Breakingস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

নারীদের গনোরিয়ার অন্যতম কারণ অবৈধ যৌন সম্পর্ক

ছত্রিশ বছর বয়সী বিথী দে গত তিন মাস ধরে অসুস্থ। মাঝে মাঝেই তলপেটে মারাত্মক ব্যথা অনুভব করেন। আবার জ্বরও আসে। গত তিন মাস ধরে পিরিয়ডও অনিয়মিত। শুরুর দিকে বিষয়টি কাউকে না জানালেও শেষ পর্যন্ত ঘনিষ্ঠ বান্ধবী রাফিজাকে জানায় বিথী। রাফিজা সংগে সংগে তাঁদের পারিবারিক এক গাইনী ডাক্তারের সংগে ফোনে কথা বলেন। ডাক্তার বিথীকে নিয়ে তাঁর চেম্বারে গিয়ে দেখা করার পরামর্শ দেন।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরদিন বিকালে রাফিজা বিথীকে নিয়ে চেম্বারে যান। ডাক্তার কিছুক্ষণ দেখার পর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেন। পরদিন সেসব পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যান দুই বান্ধবী। ডাক্তার রিপোর্ট দেখে যা বলেন, তা শুনে বিথী আর রাফিজা দু’জনেই হতভম্ব হয়ে পড়েন।

ডাক্তার বলেন, বিথীর জরায়ু এবং ডিম্বনালীতে জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে। তবে সংক্রমণের মাত্রা খুব বেশী নয়। ওষুধ সেবন এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে এই সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে পারেন বিথী।

কিন্তু চুমকীর বিষয়টি বিথীর মতো নয়। তাঁর যখন জরায়ু সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ে তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। ডাক্তারের পরামর্শে তাঁকে অপারেশন করে জরায়ু কেটে ফেলতে হয়।

গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, পিআইডি (পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ) হচ্ছে জরায়ু এবং ডিম্বনালীতে জীবাণুর সংক্রমণ। মাঝে মাঝে এটি ডিম্বাশয়কেও আক্রান্ত করতে পারে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যৌনবাহিত রোগের মাধ্যমে এই জীবাণুর সংক্রমণ হয়ে থাকে।

এছাড়াও গর্ভপাত, জরায়ুর কোনো অপারেশন, অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক ইত্যাদির মাধ্যমেও জীবাণু ভেতরে ঢুকতে পারে। কিছু লক্ষণ দেখে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগে আক্রান্তদের শনাক্ত করা যায়।

তিনি বলেন, বেশ কিছু পরিচিত লক্ষণ রয়েছে এই রোগের। তার মধ্যে রয়েছে তলপেটে ব্যথা, জ্বর এবং অ্যাবনরমাল স্রাব, অনিয়মিত পিরিয়ড, এসময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং পেটে ব্যথা এবং সহবাসে ব্যথা অনুভূত হওয়া।

এসব লক্ষণের তীব্রতা কম বা বেশি হতে পারে। এমনকি অনেক সময় কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও অনেক নারী এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ, এই রোগের জীবাণুগুলো অনেক সময় কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই জরায়ুর মুখে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।

ডা. মনোয়ারা বলেন, এই রোগ নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষার দরকার হয়। জরায়ুর মুখ বা মুত্রনালী থেকে ডিসচার্জ নিয়ে পরীক্ষা করে জীবাণুর উপস্থিতি নির্ণয় করা যেতে পারে। এছাড়া সংক্রমণের লক্ষণ বোঝার জন্য রক্ত, ইউরিন পরীক্ষা ও পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ল্যাপারস্কপি পরীক্ষার মাধ্যমেও এই রোগের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয় এবং একই সময় চিকিৎসাও সম্ভব।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনী বিভাগের সাবেক সভাপতি ডা. রোকেয়া বেগম বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে খুব সহজেই চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী ভালো হয়ে যায়। প্রথমে মূলত এন্টিবায়োটিক এবং পেইন কিলার দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এ ক্ষেত্রে ওষুধগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় খেতে হবে। একইসংগে স্বামী বা পার্টনারের চিকিৎসাও জরুরি। অন্যথায় বার বার জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।

বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি করার দরকার হতে পারে যেমন- ডিম্বনালী সংক্রমিত হয়ে পুঁজের সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া যাদের বয়স বেশি তাদের ক্ষেত্রে লক্ষণের তীব্রতা কমানোর জন্য ডিম্বনালী এবং জরায়ু সার্জারি করে অপসারণ করা হয়।

তিনি বলেন, চিকিৎসা সময় মত না করালে কিছু দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এগুলো হচ্ছে-দীর্ঘদিন ধরে তলপেট ব্যথা, কোমর ব্যথা, ডিম্বনালীর পথ বন্ধ হয়ে বা জরায়ু এবং এর আশপাশের অংগ প্রত্যংগের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়ে সন্তান ধারনে অক্ষমতা বা বন্ধ্যত্বের কারণ হয়, ডিম্বনালীর পথ বাধাগ্রস্ত হয়ে একটোপিক প্রেগনেন্সি (জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ) হতে পারে, প্রজননতন্ত্র সংক্রমণের যথাযথ চিকিৎসা না নিলে গর্ভপাত, সময়ের আগে বাচ্চা প্রসব এবং কম ওজনের বাচ্চা জন্মদানের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা। সচেতনতা এ সমস্যায় আক্রান্ত হবার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

সূত্রঃ বাংলাভিশন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five + 18 =

Back to top button