চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং গৌরবের স্মারক সিআরবি
অপরকল্পিত উন্নয়ন আর দখলবাজিতে ধ্বংস হয়েছে চট্টগ্রামের পাহাড়, প্রকৃতি, সবুজ বন, উম্মুক্ত এলাকা। নির্বিচারে পাহাড় কেটে উঠেছে সুউচ্চ ভবন। বানানো হয়েছে সড়ক। পুকুর, দীঘি, জলাশয় ভরাট করা হয়েছে। উম্মুক্ত স্থানগুলোকে দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বাণিজ্যিক স্থাপনা। সাগর, নদী পাহাড় ঘেরা চট্টগ্রাম হারিয়েছে তার চির চেনা রূপ। ব্যাপক নগরায়ন এবং শিল্পায়নের সাথে বাড়ছে নগরীর জনসংখ্যা। প্রকৃতি বিনাশী কর্মকান্ডে কংক্রিটের জঞ্জাল মহানগরীর বাসিন্দাদের হঁাঁসফাঁস অবস্থা।
তবে এ ধ্বংসের মধ্যেও সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর গৌরবের স্মারক সিআরবি। সেখানকার শতবর্ষী বৃক্ষ ঘেরা ছায়া-সুশীতল বাতাস ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। বাটালি হিল থেকে কদমতলী, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে লালখান বাজার হয়ে টাইগার পাস পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে এখনও পাহাড়, টিলা উপত্যকা সবুজ বৃক্ষের সারি। পাখ-পাখালি আর জীববৈচিত্র্যে ভরা এক খন্ড সবুজ উদ্যান এই মহানগরীতে মায়াবি আবেশ ছড়িয়ে যাচ্ছে। সেখানকার প্রতিটি বৃক্ষ যেন এক একটি অক্সিজেন কারখানা। আর তাই সিআরবিকে বলা হয় চট্টগ্রামের ফুসফুস।
এক সময় সিআরবির মতো অনেক উম্মুক্ত প্রাঙ্গণ ছিলো এই নগরীতে। সার্কিট হাউসের সামনের খোলা মাঠে বিকেলে জমতো অগণিত মানুষের আড্ডা। হতো নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখন সেখানে শিশুপার্কের নামে বাণিজ্যিক স্থাপনা। তার পাশেই আউটার স্টেডিয়ামকে ঘিরে উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হতো বিকেলে। আউটার স্টেডিয়ামে খেলতো কিশোর যুবকেরা। সেখানে এখন সুইমিংপুল, আশপাশে দোকান পাট। পাহাড় টিলা হরেক বৃক্ষরাজি আর লেকে ঘেরা ফ’য়স লেকেও এখন বাণিজ্যিক স্থাপনা।
শত শত কিশোর-যুবকের খেলাধুলার প্রশিক্ষণ মাঠ হিসাবে পরিচিত ছিলো আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠ। এখন সেখানে পার্কের নামে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পার্কটি খোলা হয়। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অন্যমত স্থান ডিসি হিলও এখনও বিধি-নিষেধের বেড়াজালে অবরুদ্ধ। নগরীর অন্যতম পর্যটন এলাকা বাটালি হিলের পাদদেশে নানা স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এতে সেখানে বেশ কয়েক দফা পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। দখলে সৌন্দর্য হারিয়েছে নগরীর সর্বোচ্চ ওই পাহাড়টি। সেটি আর আগের মতো পর্যটক টানে না। এভাবে নগরীর উম্মুক্ত স্থানগুলো হারিয়ে গেছে। নির্বিচারে পাহাড় কাটা হয়েছে। পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক, আবাসিক এলাকা। পাহাড় নিধনে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়েছে চট্টগ্রাম। নগরী হারিয়েছে তার সৌন্দর্য।
অবশিষ্ট আছে সিআরবি। ছায়া-সুনিবিড় সিআরবির এই উম্মুক্ত স্থানেও এখন শকুনের থাবা। সেখানকার প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে চলছে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ আর নার্সিং ইনস্টিটিউটের মতো বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তুতি। তবে এতোদিন প্রকৃতি বিনাশী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদরা নিরব থাকলেও এবার সরব হয়েছেন। সিআরবি ইস্যুতে এখন মাঠে সরকারি দলের নেতারাও।
সিআরবিকে ঘিরে চট্টগ্রামের প্রকৃতি বিধ্বংসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন এক ঐক্য গড়ে উঠেছে। সিআরবি সুরক্ষায় আন্দোলনে শামিল নেতারা বলছেন চট্টগ্রামের পাহাড় প্রকৃতি অনেক ধ্বংস করা হয়েছে। শেষ সম্বল সিআরবিকে রক্ষা করতে হবে। সেখানে হাসপাতালের নামে বাণিজ্যিক স্থাপনা হলে তা হতে হবে আমাদের লাশের উপর। জীবন থাকতে চট্টগ্রামে ফুসফুস কাটতে দেবেন না বলেও অঙ্গিকার নেতাদের।
হাসপাতাল বন্ধে সিডিএকে স্মারকলিপি
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ডিটেইলস এরিয়া প্ল্যানে হেরিটেজ ও কালচার ঘোষিত সিআরবিতে হাসপাতালসহ বাণিজ্যিক স্থাপনা বন্ধের দাবিতে সিডিএকে স্মারকলিপি দিয়েছে নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম। নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক প্রবীণ সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন ও সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল গতকাল সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। এ সময় ড. অনুপম সেন বলেন, চট্টগ্রামের অবশিষ্ট এবং সবচেয়ে বড় উম্মুক্ত স্থান সিআরবি রক্ষার কোন বিকল্প নেই। সেখানে কোন স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ বেআইনি। এ আইন বহির্ভূত কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। সিআরবি সুরক্ষায় চট্টগ্রামবাসী এক ও অভিন্ন সুরে কথা বলছে। তাদের দাবি মানতে হবে। স্মারকলিপিতে বলা হয় রেলওয়ে এবং ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল নির্মাণে সিডিএর কাছ থেকে এনওসি সনদ না নিয়ে গুরুতর আইন বর্হিভূত কাজ করেছে। এ বিষয়েও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। এ সময় নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মহাসচিব ও আনজুমানে রজভীয়া নূরীয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মুহাম্মদ আবুল কাশেম নূরী গতকাল এক বিবৃতিতে সুন্নী জনতার পক্ষ থেকে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। চট্টগ্রামে নির্মল প্রাকৃতিক শোভা ও শ্বাস নেয়ার স্থান ক্রমেই কমে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যতটুকু বাকি আছে তারমধ্যে সিআরবি অন্যতম। নগরবাসীর শেষ প্রশান্তিটুকু কেড়ে নেয়ার চেষ্টা নিন্দনীয় এবং গর্হিত। ইসলামে প্রকৃতির সুরক্ষা ইবাদততুল্য। পাশাপাশি প্রকৃতির বিনাশও গর্হিত ও শাস্তিযোগ্য কাজ। তিনি সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।
সিআরবি ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলুন
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের এক সভায় সিআরবি ইস্যুতে চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সিআরবি রক্ষায় তারা মন্ত্রী এমপিদের সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলারও পরামর্শ দেন। ফোরামের ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার রাতে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। মহাসচিব মো. কামালউদ্দিনের সঞ্চলনায় এতে বক্তব্য রাখেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মহানগর আওয়ামীগ সহ সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উত্তর জে