বিশ্ববাজারে তেলের দাম একদিনে বাড়ল প্রায় ৬ শতাংশ
সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় অঞ্চল ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ তেলের উত্তোলন হ্রাস করার পর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। অপরিশোধিত তেলের দুই ব্র্যান্ড ব্রেন্ট এবং ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) উভয়েরই দাম বেড়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার প্রতি ব্যারেল (১৫৯ লিটার) ব্রেন্ট ক্রুড বিক্রি হয়েছে ৮৪ দশমিক ৪২ ডলারে। আগের দিন রোববারের তুলনায় এই মূল্য ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।
আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের প্রতি ব্যারেল সোমবার বিক্রি হয়েছে ৮০ দশমিক ০১ ডলারে, যা আগের দিন রোববারের চেয়ে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।
গত বছর ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রথম কয়েক মাস আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তারপর জুন মাস থেকে ডলারের মান বাড়তে থাকায় বিদেশি মুদ্রার মজুত বাঁচাতে তেল কেনা কমিয়ে দেয় অনেক দেশ।
এই পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলে সমৃদ্ধ এবং খনি থেকে তেল উত্তোলন ও রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাসের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাশিয়া গত বছর অক্টোবরে দৈনিক তেলের উত্তোলন ৫ লাখ ব্যারেল কমিয়ে দিয়েছিল। দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, বাজারের বতর্মান অবস্থা বিবেচনায় নেওয়া এই সিদ্ধান্ত আপাতত ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। পরে তার মেয়াদ আরও বাড়ানো যেতে পারে।
সেসময় ওপেক প্লাসের অন্য সদস্যরা রাশিয়ার এ সিদ্ধান্তে সায় দিলেও নিজেদের দৈনিক উৎপাদন কমাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে এবার ওপেক প্লাসের ৬ সদস্যরাষ্ট্র রাশিয়ার পথে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দেশগুলো হলো— সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, আলজেরিয়া এবং ওমান।
ওপেক প্লাস ও আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণকারী বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে রোববার অনেকটা আকস্মিকভাবেই তেলের উত্তোলন ১০ লিটারেরও বেশি হ্রাস করে ওপেকের ৬ সদস্যরাষ্ট্র।
এদের মধ্যে সৌদি আরব তেলের উত্তোলন কমিয়েছে ৫ লাখ ব্যারেল এবং ইরাক ২ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল। অন্যান্য দেশগুলোও হ্রাস করেছে তেলের উত্তোলন।
জ্বালানি তেলের বাজার পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা রয়েল অটোমোবাইল ক্লাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তোলন কমানোর কারণে আপাতত খুচরা বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা আপাতত নেই।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ওপেক প্লাসের এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা এ সম্পর্কে বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, আবারও বলছি— বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া মোটেও উপযুক্ত কোনো সমাধান নয়।’