রাজনীতি

কেমন আছেন খালেদা জিয়া?

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গত এক বছরে অবনতি হয়েছে বলে জানালেন তাঁর চিকিৎসক। গুলশানে ‘ফিরোজা’ নামের দোতলা একটি বাড়িতে তিনি এখন থাকেন। বাড়িটির উল্টো দিকেই রুশ দূতাবাস।

বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ বাড়ার সময় গত বছরের ২৫ মার্চ শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির পর থেকে ফিরোজাতেই থাকেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তাঁকে বাড়ির ছাদ বা আঙিনায় কখনো দেখা যায়নি। মাঝেমধ্যে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই, বোন, কিংবা ভাইয়ের স্ত্রী আসেন দেখা করতে। এ ছাড়া আসেন চিকিৎসকেরা। দলীয় কোনো নেতা-কর্মীদের দেখা যায় না এখানে।

কেমন আছেন খালেদা জিয়া?

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় চার–পাঁচজনের একটি মেডিকেল টিম রয়েছে। তাঁর শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়মিতভাবে তত্ত্বাবধান করেন যে কজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক, তাঁদের একজন অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন কিছুদিন আগে সাংবাদিকদের বলেন, এক বছরে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। কারও সাহায্য ছাড়া চলাফেরা বা নিজের কোনো কাজই করতে পারেন না।

চিকিৎসকেরা বলছেন, ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, চোখের প্রদাহ, হৃদ্‌রোগ সমস্যাসহ নানা রকম শারীরিক জটিলতা রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁরা দেখা করতে যেতে পারেন না। কেবল দুই ঈদের সময় দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয় তাঁদের।

কেউ তাঁদের বাধা দেন কি না জানতে চাইলে এই নেতা জানান, শর্তে যেহেতু লেখা আছে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়, সে কারণে তাঁরা যেতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে পরামর্শ, বক্তব্য দিতে পারেন না। কারণ, শর্তে লেখা আছে, উনি রাজনীতি করতে পারবেন না। পরিবারের সদস্য ছাড়া কারও সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। সে জন্য এক বছর ধরে তাঁর রাজনৈতিক কোনো মন্তব্য বা বিবৃতি নেই।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, তৃণমূলের কর্মীরা চান সব কর্মকাণ্ডে নেত্রী অংশগ্রহণ করুন। তাঁরা নেত্রীর কথা শুনতে চান। দল চায়, তাঁর মুক্তিতে আরোপ করা শর্ত তুলে নেওয়া হোক।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত কারাগারে পাঠান। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী থাকার পর করোনা পরিস্থিতিতে শর্ত সাপেক্ষে তাঁকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালে। পরে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়, যার সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা আগামী ২৪ মার্চ। তার আগেই পরিবারের পক্ষ থেকে আবার আবেদন করা হবে বলে বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন।

খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে তার পরিবার। একইসঙ্গে তার জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতিও চাওয়া হয়েছে।   স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে তার ছোট ভাই শামীম ইসকান্দার এ আবেদন জমা দেন। আবেদনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করে সেটি সচিবের দপ্তরে পাঠিয়ে দেন।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু গণমাধ্যমকে বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইসকান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ সংক্রান্ত আবেদনপত্র হস্তান্তর করেছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে খালেদা জিয়া প্রথমে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। পরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেখে প্রায় ১১ মাস চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে তাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি নিজ বাসভবনে থাকলেও রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন।।

মুক্তির বিষয়ে কী বলছে সরকার?

খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য দরখাস্ত করা হলে সে ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনা করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে বিএনপি নেত্রীকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য স্থায়ী মুক্তির যে দাবি দলের পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর (খালেদা জিয়ার) সাজা স্থগিত রাখা হয়েছে। তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কোনো আবেদন করা হয়নি। তাঁর সাজা স্থগিত করার জন্য এর আগে তাঁরা যেভাবে আবেদন করেছিলেন, তা বিবেচনা করেছে সরকার। সেভাবে আবার দরখাস্ত করা হলে বিবেচনা করা হবে।

সূত্রঃ প্রথমআলো প্রতিবেদন অবলম্বনে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 2 =

Back to top button