শিল্প ও বাণিজ্য

বিদ্যুৎ খাত সরকারের কাছে হাত পাতবে না

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ খাতকে স্বাবলম্বী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, সরকারের কাছে হাত পাততে হবে না, বিদেশে পাওয়ার বন্ড ছাড়ব। অর্থনৈতিকভাবে সরকারের কাছে হাত পাতবে না বিদ্যুৎ খাত।

সিপিডির উদ্যোগে ভার্চুয়াল সেমিনারে অংশ নিয়ে বুধবার (২৩ জুন) প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি ও শিল্পায়নের পরিকল্পনা বার বার পরিবর্তন হচ্ছে। ডিমান্ড ফোরকাস্ট ধরে এগুচ্ছে বিদ্যুৎ খাত, ১০৮টি ইকোনোমিক জোন হচ্ছে। চার হাজার মেগাওয়াট ক্যাপটিভ পাওয়ার ডিরেটেড ক্যাপসিটি। পুরনো কেন্দ্র থেকে হাতে আছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে চাহিদা রয়েছে ১২-১৩ হাজার মেগাওয়াট, এটি বাড়তি ক্যাপসিটি নয়। বিদ্যুৎ খাতকে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে চারটি বিষয় জরুরি- নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী, দক্ষতা ও স্বচ্ছতা।

গ্রাহকদের বিলের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৩০ লাখ স্মার্ট মিটার রয়েছে। বাকিগুলো ম্যানুয়াল.. চার কোটি ম্যানুয়াল গ্রাহকের জন্য গড় বিল করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বেশি হয়ে গেছে। কেউ অভিযোগ করলে সংশোধন করে দেওয়া হচ্ছে।

প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ ব্যবহার যত বেশি বাড়বে, জীবন যাত্রার মান তত বাড়বে। উন্নত দেশ হতে হলে মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার কয়েকগুণ বাড়াতে হবে। রেন্টাল পাওয়ার ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণে কাজে দিচ্ছে। না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ৩০ বিলিয়ন ডলার লাগবে। বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। বৈদ্যুতিক গাড়ি একটা ভালো সমাধান হতে পারে। সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকতে হবে। দামের বিষয়ে ওপেন মার্কেটের জন্য বাংলাদেশের বাজার প্রস্তুত না। ২০১৫ এর মধ্যে বড় কয়লা বিদ্যুৎ এলে দাম কমত, কিন্তু তা আসেনি। কয়লা থাকবে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বাণিজ্যের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ বন্ধ থাকছে, এটা ঠিক নয়, জ্বালানির স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকে। ফার্নেস অয়েলে প্ল্যান্টফ্যাক্টর কমে ৩২ থেকে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। করোনার কারণে ডিজেলে ১৪ থেকে ১ শতাংশে নেমে এসেছে। এতে অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। সঞ্চালন, বিতরণে জোর দিচ্ছি। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেওয়া হয়েছিল জ্বালানি কস্ট কম হওয়ার কারণে। এখন বিশ্ববাজারে ক্লিন ফুয়েলে দাম কম হওয়ায় পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান রিভিউ করার চিন্তা করছি। এলএনজি নির্ভর প্রকল্পগুলোর দিকে বিশেষ জোর দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সঞ্চালন ও বিতরণে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা অর্জিত হলে শিল্প কারখানায় ক্যাপটিভ এর ব্যবহার কমবে। তখন গ্রিড বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম বলেন, বেসরকারি সেক্টর এগিয়ে যাওয়া খারাপ কিছু না। সঞ্চালন, বিতরণ ও এনএলডিসির আধুনিকায়ণ জরুরি। গ্রীষ্ম ও শীতে চাহিদার একটা বড় তারতম্য থাকে, চার হাজার মেগাওয়াটের মতো এটা একটা বড় সমস্যা। ডিমান্ড ফোরকাস্ট যেটা করা হয়েছে, তা খুব বেশি উচ্চাভিলাসী মনে হয়েছে, মাতারবাড়ি, পায়রা, রামপাল বাদে বাকি প্রজেক্টগুলো বাদ দেওয়া উচিত। এ তিনটা থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। কয়লা আমদানি এক বড় ঝামেলা। এজন্য দেশি গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিতে হবে। পর্যায়ক্রমে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। বছরে একাধিক দাম বাড়ানোর সুযোগ রাখাটা গ্রহাকের স্বার্থ রক্ষা করছে না। বছরে শর্ত সাপেক্ষে দুই বারের বেশি দাম বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।

বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকদের সংগঠন বিপপা’র সভাপতি ইমরান করিম বলেন, ক্যাপসিটি পেমেন্ট সুযোগ না থাকলে এ প্রজেক্টগুলো দাঁড়াত না, এটা বিশ্বের মধ্যে অনেক কম। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর দক্ষতা ভালো। এজন্য এগুলো উৎপাদনের তালিকায় অগ্রাধিকার পায়। সরকার যেভাবে আশা করেছিল, সেভাবে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েনি। এজন্য ইলেক্ট্রিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ানো উচিত। কয়লাভিত্তিক প্রকল্প খুব বেশি প্রয়োজন নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে জমি একটা বড় সমস্যা, এজন্য বড় উদ্যোক্তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে তেমন ঝুঁকছে না। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম বলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি চালু করা লাভজনক।

সঞ্চালক অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান প্রশ্ন তোলেন, ফোরকাস্টিং ডিমান্ডের সাথে জিডিপি গ্রোথ সামঞ্জস্যপূর্ণ কি? রেন্টাল প্রকল্পের ওপর এতো নির্ভরশীলতা কেন? ব্যয়বহুল প্রকল্পগুলো দ্রুত অবসরে পাঠানো হচ্ছে না কেন? উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে চাহিদা বৃদ্ধির দিকেও নজর দেওয়া উচিত। যাতে বিদ্যুৎ বিক্রিও বাড়ে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 5 =

Back to top button