো প্রতিষ্ঠান গ্রোসারি, ওষুধ এবং ফুড ডেলিভারিতে নিজেদের কার্যক্রমের পরিধি বাড়িয়েছে। পাঠাও এর প্রধান বিপণন ও জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দা নাবিলা মাহবুব বলেন, পাঠাও রাইড শেয়ারিং, ই-কমার্স, ফুড ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ডেলিভারি সেবা প্রদানকারী একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। করোনাকালে ডেলিভারি ম্যানদের চাহিদা বেড়েছে এবং পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানও হয়েছে। ফলে পাঠাও-তে ডেলিভারি ম্যানের সংখ্যাও বেড়েছে আগের তুলনায়।

এদিকে রাজধানীর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতেও বাড়ছে ডেলিভারি বয়দের চাহিদা। আর এতে গড়ে মাসে ১৫ হাজার টাকার মতো বেতন পাচ্ছেন তারা। তবে ফ্রিল্যান্স ভিত্তিতে যারা কাজ করেন তাদের জন্য সুযোগ থাকে আরও বেশি উপার্জন করার।

ইভ্যালির ডেলিভারি উইং ই-লজিস্টিকসের অপারেশন ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ডেলিভারির চাহিদা বিবেচনা করে করোনার মাঝে গত এপ্রিলে ইভ্যালিতে সম্পূর্ণ আরেকটি বিভাগ ই-লজিস্টিকস চালু করা হয়। এই বিভাগে এখন পর্যন্ত প্রায় চার হাজার ডেলিভারি বয় কাজ করছেন। আমরা তাদের ‘ইভ্যালি হিরো’ বলে থাকি। এদের মধ্যে রাজধানীতে প্রায় তিন হাজার, চট্টগ্রামে প্রায় ৭০০, কক্সবাজারে দুই শতাধিক এবং সিলেটে প্রায় ৫০০ হিরো ফ্রিল্যান্স ভিত্তিতে কাজ করছেন। একটি ডেলিভারিতে ১০০ টাকা করে এবং সফল তিনটি ডেলিভারিতে অতিরিক্ত আরও ৩০০ টাকা বোনাস অর্থ্যাৎ তিনটি ডেলিভারিতেই একজন হিরো ৬০০ টাকা উপার্জন করতে পারছেন। সেই হিসেবে দৈনিক এক হাজার টাকা সহজেই আয় করতে পারেন একজন ইভ্যালি হিরো।

ডেলিভারি ব্যবসার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এই খাতে সরকারের আইনের প্রয়োগ আরও জোরালো করার দাবি জানান সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা। ই-কুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী বিপ্লব কুমার বলেন, এই ব্যবসা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠছে। কিন্তু এদের বেশিরভাগের মাঝেই আইন মানার বালাই নেই। কারও কারও ন্যূনতম ট্রেড লাইসেন্স নাই। ট্রেড লাইন্সেস থাকলেও ডাক বিভাগ থেকেও লাইসেন্স নিতে হবে, অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠানের এসব দালিলিক ভিত্তি নেই। ডেলিভারি যেমন বাড়ছে ডেলিভারি সংক্রান্ত অনেক হয়রানির অভিযোগও আমরা পাই। এতে যেমন গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হন ই-কমার্স ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারাও। সবাইকে আরও উন্নত সেবা দেওয়া, ই-কমার্সের ওপর আস্থা ধরে রাখতে এদের বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। নইলে যারা ভিন্নরকম কিছু করছেন তাদের জবাবদিহিতার মাঝে আনা যাচ্ছে না। 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 5 =

Back to top button