করোনাভাইরাসদেশবাংলা

এবার রিকশাচালক দান করলেন ১৩ হাজার টাকা

এবার জামালপুরের দরিদ্র রিকশাচালক মো. হযরত আলী ১৩ হাজার টাকা দান করলেন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমানের হাতে এ টাকা তুলে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিকশাচালক মো. হযরত আলীর (৬৪) বাড়ি জামালপুর পৌরসভার পাথালিয়া ছাতার মোড় এলাকায়। তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলের মধ্যে একজন দিনমজুর। আরেক ছেলে শহরের একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

হযরত আলী ২০০৬ সাল থেকে ঢাকায় রাজারবাগের কুসুমবাগ এলাকায় ভাড়াবাসায় থেকে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে হযরত আলী নিজেও কর্মহীন হয়ে পড়েন এবং স্ত্রীকে নিয়ে মাসখানেক আগে ঢাকা থেকে জামালপুরে চলে আসেন।

ঢাকায় রিকশা চালিয়ে উপার্জিত টাকায় কিছুদিন আগে একটি গরু কেনেন তিনি। পরে জামালপুরে তার গ্রাম এলাকায় এক ব্যক্তিকে গরুটি বর্গা দেন। এলাকায় ফিরে রোজগার না থাকায় সেই গরুটি বিক্রি করে দেন তিনি। গরু বিক্রির টাকা থেকে তিনি ১৩ হাজার টাকা করোনায় তার মতো কর্মহীন হয়ে যারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাদের জন্য দান করার ইচ্ছা পোষণ করেন হযরত আলী। সেই ইচ্ছা থেকে টাকাগুলো দান করেন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিকশাচালক মো. হযরত আলী বলেন, ‘আমি নিজেও একজন গরিব মানুষ। কিন্তু দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি ভালা দেখতাছি না। করোনায় মানুষের মেলা ক্ষতি অইতাছে। মেলা মানুষ অভাবে আছে। মানুষ মারাও যাইতাছে। ওষুধ কিনবার পাইতাছে না। মানুষের এই সমস্ত সমস্যা দেইখা আমার ভালা লাগে না। আমি টাকা দিয়া কি করমু। বাঁচমু কি না তারও কোনো গ্যারান্টি নাই। আর আল্লায় বাঁচাইয়া রাখলে কামাই মেলা করবার পামু। তাই আমি আমার কষ্টের টাকায় কিনা গরু বিক্রির টাকা থেইকা সামান্য কিছু টাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিলাম। উনি যেন এই টাকা দিয়া গরিব মাইনষেরে খাবার ও ওষুধ কিনা দেন। ’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘রিকশাচালক হযরত আলীর মতো একজন দরিদ্র মানুষ তার কষ্টের জমানো টাকা থেকে এই যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১৩ হাজার টাকা জমা দিলেন- এটা মহত্বের লক্ষণ। কারণ উনি চিন্তা করেছেন যে তার চেয়ে বেশি দরিদ্র যারা, তাদের যদি উপকার হয়, সেই চিন্তা থেকেই উনি যেটা করলেন, সেটা অবশ্যই একটি মহৎ কাজ।’

মো. মোকলেছুর রহমান আরও বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উনার টাকাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। উনার এই অবদানের কথা জেলা প্রশাসন সব সময় মনে রাখবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ’

প্রসঙ্গত, এর কয়েকদিন আগে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গান্ধীগাঁও গ্রামের নজিমুদ্দিন নামে এক ভিক্ষুক তার ভিক্ষা করে জমানো ১০ হাজার টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেন। সে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও পৌঁছে যায়। এরপর তিনি নজিমুদ্দিনকে জমিসহ ঘর দেওয়ার কথা জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one + 16 =

Back to top button