কাপ্তাই উপজেলাধীন রাইখালী ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় বসবাসরত কয়েকশ’ পরিবার বন্যহাতি আক্রমণের আতংকে দিন কাটাচ্ছে। ইউনিয়নের ডংনালা, পূর্ব কোদালা, পশ্চিম কোদালা, খন্তাকাটাসহ বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণের ভয়ে আতংকে দিন কাটছে এসব পরিবার।
এলাকাবাসী জানায়, ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষ পাহাড়ে জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। ফলে হাতির আক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে তারা জুমচাষ করতে বাধ্য হয়। যার পরিণামে প্রায় সময় হাতির আক্রমণে জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। ২০১৯ সালের মার্চ এবং এপ্রিলে ২ মাসের ব্যবধানে জুমে কাজ করতে গিয়ে বন্যহাতির আক্রমণে ডংনালা, পশ্চিম কোদালা এবং খন্ডাকাটা এলাকার বাসিন্দা জসাই মারমা, আব্দুল মান্নান এবং দিল মোহাম্মদ মৃত্যুবরণ করে। একই বছর ডংনালার রেমংপ্রæ মারমা, পূর্ব কোদালার মংসুইচিং মারমা ও খন্ডাকাটার মোঃ নাছির উদ্দীন বন্য হাতির আক্রমণে গুরুতরভাবে আহত হয়। ২০২০ সালে ডংনালার বাসিন্দা আবুমং মারমা এবং পাইথুই অং মারমা হাতির আক্রমণে গুরুতর আহত হয়ে বর্তমান শয্যাশায়ী রয়েছে।
ডংনালা এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য সুইসাপ্র মারমা জানান, বন মন্ত্রণালয়ের বন বিভাগের গেজেট অনুযায়ী হাতির আক্রমণে মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ লক্ষ টাকা এবং আহত ব্যক্তির জন্য ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ পরিবার কোন ক্ষতিপূরণ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। উক্ত পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণ পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন করলেও ১ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও নিহত ও আহত পরিবারগুলো কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, বন্যহাতির উপদ্রবে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের উৎপাদিত ফসল আদা, হলুদ, আম,কাঁঠাল বাগানসহ নানা রকম শস্য ক্ষেত ধ্বংস করে দিচ্ছে বন্যহাতির পাল। এলাকাবাসীর দাবি, জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় বনবিভাগ যেন দ্রæত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়।
রাইখালী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এনামুল হক জানান, তাঁর ইউনিয়নের আওতাধীন ডংনালা, পূর্ব কোদালা, খন্তাকাটা এলাকায় প্রায়ই বন্যহাতির দল দিনরাতে হামলা চালিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে আসছে। প্রায় প্রতি বছরই হাতির আক্রমণে মারা যাচ্ছে একাধিক মানুষ। ইতিমধ্যে কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নিহত এক পরিবার এবং আহত দুই পরিবারকে ঢেউটিন ও নগদ অর্থ সহায়তা করা হয়েছে। তিনি বন বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দ্রæত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জোর দাবি জানান।
কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম জানান, সংরক্ষিত সরকারি বনাঞ্চলকে হাতির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলে হাতি কখনো লোকালয়ে আসবে না এবং হাতি মানুষের ক্ষতি করবে না। তিনি জানান, অতি দ্রæত বন বিভাগের পক্ষ থেকে নিহত এবং আহত পরিবারগুলোকে অর্থ সহায়তা প্রদান করা হবে।
রাঙামাটি অঞ্চলের বন সংরক্ষক ছানাউল্যা পাটোয়ারি জানান, দিনদিন হাতির আবাসস্থল ধ্বংস করে বাড়িঘর, সড়ক নির্মাণ করে তাদের চলাচল এবং বসবাসের আবাসভূমি সংকুচিতসহ খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে বন্যহাতি হিং¯্র হয়ে আক্রমণ করছে। মানুষ ও তাদের ঘরবাড়ি, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করছে। তাই এই মুহূর্ত আমাদের সবচেয়ে বেশি জরুরি তাদের আবাসস্থলের আশেপাশে বসতি না করা এবং বন্যহাতির জন্য পর্যাপ্ত খাবারের উৎস তৈরি করা।
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এ মুহূর্তে মানুষকে আরো মানবিক হতে হবে, ভালোবাসতে হবে প্রকৃতি ও পশুপাখি।