‘বিয়ে নিয়ে উদ্বেগ ছিলো, বিরুদ্ধে ছিলাম নাঃ’ মালালা
পাকিস্তানি নারীশিক্ষা কর্মী এবং সবচেয়ে কম বয়সে শান্তিতে নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফজাই সদ্য বিয়ে করে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
এক সময়কার একটি সাক্ষাৎকারে বিয়ে নিয়ে মালালার মন্তব্য ঘিরে চলছে এ সমালোচনা।
ব্রিটিশ ভোগ ম্যাগাজিনকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে মালালা বলেছিলেন, “আমি এখনও বুঝি না মানুষ কেন বিয়ে করে। আপনি একটা মানুষের সঙ্গে থাকতে চাইলে এর জন্য কাগজপত্র সই করার দরকার কী? কেন দুইজন মানুষ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জীবন ভাগ করে নিতে পারে না?”
গত জুলাইয়ে ওই মন্তব্য করেছিলেন মালালা। এরপর গত সপ্তাহেই তিনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা আসার মালিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন। লন্ডনে তাদের বিয়ে হয়। মঙ্গলবার মালালা এক টুইটে সে খবর দেওয়ার পরই বিয়ে নিয়ে আগেকার ওই মন্তব্যের জন্য সমালোচিত হচ্ছেন তিনি।
এই সমালোচনার মুখে রোববার বিবিসি’র অ্যান্ড্রু মার শো’ তে হাজির হয়ে মালালা বিয়ে নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। বলেছেন, তিনি কখনওই বিয়ের বিরুদ্ধে ছিলেন না, বরং বিয়ে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।
“আপনি একসময় বিয়ের বিরুদ্ধে ছিলেন, কী কারণে আপনার মন বদলাল?- উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবেই ওই কথা বলেন মালালা। তিনি বলেন, “এটি সত্য যে বাল্যবিবাহ, বিচ্ছেদ… এবং ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার খবর দেখা বিশ্বের অনেক মেয়ের মধ্যেই এমন উদ্বেগ রয়েছে।”
বিয়ে নিয়ে মালালা আরও বলেন, “এই ব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা, একজন পুরুষের চেয়ে নারীর অনেক বেশি আপোস করে নেওয়া, পিতৃতন্ত্র ও স্ত্রী বিদ্বেষের প্রভাবে গড়ে ওঠা প্রথা নিয়ে চলতে হচ্ছে। তাই আমরা যে সিস্টেমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে।”
বিবিসি-র অনুষ্ঠানে ২৪ বছর বয়সী মালালা তার স্বামীরও প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “আমার মূল্যবোধ বোঝেন এমন একজন স্বামী খুঁজে পেয়ে আমি সত্যিই ভাগ্যবান।”
পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার মেয়ে মালালা ইউসুফজাই নারী শিক্ষা বিরোধী তালেবান জঙ্গিদের এলাকায় বসে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার পক্ষে বিবিসি ব্লগে লেখালেখি করে যখন পশ্চিমা বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১১।
নারী শিক্ষার পক্ষে কথা বলায় তাকে পড়তে হয় প্রাণনাশের হুমকির মুখে। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর সোয়াত উপত্যকার মিনগোরাত এলাকায় ১৪ বছর বয়সী মালালা ও তার দুই বান্ধবীকে স্কুলের সামনেই গুলি করে তালেবান জঙ্গিরা।
পাকিস্তানে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করে বুলেট সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হলেও পরে যুক্তরাজ্যের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওই ঘটনা বিশ্বেজুড়ে আলোড়ন তোলে, মালালর স্বপ্ন সফল করতে ২০১২ সালের ১০ নভেম্বরকে ‘মালালা দিবস’ ঘোষণা করে জাতিসংঘ।