Lead Newsকরোনাভাইরাসস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষায় ভাবা হচ্ছে নতুন কৌশল

দেশে বেড়ে গেছে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ওপর চাপ। যা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি ও তাদের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

পরিস্থিতি উত্তরণে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় যুক্ত বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে নতুন কৌশল নিয়ে ভাবা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হবে নতুন উপসর্গধারীদের। পাশাপাশি আক্রান্তদের পর পর দুটি নেগেটিভ রেজাল্ট দেখে সুস্থ ঘোষণা করার প্রক্রিয়ায়ও আসতে পারে পরিবর্তন।

এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু এখন এটি প্রমাণিত যে আক্রান্তদের মধ্যে যারা সুস্থ হয়ে ওঠে, তাদের ভেতর ১৪ থেকে ২১ দিন বা তারও আগেই অনেকের ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। ফলে পরীক্ষায় তাদের নেগেটিভ রেজাল্ট আসবেই। তাই যারা বাসায় বা হাসপাতালে আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে, তাদের পরীক্ষা না করলেও অসুবিধা নেই। বরং এই পরীক্ষায় যে সময় ও জনবল ব্যবহূত হয়, তা নতুন উপসর্গধারীদের পরীক্ষার পেছনে ব্যয় করলে দ্বিগুণসংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। এ নিয়ে অবশ্য কারো কারো দ্বিমত রয়েছে।

সরকারের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটির সদস্যসচিব ও আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘ইউরোপ, আমেরিকা, ভারতসহ যেসব দেশে সংক্রমণ বেশি সেসব দেশে পরীক্ষায় আমাদের চেয়েও অনেক বেশি হিমশিম অবস্থা। কোথাও কোথাও দু-তিন সপ্তাহ সিরিয়াল দিয়ে থাকতে হয় পরীক্ষার আশায়। কোথাও কোথাও জটিল উপসর্গ ছাড়া পরীক্ষাই করা হয় না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের যেহেতু নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেহেতু আমাদেরও এখন নতুন শনাক্তের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপসর্গধারীদের গুরুত্ব বা অগ্রাধিকার থাকবে। তাই আমরা ভাবছি যারা অল্পতেই সুস্থ হয়ে উঠছে কিংবা উপসর্গ ভালো হয়ে যাচ্ছে তাদের দুইবার করে পরীক্ষা করা থেকে বেরিয়ে আসব। তবে ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে যাদের উপসর্গ থেকে যাবে কিংবা যাদের অবস্থা জটিল থাকবে তাদের অবশ্যই পরীক্ষা করা হবে।’

নমুনা পরীক্ষার নতুন এই কৌশল নিয়ে অভিন্ন মত ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্সের সাবেক ডিন অধ্যাপক ও করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটির আরেক সদস্য ডা. ইকবাল আর্সলান।

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এখন উপসর্গধারীদের পরীক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। যাদের একবার পজিটিভ হয়েছে তাদের উপসর্গ যদি কমে যায় বা না থাকে, তবে পরীক্ষা না করলেও চলে। বরং নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরো বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, নতুন অনেকেই পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। আবার শুধু কৌতূহল বা সন্দেহের বশে অনেকে চার-পাঁচবার করেও পরীক্ষা করাচ্ছে। এতে সময়, কিট ও পরীক্ষা সংক্রান্ত নানামুখী অপচয় হচ্ছে। আর যারা একেবারেই সুযোগ পাচ্ছে না, তাদের হয়রানি বাড়ছে। তাই আমরাও এই পরামর্শের দিকে নজর রাখছি।

এদিকে দেশে কোনো কোনো ভাইরাস বিশেষজ্ঞের মধ্যে আরটিপিসিআর পদ্ধতির বাইরে অ্যান্টিজেন টেস্ট নিয়েও আগ্রহ বা কৌতূহল রয়েছে। তবে এ বিষয়ে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, বিশ্বে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রতিষ্ঠানে কিছু অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয় খুবই সীমিত আকারে। এর বাইরে কোথাও অ্যান্টিজেন টেস্টের কার্যকর কোনো ব্যবস্থাপনা এই করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে নেই। কারণ অ্যান্টিজেন টেস্টে কার্যকর ফলাফলের হার খুবই কম।

দেশে গণস্বাস্থ্যের উদ্যোগে অ্যান্টিবডি টেস্টের পাশাপাশি অ্যান্টিজেন টেস্টের কিট উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তা পরীক্ষামূলক পর্যায়ে গিয়ে গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নিজেরাই পিছু হটে। যদিও গণস্বাস্থ্য গবেষণা বিভাগ থেকে দাবি করা হয়েছে যে তারা আবারও এই অ্যান্টিজেন টেস্ট নিয়ে কাজ করবে।

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one + 10 =

Back to top button