বাংলাদেশের জাতীয় দলের মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ হওয়ার একটি উদাহরণ রাখলেন সবার প্রিয় ‘মুশি’। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম এবার বগুড়ার মানুষদের করোনাভাইরাস পরীক্ষার সুবিধার্থে চারটি বুথ স্থাপন করেছেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব বুথ বুধবার বিকালে উদ্বোধন করেন বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মাছুদুর রহমান মিলন।
মুশফিকের এই আয়োজনে পাশে দাঁড়িয়েছেন আরেক জনপ্রিয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও। নিজের প্রতিষ্ঠিত সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন থেকে বগুড়ার ৩৫০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন তিনি।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর সময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবার আগে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন দেশের সেরা ক্রিকেটাররা। এরপরও তাদের ভক্ত দুস্থ মানুষদের পাশে থাকার প্রত্যয় নিয়ে সাকিব আল হাসান বিক্রি করেন গত বিশ্বকাপে প্রচুর রান করা তার সাধের ব্যাট, মাশরাফি বিক্রি করেন তার প্রিয় ব্রেসলেট।
পিছিয়ে ছিলেন না বাংলাদেশের হয়ে সবসময় বুক চিতিয়ে লড়াই করা সবার প্রিয় খেলোয়াড় মুশফিকও। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে দেশটির বিপক্ষে ও বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো এই ক্রিকেটার যে ব্যাট দিয়ে ওই টেস্ট খেলেছিলেন নিলামে তোলেন সেটি।
৯ মে পিকাবুতে শুরু হওয়া ওই ব্যাটের নিলাম শেষ হয় ১৪ মে। ব্যাটটি ২০ হাজার ডলার দিয়ে কিনে নেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। ব্যাট বিক্রি করে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৭ লাখ টাকা পাওয়ার পর তাই দিয়ে করোনা যুদ্ধে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই জাতীয় তারকা।
জন্মস্থান বগুড়ার মানুষের পাশে দাঁড়াতে গত ২৩ মে ঈদ উপলক্ষে ব্যাট বিক্রির অর্থে প্রথমবার ৩০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন তিনি। আর এবার বগুড়ায় সাধারণ মানুষের করোনাভাইরাস পরীক্ষার সুবিধার জন্য স্থাপন করলেন ৪টি বুথ। এছাড়াও করা হয়েছে একটি ডক্টরস সেফটি বুথ।
বুধবার বিকালে বুথগুলো উদ্বোধন করার পর অর্ধ শতাধিক মানুষ নমুনা জমা দেন।
বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু জানান, জেলায় করোনাভাইরাস ও উপসর্গে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এতে জনগণ বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল পিসিআর ল্যাবে নমুনা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। ঠিক এসময় জাতীয় ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম তার নিজ এলাকার মানুষের করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নিরাপদে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে এগিয়ে আসেন। তার অর্থায়নে বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে একটি ডক্টর সেফটি চেম্বার, তিনটি করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের বুথ এবং শহরের সেউজগাড়ীর রাবেয়া নার্সিং হোমের সামনে একটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
বুথ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, জাতীয় ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম শুধু বুথই স্থাপন করে দেননি তিনি সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মীদের জন্য পিপিই, গ্লাভস, মাথার আচ্ছাদনসহ স্বাস্থ্য সামগ্রী, এবং লকডাউনে থাকা ৩৫০ দুস্থ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।
মুশফিকের এই চেষ্টার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সাকিবও। বগুড়ার দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াতে নিজের নামে গড়া সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন থেকে মুশফিকের মাধ্যমে বগুড়ার আরও ৩৫০টি পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান।