Lead Newsকরোনাভাইরাসখাদ্যাভ্যাস

ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়!

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের প্রাদুর্ভাবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)।

আবার সেই সাথে করোনাভাইরাসে সেলফ-কোয়ারেন্টিন এবং আইসোলেশনে থাকার সময় ট্রান্সফ্যাটমুক্ত খাবার খেতেও পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, হৃদরোগীরা করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ঝূঁকিপূর্ণ। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ।

বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লক্ষ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবারের কারণে স্ট্রোক এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। উচ্চমাত্রায় ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে সার্বিকভাবে মৃত্যুঝুঁকি ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এছাড়া হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২১ শতাংশ এবং হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

অন্যদিকে, লকডাউনের কারণে ঘরে বন্দি থাকায় মানুষের শারীরিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমেছে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের উপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

খাদ্য প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠানগুলো খাবার সংরক্ষণের সুবিধার্থে এবং বিভিন্ন ভাজা পোড়া ও বেকারি পণ্যের স্বাদ, ঘ্রাণ এবং স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেল ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ভাজা পোড়া খাদ্যে একই ভোজ্য তেল উচ্চ তাপমাত্রায় বারবার ব্যবহারের কারণেও খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট সৃষ্টি হয়। সাধারণত খরচ কমানোর জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁয় সিঙ্গারা, সমুচা, পুরি, জিলাপি, চিকেন ফ্রাইসহ বিভিন্ন ধরনের ভাজা পোড়া খাবার তৈরির সময় একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়। এ কারণে এসব খাবারে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) দেশে প্রচলিত ফাস্টফুড, বেকারিপণ্য, স্ট্রিট ফুড কিংবা রেস্তোরাঁয় তৈরি ভাজা-পোড়া খাদ্যপণ্য তৈরিতে হাইড্রোজেনেটেড তেলের ব্যবহার কমাতে এবং ভোজ্য তেল বারবার ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

বিএসটিআইর সহকারী পরিচালক এনামুল হক বলেন, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে মানুষ এখন ঘরে অবস্থান করছে এবং অধিকাংশের শারীরিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমে গেছে। তাই সুস্থ থাকতে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণে ইতিমধ্যে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর বাংলাদেশের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, হৃদরোগসহ সব অসংক্রামক ব্যাধি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখদে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। উচ্চমাত্রায় ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে সার্বিকভাবে মৃত্যুঝুঁকি ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির দৈনিক ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ হওয়া উচিত মোট খাদ্যশক্তির ১ শতাংশের কম। অর্থাৎ দৈনিক ২০০০ ক্যালোরির ডায়েটে তা হতে হবে ২ দশমিক ২ গ্রামের চেয়েও কম। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করার একমাত্র পথ হল সচেতনতা। সচেতনতাই পারে আপনাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটমুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ভারত, থাইল্যান্ড, ইরান, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলসহ মোট ৩০টি দেশে খাদ্য দ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ কার্যকর করেছে। এছাড়া আরও ২৪টি দেশ ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি দেশে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে একটি নীতিমালা প্রনয়নের কাজ শুরু করেছে। ভোজ্য তেল এবং অন্যান্য খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা কমিয়ে আনতে একটি ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং উক্ত কমিটি এরই মধ্যে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, বিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তাদের সঙ্গে দুটি আলোচনা সভা সম্পন্ন করেছে।

প্রসঙ্গত, ট্রান্সফ্যাট এক প্রকার হাইড্রোজেনেটেড অয়েল। এই আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেলই শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস, যা ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামেও পরিচিত। বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য যেমন, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া খাবার, বিস্কুট, কুকিজ, মার্জারিন- এগুলোতে ট্রান্সফ্যাট থাকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − 7 =

Back to top button