Lead Newsআন্তর্জাতিক

কৌশলগত সুবিধা নিতেই রাজধানী বদলাচ্ছে ইরান?

নতুন রাজধানী পেতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান, আর তাই প্রায় আড়াইশ’ বছরের পুরোনো রাজধানী নগরী তেহরান হারাতে চলেছে তার স্ট্যাটাস। বলা হচ্ছে- নতুন রাজধানী হবে দেশটির উপকূলীয় অঞ্চল মাক্রানে। মূলত জনসংখ্যার পাশাপাশি পানি-বিদ্যুতের সংকটও বাড়ছে বর্তমান রাজধানী তেহরানে। আর এমন পরিস্থিতিতে রাজধানী বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিয়াপ্রধান দেশটি, যদিও রাজধানী স্থানান্তরের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনাও নেহায়েত কম হচ্ছে না। আসুন জেনে নেয়া যাক- নতুন রাজধানীর সিদ্ধান্ত আসলে কেনো নিয়েছে ইরান? আর কেনইবা এ নিয়ে এতো সমালোচনা?

তেহরানকে বলা হয় ইতিহাসের এক জীবন্ত উপাখ্যান। একইসাথে বহু ঐতিহাসিক নিদর্শনের স্বাক্ষী মরুর বুক চিড়ে জেগে ওঠা ৭৩০ বর্গকিলোমিটারের এ শহর। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়- ১৭৮৬ সালে কাজার সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে যাত্রা শুরু হয় তেহরানের। ককেশাস অঞ্চলে ইরানি ভূখণ্ডের কাছাকাছি বলে তেহরানকে রাজধানী নগরী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কাজার সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম শাসক আগা মোহাম্মদ খান।

তারপর থেকেই পারস্য উপসাগরীয় ও আরব অঞ্চলের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ইরানের রাজধানী নগরী এই তেহরান। এতোকিছুর পরও তেহরান থেকে ২৩৯ বছর পর রাজধানী সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ইরান সরকার। কেননা এক কোটি ৬৮ লাখ মানুষের মহানগরী তেহরান ইরান ও পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর –এমনকি রাজধানীকেন্দ্রিক জনসংখ্যা বিস্ফোরণের জেরে নগরীটির প্রাণপ্রদীপই নিভু-নিভু।

অবশ্য ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানিও এমনটিই জানিয়েছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন- জনসংখ্যার পাশাপাশি পানি ও বিদ্যুতের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মাক্রানে রাজধানী স্থানান্তর করা হলে ইরান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিয়ে লাভবান হবে বলেও জানান তিনি। তাছাড়া এরইমধ্যে রাজধানী স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন সরকারী এই মুখপাত্র।

ইরানে জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমসের প্রতিবেদন বলা হয়েছে- ইরানের রাজধানী তেহরানে পরিবেশগত চাপ, জনসংখ্যা, পানি ও বিদ্যুৎ সংকট প্রদেশটির নিত্যদিনের সঙ্গী। তাই রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ইরান সরকার। আর নতুন রাজধানী হিসেবে দেশটির উপকূলীয় এলাকা মাক্রানকে বেছে নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- সমুদ্র বন্দরভিত্তিক রাজধানী হলে ইরান পাবে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সুফল।

ইরানে ক্ষমতাসীন বর্তমান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেছেন, ‘মাক্রানে অবশ্যই আমাদের নতুন রাজধানী হবে। এতে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ ঘটবে। এরইমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ, অভিজাত ব্যক্তিবর্গ, বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, সমাজবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের সহযোগিতা চেয়েছি।’

ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান রাজধানী পরিবর্তনের পক্ষে শক্ত যুক্তিই দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে তেহরান বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আয়-ব্যয়েও নেই কোনো ভারসাম্য। পারস্য উপসাগরের কাছে রাজধানী স্থানান্তরের বিষয়ে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছেন তিনি।

জানা গেছে- প্রায় তিন দশক আগে শুরু হয় ইরানের রাজধানী স্থানান্তরের আলোচনা। পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে ২০১০ সালেও এ বিষয়ে আলোচনা উঠেছিল বলে ইরানের সরকারীসুত্র জানিয়েছে।

ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেছেন, ‘আমাদের রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নতুন কিছু নয়। তিন দশক ধরে এই আলোচনা চলছে। তেহরান প্রদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়েছে। প্রদেশটি প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। এখানে পানিরও তীব্র সংকট। এসব কারণেই আমরা রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’

সিস্তান ও বালুচেস্তান প্রদেশে অবস্থিত মাক্রান অঞ্চল ওমান উপসাগরের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে ইরানের জন্য কৌশলগত সুবিধা দিবে। এই অঞ্চলটি ইরানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সামুদ্রিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, তেহরান থেকে রাজধানী সরিয়ে নেয়ার সরকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইছে ইরানে। সমালোচকরা বলছেন, নতুন রাজধানী হলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে বিপুল পরিমাণে। একে অবাস্তব বলেও অভিহিত করেছেন কেউ কেউ। এমনটিই জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমস।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + eleven =

Back to top button