Lead Newsদেশবাংলা

কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি প্রায় ‘পানির দরে’

কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রায় ‘পানির দরে’। প্রকারভেদে প্রতিটি গরুর চামড়া ১০০ থেকে ৪০০ টাকা ও ছাগলের চামড়া ১০ টাকায় কেনা হয়েছে। তবে বড় গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় নেয়া হয়।

বগুড়ায় শনিবার বড় বড় ব্যবসায়ীরা দোকান বা রাস্তার পাশে বসে দিনভর চামড়া কিনেছেন। মূল্য কম হওয়ায় অনেক কোরবানিদাতা চামড়া বিক্রি না করে মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন।

চামড়ার বাজারে ধস নামায় দুস্থরা বঞ্চিত হয়েছেন। আলেম সমাজ ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে ও সরেজমিন শহরের চকসুত্রাপুর, বাদুড়তলা, ১নং রেলগেট এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বেলা ১১টার পর থেকে চামড়া কেনাবেচা শুরু হয়। গরুর চামড়া ১০০ টাকা (গাভী) থেকে ৪০০ টাকায় (ষাঁড়) বিক্রি হয়। তবে বড় সাইজের গরুর চামড়া (২৫-৩০ বর্গফুট) ৫০০ থেকে ৫৫০টাকায় কেনা হয়েছে। ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে, ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকায়। ভেড়ার চামড়ার দাম দেয়া হয়নি। বিক্রেতারা গরু বা ছাগলের চামড়ার সঙ্গে ফ্রি দিয়ে গেছেন।

শনিবার বিকালে কাহালুর বীরকেদার গ্রাম থেকে আবদুর রহিম, সারিয়াকান্দির হাটফুলবাড়ির ফিরোজ মাহমুদ, সোনাতলার হলিদাবগার আবদুল মোত্তালিব, শিবগঞ্জের বুড়িগঞ্জে লতিফুর রহমান প্রমুখ শহরের বাদুড়তলায় বিক্রি করতে আসেন। তারা জানান, গত বছর চামড়ার বাজারে ধস নামে। এ বছর মূল্য আরও কম। তাদের আনা প্রতিটি চামড়ার দাম থেকে ১০০ থেকে ৩৫০ টাকার বেশি দেয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা চামড়া দিয়ে গেছেন।

এদের কেউ কেউ মন্তব্য করেন, চামড়া বিক্রি করে ভটভটি ভাড়ার টাকা উঠেনি।

বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়ার নুর ইসলাম, নুজহুল ইসলাম, সায়েদ আলী শেখ, কাটনারপাড়ার কামরুল ইসলাম, নুরানী মোড়ের রুহুল আমিন, ফুলবাড়ির আবদুর রশিদ প্রমুখ জানান, তারা ৪৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায় গরু কেনেন। এবার মৌসুমি ক্রেতাদের কেউ বাড়িতে চামড়া কিনতে আসেনি। বাদুড়তলায় চামড়ার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মূল্য অনেক কম। তাই তাদের কোরবানির পশুর বিক্রি না করে স্থানীয় মাদ্রাসা ও মসজিদে দান করেছেন।

সুলতানগঞ্জপাড়ার দর্জি ফিরোজ জানান, তাদের ৬৫ হাজার টাকায় কেনা সৌখিন গরুর চামড়া অনেক বার্গেনিং করে ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন, অনেকে।

তারা দুঃখ করে বলেন, চামড়ার বাজার ধস নামায় এ বন্যা ও করোনাকালে দুস্থরা বঞ্চিত হলেন। গরীবের পেটে লাথি দেয়া হল।

শহরের বাদুড়তলার চামড়া ব্যবসায়ী মো. সবুর জানান, তিনি ১০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে গরুর চামড়া ও ১০ থেকে ১৫ টাকায় ছাগলের চামড়া কিনেছেন। তিনি ভেড়ার চামড়া নেননি।

ব্যবসায়ী মামুনুর রশিদ দাবি করেন, তিনি প্রতিটি গরুর চামড়া ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় কিনেছেন।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার চামড়ার বাজার মন্দা। তবে সব চামড়া ব্যবসায়ী বাজার ধসের জন্য ঢাকার ট্যানারি মালিকদের দায়ী করেন।

তারা বলেন, তাদের অনেক পাওনা বকেয়া রয়েছে। গত বছরের ১০ লাখ টাকা পাওনা থাকলেও চামড়া কেনার স্বার্থে ২-৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এবারও অধিকাংশ চামড়া বাকিতে দিতে হবে। এ কারণে তারাও বাধ্য হয়ে কম দামে চামড়া কিনেছেন।

এদিকে চামড়ার বাজার ধস ও মূল্য কম হওয়ায় আলেম সমাজ ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। অনেক আলেম বলেছেন, চামড়ার বাজার দর না থাকায় এতিম মাদ্রাসায় আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে।

ঠনঠনিয়া বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আশরাফ বিন মুবারক সিদ্দিকী ও জেলা ইমাম-মুয়াজ্জিন সমিতির সভাপতি বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা আবদুল কাদের বলেন, অনেক কোরবানিদাতা চামড়া বিক্রির টাকা মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিংএ দান করে থাকেন। কিন্তু গত বছর থেকে চামড়ার মূল্যে ধস নামায় আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে।

এছাড়া এলাকার দুস্থরা মালের (চামড়া) টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা চামড়ার মূল্য ধসরোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 2 =

Back to top button