ঈদে সাড়া ফেলতে আসছে ‘রাজকুমার’
কক্সবাজারের চকরিয়ায় কোরবানির পশুর হাট জমে উঠার আগেই এলাকা জুড়ে সাড়া ফেলেছে ‘রাজ কুমার’। ‘রাজ কুমার’ নামের বিশাল এ গরুটি দেখতে প্রতিনিয়ত এলাকার সাধারণ লোকজন ও ক্রেতারা ভিড় করছেন। এ গরুটি কিনতে এরইমধ্যে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ২৪ ব্যক্তি যোগাযোগ করেছেন।
গত তিন বছর ধরে লালন পালন করা ৩০ মণেরও (১২০০ কেজি) অধিক ওজনের বিশাল এ গরুটি কোরবানি বাজারে দাম হাঁকা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ‘রাজ কুমার’ এর দর উঠেছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। জেলায় এবারের কোরবানির ঈদে পশুর হাটে সবচেয়ে বড় গরু ও আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ কুমার বলে দাবি করেন গরুর মালিক বাদল।
তিন বছর আগে বাদলের খামারেই জন্ম হয় ‘রাজ কুমার’ এর। গত কোরবানির ঈদে এ গরুটির ওজন ছিল এক টন। সে সময় ‘রাজ কুমারকে’ উপজেলার বড় একটি কোরবানির পশুর হাটে উঠানো হয়। সেখানে ক্রেতারা এ গরুটির দাম ৮-৯ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খামারি বাদল বেশি দামের আশায় গরুটি ওই সময় বিক্রি করেননি। গত কোরবানির হাটে এ গরুটির মূল্য ক্রেতারা ৯ লাখ টাকা বললেও এবার বলছেন ১০ লাখ টাকা। কিন্তু গরুটির মালিক বাদল গত ঈদের হাটে দাম হাঁকিয়েছিলেন ১৫ লাখ টাকা। এ গরুটি তিনি এবার দাম হাঁকছেন ২০ লাখ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপির দরবেশ কাটার কৃষক আবু ওবাইদ বাদল কৃষি কাজের পাশাপাশি তিনি নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ছোট্ট গরুর ডেইরি ফার্ম। বর্তমানে তার ডেইরি ফার্মে ছোট-বড়, মাঝারি মিলে ৪৪টি গরু রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। বাদলের ডেইরি ফার্মের বেড়ে উঠা সবচেয়ে বড় গরুটির নাম ‘রাজ কুমার’। পরম যত্মে গরুর মালিক বাদল ও তার কর্মচারীরা মিলে তিন বছর ধরে তাকে কোনো প্রকার ক্ষতিকর ওষুধ ছাড়াই দেশীয় খাবার খাইয়ে লালন-পালন করেছে। তাই শখ করে তার নাম রেখেছিলো ‘রাজ কুমার’। রাজ কুমার খুব শান্ত প্রকৃতির, কাউকে কোনো বিরক্ত করে না। এবার কোরবানির ঈদের জন্য অধিকতর পরিচর্যায় তাকে প্রস্তুত করা হয়েছে। রাজকুমারের খাবার দাবারের তালিকাও রাজার মতোই।
ডেইরি ফার্মের মালিক আবু ওবাইদ বাদল বলেন, রাজ কুমার শুধু নামে নয়, তার খাবার-দাবারও অন্যান্য পশুর চেয়ে আলাদা। গরুটির পরিচর্যা করতে আমি ছাড়াও একজন আলাদা কর্মচারী রেখেছি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের সার্বক্ষণিক পরামর্শক্রমে কোনো প্রকার ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার ছাড়াই দেশীয় খাবার খাইয়ে গরুটিকে লালন-পালন করেছি। ‘রাজ কুমার’কে নিয়মিত খর, ভূষি ছাড়াও তাকে খাওয়ানো হয় কমলা, মাল্টা, চিড়া, সয়াবিন ও গুড়সহ নানা রকমের খাবার।
খাবার বাবদ প্রতিদিন তার পেছনে খরচ হয় ১২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। রাজ কুমার গরম সহ্য করতে পারে না। তাই তার জন্য রাখা হয় চারটি ফ্যান।
তিনি আরো বলেন, গত কোরবানির ঈদে গরুটিকে বাজারে উঠানো হয়েছিল। তখন গরুটির ওজন ছিল ২৫ মণ। আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় গত বছর বিক্রি করিনি। এবার গরুটির ওজন হয়েছে ৩০ মণের (১২০০ কেজি) চেয়ে বেশি।
এ ‘রাজ কুমারকে’ আরো এক বছর লালন পালন করতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গত বছর বিক্রি করতে না পারায় এবারো বৈশ্বিক মহামারি অদৃশ্য করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি। অন্তত এ কোরবানির সময় গরুটি’র ভালো দাম পেলেই তাকে বিক্রি করতে পারলেই লালন-পালনের পরিশ্রম সার্থক হবে।
চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.সুপন নন্দী বলেন, কৃষি চাষের পাশাপাশি গরুর ডেইরি ফার্ম করে স্বাবলম্বী হন আবু ওবাইদ বাদল। তার ফার্মে বেড়ে উঠা সবচেয়ে বড় গরু ‘রাজ কুমার’কে দেশীয় খাবার খাইয়ে সঠিক পরিচর্যায় ও প্রাণিসম্পদ অফিসের তদারকিতে লালন-পালন করে বড় করেছেন তিনি। এ গরুটিকে নিয়মিত দেখাশোনা করা হচ্ছে। বর্তমানে এ গরুর ওজন ১২০০ কেজির ওপরে। আমার দেখায় উপজেলায় এ গরুটি এখন সব থেকে বড়।