জাতীয়শিল্প ও বাণিজ্য

করোনা মোকাবেলায় এডিবিকে বর্ধিত সহায়তার অনুরোধ অর্থমন্ত্রীর

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্টকে বর্ধিত সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আঞ্চলিক উন্নয়ন ব‌্যাংকটির কাছে বাজেট সহায়তাও চেয়েছেন তিনি।

সোমবার (২০ এপ্রিল) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মাসাতাসুগু আসাকাওয়ার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি এবং সহযোগিতা নিয়ে ফোনে আলাপচারিতাকালে এ অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা জানিনা যে, এই সংকট কতোদিন থাকবে এবং তা আমাদের অর্থনীতিকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবুও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করোনার প্রভাবে আমাদের আমদানি-রফতানির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বেশিরভাগ দেশে প্রবাসী ভাইবোনেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। স্থবিরতা নেমে এসেছে রেমিটেন্স প্রবাহে। এই সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমরা অবশ্যই এডিবিকে অবিরাম সমর্থন ও সহায়তার জন্য অনুরোধ করছি।

করোনা মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি খাতে ২০ বিলিয়ন বা দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণার জন্য এডিবির প্রেসিডেন্ট আসাকাওয়ার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পাশাপাশি তিনি স্বাস্থ্য খাতের জরুরি সেবা ও বাজেট সাপোর্টের জন্য এডিবি বাংলদেশের জন্য যে ৬০২.৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে সেজন্যও ধন্যবাদ জানান।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এই ক্রান্তিকালীন সময়ে এডিবির তাৎক্ষণিক সহায়তাটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল, কিন্তু বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতে আমাদের প্রয়োজন এর চেয়ে আরও অনেক বেশি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের উপর করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য এডিবি থেকে বর্ধিত প্রকল্প সহায়তা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য আরও ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সাপোর্ট, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ফ্রন্টলাইন কর্মীদের (চিকিৎসা কর্মী, সিভিল প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদানকারী) জন্য ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, কোভিড-১৯ এর কারণে চাকরি হারানো দেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এবং অতি-ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাতের ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর্থিক সহায়তা এবং অছাড়কৃত ওসিআর লোনের চার্জ হ্রাসের অনুরোধ করেন। এডিবি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের উল্লিখিত খাতসমূহে আর্থিক সহায়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন এবং বিষয়টি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশকে সময়মত অবহিত করবেন বলে জানান।

এসময় এডিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, এই মহামারি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে। যার ফলে এই অঞ্চলের দরিদ্রতা আরও বাড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। এডিবি ঘোষিত সহযোগিতা প্যাকেজ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এবং বেসরকারি খাতকে এই মহামারি মোকাবিলা করার জন্য দ্রুত সরবরাহ করা হচ্ছে।

তিনি অর্থমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশে এডিবির চলমান প্রকল্প ও পাইপলাইনের প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করেন সেগুলো দ্রুত সফলভাবে সমাপ্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করেন।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবির প্রায় ৮.৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তায় ৬৩টি প্রকল্প চলমান রয়েছে, পাশাপাশি পাইপলাইনে রয়েছে প্রায় ৯.৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার ৮১টি প্রকল্প।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × two =

Back to top button