জাতীয়

ডুবে যাওয়া ফেরি আমানত শাহ অচল; উদ্ধারব্যয় দেড় কোটি

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া ‘আমানত শাহ’ নামের রোরো ফেরি উদ্ধারের পর মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কারণে নৌরুটে চলাচলের অনুমতি মিলবে না। নৌ-অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও শিপ সার্ভেয়ার বিভাগ নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের নিয়মানুয়ী, যেকোন ফেরির সাধারণ মেয়াদকাল ৩০ বছর। এরপর ফেরিটি পাঠানো হয়ে সার্ভেতে। সার্ভে শেষে আরো ৫ বছর অথবা এর কিছু বেশি সময় চলাচলের অনুমোদন পায় ফেরি।

তবে ডুবে যাওয়া ‘আমানহ শাহ’ ফেরিটি নৌরুটে চলাচল করেছে ৪১ বছর। এ কারণে উদ্ধার হলেও ফেরিটি আর নৌরুটে চলাচলের অনুমোদন পাবে না বলে জানিয়েছে নৌ-অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও শিপ সার্ভেয়ার বিভাগ।

বাংলাদেশ নৌ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও শিপ সার্ভেয়ার মো. মনজুরুল কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাধারণত একটি ফেরির মেয়াদকাল ৩০ বছর। পরে সার্ভে করে আরো পাঁচ বছর বৃদ্ধি করা হয়। যদি এরপর ফেরির কন্ডিশন কিছুটা ভালো থাকে তাহলে আরেকটা স্পেশাল সার্ভে করে মেয়াদকাল আরো কয়েক বছর বাড়ানো যায়।’

পাটুরিয়া ঘাটে আমানত শাহ ফেরিটির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা দুর্ঘটনার আগে কয়েকবার মেয়াদর্ত্তীর্ণের কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছি। উদ্ধার করার পর যদি ফেরিটি মেরামত করে চলাচলের উপযোগী হবে কি না জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, এটা কোনো ভাবেই অনুমতি দেওয়া হবে না।
তবে ডুবে যাওয়া আমানত শাহ ফেরি মেয়াদউর্ত্তীণ হওয়ার পরেও কেনো বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করে উদ্ধার করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি দেখার দায়িত্ব আমাদের না।’

বিআইডাব্লিউটিসির পাটুরিয়া ঘাটের একটি সূত্র নিশ্চিত করে ১৯৮০ সালে প্রায় ৫ কোটি টাকা দিয়ে ডেনমার্ক থেকে ফেরিটি ক্রয় করা হয়েছিল। তার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন রুটে চলছিল ফেরিটি। ফিটনেসবিহীন হয়ে চলার বিষয়টি অনেক আগে থেকেই ঊর্ধ্বতনদের অবগত করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি কেউ-ই আমলে নেননি।

মেয়াদ শেষ হওয়া ফেরিটি উদ্ধারের জন্য বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ আনুমানিক ব্যয় ধরেছে দেড় কোটি টাকার বেশি। একটি মহলের ধারণা, ফিটনেসবিহীন ফেরিটি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে উদ্ধার করার চেয়ে পরিত্যক্ত ভাসমান ফেরিটি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করলে দুই কোটি টাকা বিক্রি করা যেতে পারে, যা সরকারের জন্য লাভজনক হবে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক নেতা জানান, পরিত্যক্ত ভাসমান ফেরির স্ক্র্যাপ হিসাবে বিক্রি করলে প্রতি টনের দাম পাওয়া যায় ৫০ হাজার টাকা। আর ডুবে যাওয়া ফেরির দাম আরো কম। রো রো ফেরি আমানত শাহর ওজন ৪০০ টন। পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ফেরিটি বিক্রি করলে সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা পাওয়া যাবে। ৪০ বছর আগে কেনা ফেরিটি উদ্ধারের পর ফের সংস্কার করে চলাচলের উপযুক্ত করা প্রায় অসম্ভ। এ অবস্থায় দুই কোটি টাকা ব্যয় করে ফেরিটি উদ্ধারের পর সংস্কারের উদ্যোগ বোকামি ছাড়া কিছুই না।

ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারের জন্য বেসরকারি সংস্থার জেনুইন এন্টারপ্রাইসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ। ইতিমধ্যে ওই সংস্থাটি উদ্ধার অভিযানের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে।

উদ্ধাকারী সংস্থা জেনুইন এন্টারপ্রাইজের ডুবুরি দলের প্রধান আব্দুর রহমান বলেন, উদ্ধারকারী সংস্থাটি গত তিন দিনে ফেরিটি উদ্ধারের জন্য দুইটি সার্ভে কাজ শেষ করেছে। ফেরির তলদেশে জমে থাকা পলিমাটি নজেলিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করে মেসেঞ্জারিং কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার উদ্ধারের সকল ইকুয়েবমেন্ট এসে পৌঁছালে চূড়ান্তভাবে ফেরিটি উদ্ধারের কাজ শুরু হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine + 20 =

Back to top button