Breakingক্যারিয়ার

বুয়েটের জুনায়েদ যেভাবে চাকরি পেলেন গুগলে

সাদ মুহাম্মদ জুনায়েদ। সম্প্রতি গুগলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রকৌশল বিজ্ঞানে। তিনি গুগলের মতো টেক জায়েন্ট কোম্পানিতে কাজের সুযোগ, প্রস্তুতি ও হরেক রকম অভিজ্ঞতার গল্প শুনিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথমসারির একটি অনলাইন নিউজকে।

প্রশ্নঃ গুগল আমাদের কাছে জাদুর কাঠির মতো। যা খুঁজি, তাই পাই। সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেলেন। কেমন লাগছে?
সাদ মুহাম্মদ জুনায়েদঃ গুগল আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্য থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় অনেক কাগজপত্রের হদিসও মেলে এই সার্চ ইঞ্জিনে। ফলে সবার কাছেই গুগলের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। বিশেষ করে আমরা যারা কম্পিউটার প্রকৌশলে পড়াশোনা করেছি, তাদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা আরও বেশি। বুয়েটে থাকতেই টেক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের স্বপ্ন দেখতাম। চেষ্টাও করেছি।

অ্যামাজন, মাইক্রোসফটসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করেছি। ব্যর্থও হয়েছি বহুবার। এর মাঝে এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ইকমার্স সাইট শপিই থেকেও কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু কোভিডের কারণে সিঙ্গাপুরের প্রবেশ নিষেধ থাকায় যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সুযোগটা এসেছে গুগলের হাত ধরে। সঙ্গত কারণেই এমন একটি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাওয়া আমার কাছে অনেক বড় ঘটনা।

প্রশ্নঃ এই ‘বড় ঘটনা’র পেছনের গল্প শুনতে চাই।
সাদ মুহাম্মদ জুনায়েদঃ তাহলে শুরু থেকেই শুরু করি। পড়াশোনা করেছি মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে। এখানেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। পরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনার সুযোগ পাই। আমি শুরু থেকেই এ সুযোগ কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম। যেখানেই সুযোগ পেয়েছি, প্রোগ্রামিং বা কোডিং বিষয়ে কনটেস্টে অংশ নিয়েছি।

বন্ধুরা মিলে দল বেঁধে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধান করেছি। এসব কনটেস্ট গুগলে চাকরি পেতে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। পরিষ্কার করে বলি। বুয়েটে যখন ভর্তি হলাম, তখন সাদিয়া নাহরিন আপুকে নিয়ে খুব হইচই হচ্ছে। তিনি গুগলে চাকরি পেয়েছেন। সেই থেকেই মাথায় গুগলের প্রতি আগ্রহ তৈরি হলো। এরপর দেখেছি, বুয়েটের অনেক সিনিয়র গুগলে চাকরি করতে যাচ্ছে। এসব আমাকে খুব উৎসাহ দিতো।

প্রশ্নঃ তার মানে টেক জায়েন্ট কোম্পানিতে কাজের জন্য বেশি বেশি কনটেস্টে অংশ নেওয়া দরকার?
সাদ মুহাম্মদ জুনায়েদ: আমার মতে গুগলের মতো জায়েন্ট প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চাইলে বেশি বেশি কনটেস্টে অংশ নেওয়ার বিকল্প নেই। কারণ এসব কনটেস্টে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং সমস্যার সমাধান করতে দেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এতে করে তত দ্রুত চিন্তা করা ও সমস্যা সমাধানে পারদর্শী হয়ে ওঠবেন। যা টেক জায়েন্ট কোম্পানিতে কাজের ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। তবে কনটেস্টে অংশ না নিয়েও গুগলে কাজ করছেন, এমন উদাহরণও আছে।

প্রশ্নঃ গুগলে কী ধরণের প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে?
সাদ মুহাম্মদ জুনায়েদ: গুগলের কর্মী বাছাই প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ ও জটিল। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আমি প্রাথমিক ইন্টার্ভিউ দেওয়ার জন্য ডাক পাই। সুযোগটা আসে গুগলে কর্মরত আমার বন্ধু অনিকের রেফারেন্সের মাধ্যমে। সেসময় গুগলের একজন রিক্রুটারের সঙ্গে প্রাথমিক সেশন সম্পন্ন করি। এতে তারা বর্তমান চাকরির অবস্থা, গুগলে কেন চাকরি করতে চাই- এসব বিষয় জানতে চেয়েছে। সেসবের উত্তর দেওয়ায় রিক্রুটার আমাকে পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

পরের ধাপে ইন্টার্ভিউ ছিল ৪৫ মিনিটের। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে গুগল মিটের মাধ্যমে। এখানে আমাকে কোডিং সমস্যা সমাধান করতে হয়েছিল। পরের সপ্তাহে আমি আনসাইটে যাওয়ার সুযোগ পাই। কোভিডের কারণে এটিও ভাচুর্য়ালি হয়েছে।

অনসাইট মূলত ৫টি ইন্টার্ভিউয়ের কম্বিনেশন। ৪টি কোডিং এবং একটি বিহেভিয়ার সম্পর্কিত যেটি গুগললিনেস নামে পরিচিত। অনসাইটের ফরম্যাটও ফোন কল রাউন্ডের মত ছিল। এরপর শুরু হয় টিম ম্যাচিং রাউন্ড। দুইজন ম্যানেজারে সঙ্গে কথা হয়। তার মধ্যে বিগ কোয়েরিকে প্রেফার করি। এরপর আমার সিভি রিক্রুটার নিয়োগ কমিটির কাছে সাবমিট করে।তারা কিছু ফর্মালিটি শেষ করে চূড়ান্ত নিয়োগের খবর দেয়।

প্রশ্নঃ কবে নাগাদ জয়েন করছেন?
সাদ মুহাম্মদ জুনায়েদ: আমার জয়েনিং হবে পোল্যান্ডের গুগল অফিসে। প্রাথমিক ভাবে যোগদানের তারিখ দেওয়া হয়েছে ২৬ সেপ্টেম্বর। তবে বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ডের ভিসার আবেদন করা যায় না। এই প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করতে হবে ভারতে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ভারতের অবস্থা আরও খারাপ। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই সংক্রান্ত কাজ করবো।

প্রশ্নঃ জয়েন করার পর কী ধরনের কাজ করতে হবে? কোন ধারণা দেওয়া হয়েছে?
সাদ মুহাম্মদ জুনায়েদ: গুগলে জয়েন করার পর ব্যাকেন্ডে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে ডাটা বেজ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। প্রাথমিক ভাবে এইটুকুই জেনেছি। যোগদানের পর কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো।

প্রশ্নঃ নতুন যারা টেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চায়, তাদের জন্য কোন পরামর্শ-
সাদ মুহাম্মদ জুনায়েদ: গুগলসহ বিভিন্ন টেক জায়েন্ট কোম্পানিতে কাজ করতে চাইলে প্রব্লেম সলভিং, কোডিং স্কিল ও কমিউনিকেশনে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এজন্য নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে হবে। বিশেষ করে সমস্যা সমাধানে পারদর্শী হয়ে উঠতে হবে। কোডিং সংক্রান্ত খুঁটিনাটি জানতে হবে। এজন্য যত বেশি সম্ভব কনটেস্টে অংশগ্রহণ করা যায়, ততই ভালো। আরেকটি কথা বলতে চাই, জীবনে ব্যর্থতা আসবেই। তবে হাল ছাড়া যাবে না। আমিও একাধিকবার ব্যর্থ হওয়ার পর গুগলে চাকরি পেয়েছি।

সূত্রঃ ঢাকাপোস্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five + 17 =

Back to top button