জন্মদিন, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ
সামীর রুহানি একজন উঠতি মডেল। আজ তাঁর জন্মদিন, অথচ কেক কাটার কোনো তাড়াই নেই। বরং বাস্তবতার নিরিখে তিনি স্বীয় হাতের লেখনীর ছোঁয়ায় নিজস্ব কিছু ভাবনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। পজিটিভ নিউজের পাঠকদের জন্য তাঁর লেখাটি তুলে ধরা হলো।
জন্মদিন, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ
–সামীর রুহানি–
জন্মদিন আমার কাছে মন খারাপের দিন ছাড়া আর বিশেষ কিছু মনে হয় না।কারণ জন্মদিন হচ্ছে জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সময় । বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না যে আমি আজ পর্যন্ত কখনো জন্মদিনে কেক কাটি নাই । তবে আশ্চর্য্য হলেও এটাই সত্যি । মোমবাতি জ্বালিয়ে জীবনের হারিয়ে যাওয়া দিনগুলা নিয়ে আনন্দিত হওয়ার কিছু খুঁজে পাই না ।
প্রতিবার জন্মদিনের আমার বিশেষ কাজ হচ্ছে দরগাতে যেয়ে জিয়ারত করে সেখানকার মাসজিদে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানানো – এই পৃথিবীতে এখনো বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি এই সৌভাগ্যের জন্য । ক্ষুধার্ত মানুষ বিশেষ করে রাস্তার এতিম বাচ্চাদের খোঁজার চেষ্টা করি এবং তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দেই। কারণ তাদের দুই চোখের তৃপ্তি আর মুখের নিষ্পাপ হাসিটা কে জীবনের সবচাইতে বড়ো অর্জন মনে করি আমি । প্রচন্ড মানসিক শান্তি পাই যেটা আর কোনো কিছুতেই আমি খুজে পাই না ।
আমাদের নবীজি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা [ সা : ] এর একটা কথা সবসময়ই হৃদয়ের মাঝে স্পন্দিত হতে থাকে যে তিনি বলেছিলেন ” যে এতিম বাচ্চাদের মাথায় হাত রাখে সে যেনো আমার মাথাতেই হাত রাখলো কারণ আমিও একজন এতিম ” । আর আমাদের ধর্মে ছোটো ছোটো বাচ্চাদের আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের সমান মর্যাদা দিয়েছেন । তিনি সেটাকে কোনো ধর্মের শিশুদের নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করেননি । তিনি মানব শিশুর কথা বলেছেন।
এদিকে বহুবছর পর পবিত্র রমজান মাসে নিজের জন্মদিন আসাতে পরম সৌভাগ্যবান মনে করছি নিজেকে । ইচ্ছা ছিলো এতিম বাচ্চা পথশিশুদের সহ গরীব মানুষদের কে ইফতার করাবো এবং ঈদের নতুন জামা উপহার দিবো যেমনটা আমি সবসময়ই করে আসছি কয়েক বছর ধরে । শুধু ঈদ উৎসব বলে না বরং বৈশাখ ভালোবাসা দিবস বা নতুন বছর এবং শীতের সময় এভাবে প্রতিনিয়ত প্রতিবছর নিজের টাকা জমিয়ে এইসব পথশিশু আর এতিম বাচ্চাদের জন্য নতুন জামা কাপড় উপহার দিয়ে আসছি কারণ আমার ভালো লাগে তাদের জন্য কিছু করতে যাদের দেখার কেউ নাই ।
মাঝে মাঝে ভাবি যে একজন মানুষের এক বেলার চা সিগারেটের খরচে একজন মানুষের দুই বেলার খাবার দেয়া সম্ভব অথচ কেউ কারোর জন্য কিছু করতে চায় না । আমি এইসব ভেবে হাসি কারণ আমি জানি কাফনের কাপড়ের পকেট হয় না দুনিয়ার ধন সম্পদ টাকা পয়সা সাথে করে নিয়ে যাবার জন্য । পরকালে অন্ধকার কবরে মানুষের সাথে একমাত্র যাবে তার ভালো কাজ বা সৎ কর্ম এবং পরকালের একমাত্র সম্পদ হচ্ছে এই দুনিয়ার মানুষের মুখের হাসি দোয়া এবং ভালোবাসা ।
আমি গত কয়েক বছর ধরে ঈদের সময় নতুন জামা কাপড় আর কিনি না নিজের জন্য । সেই টাকা দিয়ে দশ বিশটা মানে যতটা সম্ভব হয় আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সেই কয়টা এতিম বাচ্চা আর পথশিশুদের ঈদের জন্য নতুন জামা কাপড় কিনে দেই। কারণ আমার তো সারা বছর ধরে প্রতি মাসে নতুন জামা কাপড় কেনা হয়ই কিন্তু এরা তো সামান্য তাদের লজ্জা স্থান ঢাকার জন্যেও এক টুকরা কাপড় পায় না । এই অপরাধ বোধটা আমার মাঝে কাজ করে আর তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলাসিতা করতে ইচ্ছা করে না ।
আমার ছেলেবেলা থেকে এসব কিছুর জন্য একমাত্র প্রেরণা হচ্ছেন বিশ্ব মানবতার মা মাদার তেরেসা । তার জন্যই মানুষের জন্য বেচে থাকতে শিখেছিলাম । তাছাড়া নিজের জীবনেরও ইতিহাস আছে । আজ থাক এসব কথা । এই মুহূর্তে বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাসের বিপর্যয়ের বৈশ্বিক ভাবে সম্মুখীন আমরাও । নিজ দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব বিবেকের জায়গা থেকে যা যা করা সম্ভব সব কিছু করেছি ইতিমধ্যে ।
যখন প্রথম প্রথম করোনার প্রকোপ শুরু হয় তখন দেশের বাজারে মাস্ক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যাপক ভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয় । এই সময়ে নিজ অর্থে মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে নিজ এলাকার গরীব মানুষ এবং বন্ধু বান্ধব সহ পরিচিত সব মানুষদের গিফট করেছিলাম । তারপর কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যাবার কারণে আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হতে হয় কিন্তু এরপরও থেমে থাকিনি । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা + জন হপকিন্স ভার্সিটির গবেষক + বিশ্বখ্যাত হেলথ জার্নাল নেচার মেডিসিনের সব তথ্য উপাত্ত স্টাডি করে করে নিজস্ব ভাবে আর্টিকেল লিখে দেশে এবং বিদেশের সমস্ত পরিচিত মানুষদের মাঝে শেয়ার করে করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করেছি সবার সুরক্ষার জন্য ।
এদিকে উন্নত বিশ্বের সব দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ রূপে ভেঙে পড়েছে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে । সেখানে আমাদের দেশটা অনেক ছোটো একটা উন্নয়নশীল রাষ্ট্র । আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন স্বাভাবিক ভাবেই। এমন করোনা পরিস্থিতির মাঝে মানুষ তাদের অনান্য রোগের জরুরী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । শিশুরাও এর বাইরে নয় । আমি রাজশাহী ঢাকা আর খুলনার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তাদের নাম্বার কালেক্ট করে যেসব বাড়িতে বা পরিবারের মাঝে সরবরাহ করেছি যাদের যাদের বাড়িতে অসুস্থ মানুষ রয়েছে । পাশাপাশি সারা দেশের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নাম্বার কালেক্ট করে সেইসব পরিবার এবং পরিচিতদের মাঝে সরবরাহ করেছি যাদের বাসায় নবজাতক শিশু রয়েছে আর প্রেগন্যান্সি প্রিয়ড সাফার করছেন । এতে করে তারা জরুরী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন না এবং অকাল মৃত্যুর হতে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন । বর্তমানে মানুষ খাদ্য এবং চিকিৎসার অভাবে কারণে জীবন মৃত্যুর সম্মুখীন হচ্ছে । কার্যত লকডাউন বা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বহু মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে । এইসব মানুষদের জন্য রাজশাহী ঢাকা খুলনা এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক পুলিশ প্রশাসন সিটি কর্পোরেশন সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যারা খাদ্যশস্য সরবরাহের কাজ করছেন তাদের নাম্বার কালেক্ট করে এইসব শহরের পরিচিত বিপদগ্রস্থ মানুষদের দিয়েছি এবং বলেছি তাদের পরিচিত অনান্য বিপদগ্রস্থ মানুষদেরকে দিতে যাতে সবাই বাচতে পারেন ।
উপরোক্ত কাজগুলা সঠিক ভাবে এক্সিকিউট করতে অনেক ধৈর্য্য পরিশ্রম এবং স্ট্রং স্ট্রাটেজির প্রয়োজন হয় যেটা করতে যেয়ে অনেক সময় আমাকে অনেকের কাছে ছোটো হতে হয়েছে আবার বহু মানুষ প্রশংসা করেছে । আমি আসলে মানুষের সমালোচনার দাম দেই না এখনো । কারণ যারা সমালোচনা করে তারা কিছুই করতে পারে না এবং সেইখানেই পড়ে থাকে যেখানে তারা ছিলো । অন্যের নেগেটিভ কথার দাম দিবেন তো আপনি জীবনে শূন্যতা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করতে পারবেন না ।
আমার ইচ্ছা ছিলো দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য আরো বেশি কিছু করার কিন্তু অর্থের কাছে তো আমি নিরুপায় । মামা চাচা ফুফুরা আমার মা বাবার অধিকার তাদের প্রাপ্য সম্পদ আত্মসাৎ করার কারণে আমরা নিজেদের মিডল ক্লাস পরিচয় দিতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করি আজীবন । বংশের পরিচয় দিয়ে চরম অপছন্দ করি মানে এক কথায় কখনো দেই না । আমার কাছে মানুষ তার কর্মের সমান বড়ো এবং স্বপ্নের সমান বিশাল । বংশীয় বা আভিজাত্যের পরিচয় তারাই দেয় যারা সমাজে অস্তিত্বহীন বা নিজের বলে কোনো পরিচয় নাই যাদের । আপনি ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখতে পারেন মানুষ তার বংশীয় বা আভিজাত্যের পরিচয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে নাই। যারা ইতিহাস সৃষ্টি করে অমরত্ব লাভ করেছেন পৃথিবীতে তারা সবাই তাদের কর্ম এবং স্বপ্নের বিশালতার জন্যই তা অর্জন করেছেন। তাই সবাই নিজ কর্মে বিশ্বাসী হন আর স্বপ্ন দেখুন প্রতিনিয়ত।
আপনি যত বড়ো স্বপ্ন দেখতে পারবেন আপনি ঠিক তত বড় ব্যক্তিত্ব হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন, দিনশেষে আমাদের সবাইকে কিন্তু একই মাটির অন্ধকার কবরে যেতে হবে। তাই অহংকার করবেন না নিজেকে নিয়ে বা অহংকারী হয়ে যাবেন না এবং যা কিছুই অর্জন করবেন জীবনে তার জন্য সৃষ্টিকর্তার দরবারে শুকরিয়া আদায় করবেন। অন্যথায় আপনার সমস্ত অর্জন বৃথা হয়ে যাবে। কারণ মহান আল্লাহ পাক অহংকারীদের ঘৃণা করেন। অহংকার করা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য মানায়, কারণ তিনিই এর একমাত্র দাবিদার । যাইহোক অনেক কথা বলে ফেললাম । এবার দেশ নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করবো।
আমাদের বাংলাদেশ সরকারের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের করোনা মহামারী দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু শুধুমাত্র একজন মানুষ ভালো হলে তো দেশ পরিবর্তন করা সম্ভব না। তার জন্য আমাদের সবাইকে সৎ হতে হবে । তিনি নির্দেশ দিলেন ডাক্তারদের মাস্ক পিপিই নিয়ে যেনো অভিযোগ না আসে । অথচ তার কথা অমান্য করে নিম্ন মানের মাস্ক পিপিই বিভিন্ন হসপিটালে সরবরাহ করার অভিযোগ উঠলো । এরপর সেই যারা যারা অভিযোগ দিয়েছেন তাদেরকে ওএসডি না হয় ট্রান্সফার করা হলো । আর নিম্ন মানের মাস্ক ব্যবহার করে ডাক্তার পুলিশ প্রশাসন একের পর এক আক্রান্ত হতেই আছেন । আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত হাজার হাজার কোটি টাকার খাদ্যশস্য এমনকি নগদ অর্থ পর্যন্ত বরাদ্দ করে দিচ্ছেন দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের গরীব অসহায় অভাবী মানুষদের জন্য । অথচ চারিদিকে পত্র পত্রিকায় বিভিন্ন নিউজ দেখা যাচ্ছে যে বহু মানুষের বাসায় খাদ্য নাই । অনেকে নাই খেয়ে দিন পার করছে । মায়েরা ঠিক ভাবে খাবার পাচ্ছে না তাই বুকে দুধ আসছে না যে কারণে দুধের শিশু দুধ পাচ্ছে না এমন সংবাদ পর্যন্ত দেখলাম । অথচ সেদিন সরকার থেকে শিশুদের দুগ্ধজাত খাদ্য কেনার জন্যেও বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছেন । একদিন তো প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংসদে বললেন যে তার কাছেও নাকি এসএমএস আসে যে আপা আমার বাসায় খাবার নাই । অথচ তিনি তার সর্বোচ্চ দিয়ে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করার ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন ।
আমার জানামতে দেশে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে তাতে সরকার অন্তত ছয় মাস দেশের মানুষকে বাড়িতে বসে খাওয়াতে পারবে কিন্তু শুধুমাত্র অনিয়মের কারণে সেটা হয়তো সম্ভব হবে না । আমার বাড়িতে প্রতিটা দিন আট দশ জন করে ফকির আসছে । তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে বলে যে তারা কোনো ত্রাণ বা অর্থ সাহায্য পাই নাই । প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ভাবছে সরকার হয়তো তাদের জন্য কিছুই করছে না । সরকার ত্রাণ লুটপাটকারীদের ধরার চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং ইতিমধ্যেই অনেককে বরখাস্ত করেছেন জেলেও দিয়েছেন । কিন্তু এভাবে হয়তো সবাইকে চিহ্নিত করা সম্ভব না যাদের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে । এর জন্য প্রয়োজন প্রতিটা গ্রাম মহল্লায় সেখানকার পৌর মেয়র বা মেম্বার অথবা কাউন্সিলরদের কর্মকান্ড গোপনে পর্যবেক্ষণ করার জন্য কিছু কর্মী নিয়োগ দেয়া যাদের কাজ হবে সবকিছু শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিপোর্ট করা । কারণ এখনকার মেম্বার কাউন্সিলর’রা তাদের শপথ বাক্য ভুলে গেছেন । এমন ভয়াবহ ভাইরাস পরিস্থিতিতেও সামান্য জীবাণু নাশক স্প্রে করার জন্যেও কাউকে খুজে পাওয়া যায় না । সবাই দায়িত্বহীন ভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করছেন কারণ কারোর জবাবদিহিতা নাই । আরেকটা বিশেষ কথা হচ্ছে এভাবে লকডাউনের সময় বাড়ি বাড়ি ফকির যাতায়াত করলে আমাদের লকডাউন থেকে তো কোনো লাভ হবে না । কারণ এইসব গরীব মানুষ ফকির তো শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ঘোরাফেরা করে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যাচ্ছে মানে তারা বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসছে । এখন আমরা তো আর জানতে পারছি না যে কার শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু রয়েছে। তাহলে এরাই তো মানুষের বাড়িতে বাড়িতে লকডাউনে থাকা অবস্থায় ভাইরাস সংক্রমণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে তাই না । এইসবের একটাই কারণ সেটা হচ্ছে দুর্নীতি আর অনিয়ম । আজ যদি এমন দুর্নীতিবাজ কিছু মানুষের কারণে বাংলাদেশ ভাইরাস মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে যায় তাহলে বিশ্ব হয়তো বাংলাদেশকে একঘরে করে দিতে পারে ।
কারণ অনান্য দেশ সফলতা অর্জন করলে নিশ্চয়ই চাইবে না যে দেশে ভাইরাস রয়েছে তাদের সাথে আপাতত সম্পর্ক রাখতে । যার প্রভাব সরাসরি আমাদের দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে দিবে । এমনিতেই সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ধ্বস নেমেছে এখন । গ্লোবাল ইকোনমির বিভিন্ন গবেষকরা জানিয়েছেন প্রায় দেরশো কোটি মানুষ তাদের জব হারাতে পারে । ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ছয় লাখ + নর্থ আমেরিকাতে প্রায় দশ লাখ + চীনে আট কোটি নব্বই লাখ + ভারতে প্রায় তেরো কোটি মানুষ তাদের জব হারিয়ে বেকার হয়ে গেছে । সামনে পৃথিবীর সব দেশেই আরো এমন হতে যাচ্ছে । বিশেষ করে বিভিন্ন দেশে কর্মরত বিদেশী শ্রমিকদের জীবন জব হারিয়ে দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে । যার মাঝে মিডল ইস্ট গল্ফ জোনের আরব রাষ্ট্র হতে প্রায় দশ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক জব হারিয়ে দেশে ফিরছেন । এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের দেশের বিদেশী শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো শুরু করে দিয়েছে। কারণ ভাইরাস পরিস্থিতি পরবর্তী নতুন যে বিশ্বের জন্ম হতে যাচ্ছে সেখানে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বহু থাকবে। তখন এইসব কর্মহীন জনগোষ্ঠিদের নিজ নিজ দেশের সরকার তাদের দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য কাজে লাগাবে । এখানে বিদেশী শ্রমিকদের রাখলে তাদের দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে না । এতকিছু চিন্তা করে হয়তো দেশের অর্থনীতি বাচানোর জন্য সরকার লকডাউন শিথিল করছেন । ভরসা একটাই মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা । কিন্তু আফসোস বাংলাদেশের জলবায়ু ধবংস হয়ে গেছে বহু আগে । পৃথিবীর সবচাইতে বিষাক্ত জলবায়ুর দেশ হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশ । এই জলবায়ু ধবংসের কারণে আর ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করে করে আজ দেশের প্রতিটা ঘরে ঘরে দুই তিন জন করে এজমা হার্ট ডিজিজ ডাইবেটিকস ব্লাড প্রেসার কিডনি বা পেটের সমস্যার রোগী রয়েছেন। তাই আপনার ইমুউনিটি সিস্টেম খুব স্ট্রং ভালো কথা মানলাম । তবে আপনি আক্রান্ত হয়ে বেচে গেলেও আপনার পরিবারের অনান্য সদস্যদের বাচাতে পারবেন তো! সহ্য করতে পারবেন কি আপনার চোখের সামনে আপনার বৃদ্ধ বা অসুস্থ মা বাবা বৌ বাচ্চা ভাই বোনের মৃত্যু! ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মরলে আপনি সরকারি হিসাবে একটা সংখ্যা হবেন মাত্র কিন্তু পরিবার প্রিয়জনদের কাছে এই সংখ্যাটা একটা পৃথিবী সমান মনে রাখবেন কথাটা। এইজন্য সাবধান আমাদের হতে হবে বাচার জন্য যতদিন ভ্যাকসিন না আসছে। ভ্যাকসিন অবশ্যই আসবে আজ অথবা কাল । কারণ সবকিছুর একটা শেষ আছে । তবে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন এই করোনা ভাইরাসই শেষ বিপর্যয় না পৃথিবীর মানুষের জন্য। জলবায়ু ধবংস করে ফেলার জন্য পরিবেশ বাতাস আগের মতন আর রোগ জীবাণু শোষন করতে পারছে না। যার কারণে তারা বিভিন্ন রোগের জীবাণু এখন উগলানো শুরু করেছে যার পরিমাণ হবে আরো ভয়াবহ মানবজাতির জন্য । এইজন্য আমি গত ছয় সাত বছর ধরে বারবার বলে আসছি যে ” গাছ লাগান মানুষ বাচান ” । আল্লাহ পাক কোরআনে একটা কথা বলেছেন যে ” তোমরা প্রকৃতি ধবংস করো না – প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিবে ” । এখন কিন্তু ঠিক সেটাই হচ্ছে । প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিচ্ছে মানবজাতির প্রকৃতির সাথে অমানবিক পাশবিকতার জন্য । তাই এখন আমাদেরকে বাচতে হলে এই প্রকৃতিকে আগে বাচাতে হবে । প্রয়োজনে গাছ কাটার অপরাধে মৃত্যুদন্ডের আইন প্রণয়ন করতে হবে ।
যাইহোক আপনাদের সবার কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ আসেন আমরা সবাই নিজ নিজ বাসায় সরকারের নির্দেশ মেনে অবস্থান করি । এই যুদ্ধটা বাসায় থেকে দেশ বাচানোর যুদ্ধ দেশের মানুষ বাচানোর যুদ্ধ । আপনার আমার সামান্য একটা ভুলের জন্য একটা এলাকা একটা শহর এমনকি একটা দেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। অথচ চারিদিকে আপনারা এমন ভাবে চলাফেরা করছেন যেনো ভাইরাস দিনের বেলা ঘুমিয়ে থাকে । এবারের ঈদে না হয় মার্কেট নাই বা করলেন বেচে থাকার জন্য । আপনাদের আশেপাশে যেসব গরীব মানুষ রয়েছে বা অভাবী মানুষ রয়েছে যারা দুর্নীতির শিকার হয়ে সরকারের খাদ্যশস্য সাহায্য হতে বঞ্চিত হচ্ছে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে তাদেরকে আপনার ঈদের খরচের টাকাটা দিয়ে বাচতে সাহায্য করুন । এতে মহান আল্লাহ সুবহানাতাআলা অনেক খুশি হবেন । আপনার আর আপনার পরিবারের উপর তার রহমত বর্ষণ করবেন । এরপরও যদি মার্কেটে যেতে ইচ্ছা করে তাহলে খেয়াল রাখবেন আপনার ঈদ আনন্দের রঙিন কাপড় যেনো সাদা কাপড়ে রূপান্তরিত না হয়ে যায় । তবে একটা কথা কি জানেন যে আমাদের দেশে ধনীরা যদি তাদের সম্পদের সঠিক হিসাব অনুযায়ী যাকাত প্রদান করতো তাহলে দেশে গরীব বলে আর কেউ থাকতো না এবং আত্মীয় স্বজনরা যদি কারোর সম্পদ আত্মসাৎ না করতো তাহলে মধ্যবিত্ত বলে কারোর অস্তিত্ব থাকতো না । আমি আমাদের দেশকে কখনো গরীব ভাবি না । এদেশের সব টাকা এক শ্রেণীর মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে যার কারণে দেশটা অসম অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সম্মুখীন হয়ে আছে যেখানে ধনীরা আরো ধনী হয়ে যাচ্ছে আর মধ্যবিত্ত এবং গরীব শ্রেণীর মানুষ দিন দিন রাস্তার ভিখারী হয়ে পড়ছে । হয়তো একদিন দুর্নীতি বন্ধ হবে এবং দেশটা প্রকৃত অর্থে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে ইনশাআল্লাহ । কিন্তু তার জন্য আমাদের সবাই সবাইকে সাহায্য করতে হবে ভালো কাজ করতে এবং সবাইকে ভালোবাসতে হবে । যাইহোক সবাই ভালো থাকবেন এবং সবাইকে ভালো রাখবেন এই কামনা রইলো। আসেন সবাই এবার আমরা মানবিক হয়ে যাই।
লেখকঃ সামীর রুহানি (মডেল)