বিবিধ

ঔষধি বৃক্ষপ্রেমী গাইবান্ধার শওকত মাস্টার

গাইবান্ধার গোবিন্ধগঞ্জের নাকাইহাট এলাকার বাসিন্দা শওকত আলী। এলাকার সবাই তাকে শওকত মাস্টার বলে চেনে, তবে তিনি এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন বিলুপ্ত ও দুর্লভ প্রজাতির ঔষধি ও ফলজ বাগান করে।

স্থানীয়রা জানায়, অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক নিজের বাড়িতে বিলুপ্ত ও দুর্লভ প্রজাতির প্রায় এক হাজার ঔষধি ও ফলজ গাছের বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনি বাগান থেকে উৎপাদিত ওষুধ ও ফল বিনামূল্যে সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করেন।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও গাছ দ্বারা প্রাকৃতিক ওষুধ দিয়ে রোগ নিরাময় বাড়াতে তার এ প্রচেষ্টা বলে জানান শওকত আলী।

জানা যায়, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের নাকাইহাট ইউনিয়নের শীতলগ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শওকত আলী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সঙ্গেও জড়িত। বয়স ৯০ এর কাছাকাছি হলেও মানবসেবার কাছে বয়স তাকে পরাজিত করতে পারেনি। মানুষ ও গাছের প্রতি ভালবাসা তার শৈশব থেকেই। তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীর নিয়ে তার সংসার। তার কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন পরিবারের সদস্যরাও।

ছেলে সোহাগ বলেন, আমার বাবার মতো মানুষ এ সমাজে আরও দরকার। তাহলে আমরা ঔষধি গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পারতাম।

শওকত আলী সারাদিন চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বসতবাড়ির আশপাশে ও পুকুর পাড়ে গড়ে তুলেছেন প্রায় ১ হাজার বিলুপ্ত প্রায় ও দুর্লভ প্রজাতির ঔষধি ও ফলজ গাছ। গ্রামের অন্যান্য এলাকায় এসব বিলুপ্ত প্রায় ও দুর্লভ গাছের চারা ছড়িয়ে দিতে বিনামূল্য বিতরণ করে যাচ্ছেন তিনি। সেই সাথে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে পরিচিত করে দেন এসব গাছের সাথে জানিয়ে দেন বিভিন্ন গাছের গুণাগুণ। গাছের প্রতি এমন মমতা বোধের কারণে এলাকার মানুষ তার নাম দিয়েছে বৃক্ষপ্রেমিক শওকত আলী। তার এই কার্যক্রমে খুশি জেলা কৃষি বিভাগ ও সাধারণ মানুষ।

এলাকার বাসিন্দা রুবেল চৌধুরী বলেন, আমরা তো শুধু ধান ও অন্যান্য ফসল চাষ করে নিজের স্বার্থ বড় করে দেখি। নিজের স্বার্থের জন্য জমিতে নানা ফসলের চাষ করে বছরের খাবার জোগাড় করি। কিন্তু শওকত মাস্টার তা করেন না, তিনি ব্যতিক্রম। তার জমিতে শুধু ধান-গমের আবাদ করেন না। মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজের অনেক জমিতে লাগিয়েছেন বিরল প্রজাতির ঔষধি গাছ। মানুষ তার গাছের বাগান দেখতে আসেন। মানুষ গাছ দেখতে এলে তিনিও খুশি হন। নিজের গাছ দেখিয়ে বলেন আমরা বেঁচে আছি এই গাছের গুণেই। গাছ দিয়েই যে কতো রকমের ওষুধ তৈরি হয় সে সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি তার কাছ থেকে।

আরেক বাসিন্দা সাহেব উদ্দিন মাস্টার বলেন, শওকত মাস্টার মানুষের কল্যাণে গাছের চারা বিতরণ করেন, পয়সা নেন না। গাছের যত্ন কিভাবে নিতে হয় সে ব্যাপারে মানুষকে জানান। তিনি গাছের গুণাগুণ নিয়েও কথা বলেন।

শওকত আলী গাছ নিয়ে গবেষণায় অন্যান্য অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু পুরস্কার ছাড়াও জেলা ও উপজেলায় একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন।

শওকত আলীর এমন কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে সবাইকে তার মতো গাছ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম ফেরদৌস। সেই সাথে শওকত আলীর গাছের সংগ্রহ শালা বাড়াতে বিরল গাছের চারা, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 1 =

Back to top button