ধর্ম ও জীবন

জাকাত আদায় না করার শাস্তি

ধন-সম্পদ থাকার পরও যে ব্যক্তি জাকাত দিবে না সে বড় গোনাহগার হবে ও ভয়াবহ শাস্তির মুখোমুখি হবে। কেননা জাকাত আদায় না করা কবিরা গোনাহ। জাকাত অনাদায়ে দুনিয়া ও পরকালে রয়েছে মারাত্মক ক্ষতি ও কঠিন শাস্তি।

ধন-সম্পদ বান্দার জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে মহা অনুগ্রহ। ধন-সম্পদের মালিক যদি তা থেকে ব্যয় না করে তবে তাঁকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কেয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও জমিনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮০)

জাকাত না দেয়ার শাস্তি ভোগ করবে যারা
জ্ঞান সম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়স্ক, মুসলিম নিসাবের মালিকের ওপর বছর শেষে জাকাত আদায় করা ফরজ। যে ব্যক্তি এই ফরজ পরিত্যাগ করবে, সে দুনিয়া ও পরকালে শাস্তির যোগ্য হবে। যে ব্যক্তি অলসতাবশত কিংবা ইচ্ছাকৃত জাকাত দেবে না। তার জন্য দুনিয়া ও পরকালে রয়েছে কঠোর শাস্তি।

> দুনিয়ার শাস্তি
জাকাত না দিলে দুনিয়াতেই আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষ।

> পরকালের শাস্তি
কুরআনুল কারিমে জাকাত না দেয়া ব্যক্তির শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে যে-
– যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কেয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮০)
– আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে (জাকাত না দিয়ে) নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৫)

জাকাত অস্বীকারকারীর শাস্তি
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত অলসতাবশত জাকাত দেওয়া বর্জন করবে, তার শাস্তির ব্যাপারে ইসলামী আইনবিদদের মতামত হলো-
> হানাফি ইমামদের মতে, তাকে আটক রেখে তাজিরি (লঘু) শাস্তি দিতে হবে, যাতে সে জাকাত আদায় করে দেয়।
> হাম্বলি ও শাফেঈ ইমামদের মতে, ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে যদি কোনো মুসলমান জাকাতের ফরজকে স্বীকৃতি দিয়ে আদায় করতে বিরত থাকে, তাহলে তার প্রতি বল প্রয়োগ করা হবে, যাতে সে স্বেচ্ছায় জাকাত প্রদান করতে বাধ্য হয়। আর যদি সে ইসলামী রাষ্ট্রের আনুগত্য করা থেকে বের হয়ে যায় এবং জাকাত দিতে অস্বীকার করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে। যেমন-
হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু জাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। (বুখারি)
> বর্তমানে ইসলামী আইনবিদদের মতে, পূর্ববর্তী বিধান রহিত হয়ে তাজিরি (লঘু) শাস্তি নির্দিষ্ট হয়েছে। আর তা হলো আটক রাখা। (আকিদাতুল ইসলাম)

মনে রাখতে হবে
জাকাত না দেয়া কবিরা গোনাহ। ধন-সম্পদের মালিকের উচিত, বছর শেষে নিয়ম অনুযায়ী জাকাত আদায় করা। দুনিয়া ও পরকালের ভয়াবহ গোনাহ ও তার শাস্তি থেকে মুক্ত থাকা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। জাকাত অনাদায়ে কবিরা গোনাহ করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − 14 =

Back to top button