রাজধানীতে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসের ধাক্কায় পা হারানো প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে চাকরি ও এককালীন অর্থ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে রাসেল চাকরির প্রস্তাবে রাজি নন।
রাসেলের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে শুনানিকালে রোববার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রাসেলকে চাকরি দেয়ার প্রস্তাব তুলে ধরেন গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষের আইনজীবী হারুনর রশিদ।
শুনানিকালে রাসেলের আইনজীবী খন্দকার সামসুল হক রেজা আদালতকে বলেন, আমরাও আপস করতে চাই। এই আপসের নামে গত দুই মাসে গ্রিনলাইন পরিবহন কোনো কিস্তির টাকা দিচ্ছে না। এতে রাসেলের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। আগে অন্তত একটা কিস্তি পরিশোধ করুক। তখন আলোচনায় বসা যাবে।
এসময় আদালত বিবাদী পক্ষকে বলেন, রাসেলের তো চিকিৎসা দরকার। কেন আপনারা অর্থ দিচ্ছেন না?
জবাবে গ্রিনলাইন পরিবহনের আইনজীবী হারুনর রশিদ বলেন, কিছু টাকা দেয়ার পরে আপসের আলোচনা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
এরপর আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বলেন, ‘আপনারা কালকেই (আজ) আলোচনায় বসুন। বৃহস্পতিবার এ বিষয়টি আদেশের জন্য রাখছি। আপস হলে সবাই উপকৃত হবে।’
আদালত থেকে বেরিয়ে এসে রাসেল বলেন, গ্রিনলাইন পরিবহন চাকরির প্রস্তাব দিয়েছে। আমি সেখানে চাকরি নিতে রাজি নই। এর কারণ হিসেবে রাসেল বলেন, আমি এই মামলা করার কারণে গ্রিনলাইন পরিবহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাকে চাকরি দিলেও পরে নানা কারণ দেখিয়ে বরখাস্ত করা হতে পারে। এই আশঙ্কা আমি করছি। এ কারণে সেখানে চাকরি করতে আমি আস্থা পাচ্ছি না।
এর আগে ২০১৮ সালের ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রাসেলের চিকিৎসাসংক্রান্ত যাবতীয় খরচ গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বহন করতে এবং তার কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়। এর পর রাসেলকে ৫ লাখ টাকার চেক ও তার কৃত্রিম পা সংযোজন করে পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী দোলাইরপাড় প্রান্তে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাসের চাপায় পা হারান এপিআর এনার্জি লিমিটেডের চালক রাসেল। বাসচালক কবির বেপরোয়া গতিতে পেছন দিক থেকে মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। বাসের সামনে গিয়ে কবিরের কাছে ধাক্কা দেয়ার কারণ জানতে চান রাসেল। এর জের ধরে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে কবির ইচ্ছা করেই রাসেলের শরীরের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন। দ্রুত সরার চেষ্টা করলেও এক পা বাঁচাতে পারেননি রাসেল। ঘটনাস্থল থেকে রাসেলকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাকে অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় গ্রিনলাইন বাসের চালক কবির মিয়াকে একমাত্র আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন রাসেলের ভাই আরিফ সরকার।
পা হারানো রাসেল সরকারের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী এলাকার বাসিন্দা রাসেল রাজধানীর আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ে বসবাস করতেন এবং স্থানীয় একটি ‘রেন্ট-এ-কার’ প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেটকার চালাতেন।