প্রবাস

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রপ্তানি কমে অর্ধেকে ঠেকেছে

দুই বছরের ব্যবধানে বিদেশে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। করোনাভাইরাসের ধাক্কা এবং একাধিক বড় শ্রমবাজার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

সংকুচিত হয়ে পড়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজারও। মালয়েশিয়া, বাহরাইন, কাতারের মতো দেশের দরজা বন্ধই বলা চলে। ফলে পুরো শ্রমবাজার এখন সৌদি আরবনির্ভর।

বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, রেকর্ড ১০ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে যান ২০১৭ সালে। পরের দুই বছরও সংখ্যাটা সাত লাখের ওপরে ছিল। ২০২০ সালে বিভিন্ন দেশে যান মাত্র দুই লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন। চলতি বছর এই সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে; সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে গেছেন তিন লাখ ১৭ হাজার ১১ জন।

তবে বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মীর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলেছেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক শহীদুল আলম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক। আশা করা যাচ্ছে, আগামী দিনে বিদেশে কর্মী পাঠানোর হার বাড়বে। বিভিন্ন দেশে প্রবেশের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেগুলো একে একে উঠে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে সৌদি আরবের ওপর সৃষ্ট সাময়িক নির্ভরতা কমে আসবে।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়েও আশার কথা শোনালেন বিএমইটি মহাপরিচালক। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার ব্যাপারে দ্রুত ইতিবাচক সমাধান মিলতে পারে।

বিএমইটির পরিসংখ্যান বলছে, এই শ্রমশক্তির বড় অংশই যাচ্ছে সৌদি আরবে। এ পর্যন্ত কাজ নিয়ে বিদেশে যাওয়া ব্যক্তিদের ৩৩ শতাংশের বেশির গন্তব্যস্থল সৌদি আরব। প্রতিবছর যতসংখ্যক ব্যক্তি কাজের খোঁজে বিদেশে যান, তাঁদের মধ্যে সৌদিগামী ব্যক্তির হার ২০১৭  সালে ৫৫ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৩৫ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৫৭ শতাংশ, ২০২০ সালে ৭৪ শতাংশ এবং এই বছরের প্রথম ৯ মাসে ৭৮ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, নতুন বাজার সৃষ্টি না হলে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বেন। করোনার কারণে বহু তরুণ-যুবক বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বিদেশ থেকে ছুটিতে এসে করোনার ফাঁদে পড়ে কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। তাঁরা অপেক্ষা করছেন কবে বিদেশের শ্রমবাজার স্বাভাবিক হবে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, জনশক্তি রপ্তানির হার কমে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ মালয়েশিয়া শ্রমবাজার বন্ধ থাকা। তবে আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরের শুরু থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কর্মী পাঠানোর একটি পথ খুলেছে।

ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ফর রাইটস অব বাংলাদেশি ইমিগ্রান্টসের (ওয়ারবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান অর্ধেকে নেমে আসার পেছনে শুধু কভিড-১৯ পরিস্থিতিই দায়ী নয়, কাঙ্ক্ষিত দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের ঘাটতিও বড় কারণ। কভিড-১৯-এর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর বিভিন্ন দেশে কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সুযোগটি আমরা নিতে পারছি না। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপাল এদিক থেকে অনেক এগিয়েছে।’

সাইফুল হক বলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে গ্রুপভিত্তিক কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা নিলে বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি কর্মীদের খরচও কমে আসবে। তিনি নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করারও দাবি জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 17 =

Back to top button