উত্তরের অর্থনৈতিক ভাগ্য বদলের হাতিয়ার যখন হাড়িভাঙ্গা
মাসুদ আলম, রংপুর থেকে: সুস্বাদু, সুমিষ্ট ও আঁশবিহীন হাড়িভাঙ্গা আম বৃহত্তর রংপুর তথা উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। ফি-বছর আম চাষ করে বদলে যাচ্ছে স্থানীয় আম চাষীদের ভাগ্য। প্রতি বছর বাড়ছে এই আমের চাষ। তাই হাড়িভাঙ্গা আমকে অর্থনৈতিক ভাগ্য বদলের ক্ষেত্রে আশির্বাদ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। প্রায় ৭৫ বছর আগে এই জাতের আমের উদ্ভাবন হলেও এর ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে ৯০ এর দশকে। এ জাতের নামকরণ নিয়েও আছে চমৎকার একটি ঘটনা। এই আম প্রথম চাষ করেছিলেন নফল উদ্দিন পাইকার নামের এক বৃক্ষবিলাসী মানুষ। শুরুতে এর নাম ছিল মালদিয়া। আমগাছটির নিচে তিনি মাটির হাঁড়ি দিয়ে ফিল্টার বানিয়ে পানি দিতেন। একদিন রাতে কে বা কারা ওই মাটির হাঁড়িটি ভেঙে ফেলে এবং ওই গাছেই বিপুল পরিমাণ আম ধরে। সেগুলো ছিল খুবই সুস্বাদু। বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে গেলে লোকজন ওই আম সম্পর্কে জানতে চায়। তখন চাষি নফল উদ্দিন মানুষকে বলেন, ‘যে গাছের নিচের হাঁড়িটা মানুষ ভেঙ্গেছিল সেই গাছেরই আম এগুলা।’ তখন থেকেই ওই গাছটির আম ‘হাঁড়িভাঙ্গা আম’ নামে পরিচিতি পায়। বর্তমানে রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমের মাতৃ গাছটির বয়স ৬৩ বছর। সুমিষ্ট ও ছোট আঁটির এই আমের সুখ্যাতি ও চাহিদা এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও ছড়িয়েছে। বিগত বছরগুলোতে আমের ফলন বেশ ভালো হওয়ায় রংপুর অঞ্চলে ব্যাপর হারে বেড়েছে হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাষ। বেড়েছে উৎপাদনের পরিধি। চলতি বছর এই আমের উৎপাদন ২৮ হাজার মেট্রিক টন হতে পারে বলে জানিয়েছেন রংপুর কৃষি অধিদপ্তর। মৌসুমের শুরুতে দাম কিছুটা কম থাকলেও প্রতি কেজি হাড়িভাঙ্গা বিক্রি হয় ৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এ বছর আম বিক্রি করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার উপর আয় হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে চাষীরা। জনপ্রিয় এই আম চলতি মাসের ২০ তারিখের পর পরিপক্ব হবে এবং সংগ্রহ করে বাজারজাত করা যাবে জানিয়েছে রংপুর কৃষি অধিদপ্তর। তবে এবার মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে আম সঠিক সময়ে বাজারজাত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। কোনোপ্রকার অসুবিধা ছাড়াই আম বাজারজাত করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি বিপণন, পরিবহন খাত এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবী জানিয়ে আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমের সার্বিক কার্যক্রম যেন ব্যহত না হয়, সে বিষয়ে আস্বস্ত করেছে "জেলা প্রশাসন, রংপুর "।