কিভাবে করোনা জয় করলেন শিল্পী বেগম ও তার মেয়ে!
১৭ দিন আইসোলেশনে থাকার পর দুইবার করোনা নেগেটিভ আসায় করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার শিল্পী বেগম ও তার মেয়ে সুরভী আক্তার।
তাদের মতে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে, নার্সদের আন্তরিক সেবা আর মনোবল শক্ত রাখার ফলেই তারা সুস্থ হয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়া, আইসলেশনে থাকা ও মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরার গল্প শোনালেন এই মা-মেয়ে।
শিল্পী বেগম জানান, তারা সপরিবারে ঢাকায় থাকেন। স্বামী মো. হাবিবুর রহমান ব্যবসায়ী। সংসারে তারা স্বামী-স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছেন।
গত ৫ এপ্রিল ঢাকা থেকে পরিবারের সবাই গ্রামের বাড়িতে আসেন। বিষয়টি এলাকার লোকজন স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে। যখন তারা বাড়িতে আসেন তাদের মধ্যে কারোরই কোনো করোনার উপসর্গ ছিলো না। সবাই স্বাভাবিক ছিল।
এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ঢাকা থেকে আসার বিষয়টি জানতে পেয়ে তাদের সবাইকে হোমকোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলে। সেইসঙ্গে পরিবারের সবার করোনার নমুনা সংগ্রহ করে। নমুনার ফল তার এবং মেয়ে সুরভীর পজিটিভ আসে। বাকি ৬ জনের নেগেটিভ আসে। এরপর তাদের দুইজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইসোলেশন সেন্টারে নেয়া হয়।
শিল্পী বেগম বলেন, প্রথমে করোনা পজিটিভ আসায় অনেকটা ভয় পেয়ে যাই। নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয়। দেশে বিদেশে করোনা নিয়ে অনেক কিছু শোনা যাচ্ছে; না জানি কী হয়! সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। আবার এটাও চিন্তা হয়েছে, আমাদের দুজনের তো কোনো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। কোথাও কি কোনো ভুল হচ্ছে? সারাক্ষণ শুধু পরিবার ও নিজেদেরকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল।
কী হচ্ছে? কী হতে চলছে? সারাক্ষণ মাথার মধ্যে এসব ঘুরপাক খেতো। দু’চোখে নেমে আসছিল ঘোর অন্ধকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের প্রতি সহায় হয়েছেন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী ও মানুষের দোয়ার বরকতে ফিরে আসতে পেরেছি। এ জন্য মহান আল্লাহ তা’আলার দরবারে লাখো লাখো শুকরিয়া আদায় করি।
শিল্পী বেগমের মেয়ে সুরভী জানান, তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বক্ষব্যধি হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়। সেখানে চলে তাদের চিকিৎসা। ওই আইসোলেশন কেন্দ্রে মহিলা ওয়ার্ডে মোট ১০ জন করোনা রোগী ছিলেন।
তিনি বলেন, ১১ এপ্রিল যখন আমাদের আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া হয় তখন থেকে ডাক্তার এবং নার্সদের চিকিৎসা সেবার কোনো ক্রুটি ছিলো না। নার্স ও ডাক্তাররা নিজেদের জীবন বাজি রেখে নিরলসভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। যা কখনো ভোলার নয়। ডাক্তাররা এমনিতে ২-৩ বার আসতেন। কারো কোনো অসুবিধা হলে ডাক্তারদের আরো বেশি আসতে দেখা গেছে।
ওষুধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের কোনো উপসর্গ ছিল না, তাই শুধু প্যারাসিটামল, নাপা এ জাতীয় ওষুধ ৩ বেলা দিয়েছে। তবে যাদের ঠান্ডা, কাশি ও ব্যথা রয়েছে তাদের ওই রোগ অনুযায়ী ওষুধ দিয়েছে। প্রতিদিন সবাইকে গরম পানি দিয়ে কয়েক বার ভাপ নিতে হয়েছে।
প্রতিনিয়ত ডাক্তার এবং নার্সরা আমাদের সব সময় মনে সাহস যুগিয়েছেন। আমার কাছে মনে হয়, এই সাহসটাই আমাদের বেঁচে ফিরতে সাহায্য করেছে। মনে ভয় ঢুকে গেলেই তো মানুষ বেশি দুর্বল হয়ে যায়।– বললেন সুরভী।
খাবার প্রসঙ্গে মা শিল্পী বেগম বলেন, প্রতিদিন সকালের নাস্তায় ডিম, কলা, রুটি দিয়েছে। দুপুর ও রাতে দিয়েছে- ভাত, মাংস, মাছ, সবজি। ডিসির পক্ষ থেকে ইফতার সামগ্রীও দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আপেল, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলও দিয়েছে।
হাসপাতালের পরিবেশ নিয়েও সন্তুষ্ট এই মা-মেয়ে। ধন্যবাদ জানান সরকারকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. রাশেদুর রহমান জানান, উপজেলায় এ নিয়ে আক্রান্ত ১৫ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। প্রথমে বিজয়নগরে আক্রান্ত চিকিৎসক আখাউড়া পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকার একজন ও আমোদাবাদ গ্রামের একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। পরে মা, মেয়েসহ মোট ৪ জন বাড়ি ফিরেছেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে চিকিৎসার কোনো ত্রুটি নেই। আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত সুস্থ করতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।