ব্র্যাকের কিছু গবেষণা এবং তা নিয়ে যত বিতর্ক
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চলতি মূল্যে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা প্রায়। যেখানে সেবা খাতের অবদান সবচেয়ে বেশি, প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ কোটি টাকা। আর কৃষি খাতের অবদান তিন লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা প্রায়, যা ১৩ শতাংশের কিছু কম।
কিন্তু ব্র্যাকের একটি গবেষণা ফলাফল দেখা যায়, “কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে লকডাউনের প্রথম দেড় মাসে কৃষকের ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।”
গতকাল বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত সময়ে করা ওই গবেষণায় ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে বেসরকারি এ সংস্থা।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে গবেষক দলের সদস্য নাহরীন রহমান স্বর্ণা বলেন, “এই দেড় মাসে পণ্যের ক্ষতি ও কম দামের কারণে প্রত্যেক কৃষকের লোকসান হয়েছে গড়ে প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৯৭৬ টাকা।”
(লিংকঃ https://bit.ly/3761BMI) এই খবর আরো অনেক টেলিভিশন ও সংবাদমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ হয়েছে।
আমার প্রশ্ন, সরকারি হিসাবেই যেখানে মাসে গড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকার কৃষি উৎপাদন হচ্ছে, সেখানে দেড় মাসে শুধু ক্ষতি ৫৭ হাজার কোটি টাকা হয় কিভাবে? দেড় মাসে যদি ক্ষতিই হয় এই পরিমাণ টাকা তাহলে মোট উৎপাদনের পরিমাণ কত?
সুতরাং এমন গবেষণা ফলাফল সচেতন যে কারো চক্ষু চড়কগাছে তুলবে সন্দেহ নেই।
আসুন, ব্র্যাকের আরেকটি গবেষণার নমুনা দেখি।
“করোনাভাইরাসের কারণে নতুন করে ৫ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছে। ব্র্যাকসহ আরও কয়েকটি সংস্থা সম্মিলিতভাবে এই গবেষণা করেছে।”
যা প্রকাশিত হয় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বিজনেস রিপোর্টে। (লিংকঃ https://youtu.be/_ZX79xXag_M) যা প্রচারিত হয় এই জুন মাসের ১ তারিখে।
করোনা আসার আগে দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিলেন প্রায় সাড়ে ২০ ভাগ অর্থাৎ ১৬ কোটির হিসাবে সোয়া তিন কোটি মানুষ।
ব্র্যাকের হিসাবে নতুন করে এল ৫ কোটি ৩৬ লাখ। এর অর্থ, এই মুহুর্তে দারিদ্র্যসীমার নিচে দেশের সাড়ে আট কোটির বেশি মানুষ। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশিই এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে। সত্যি? উল্লেখ্য, ২০০০ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৪৮ ভাগ। ব্র্যাকের গবেষণা মতে, ২০০০ সালের চেয়ে বেশি মানুষ এখন দরিদ্র। নোটঃ যারা দিনে ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম আয় করেন, তাদের দারিদ্র্যসীমার নিচে হিসাব করা হয়।
চলুন ব্র্যাকের গবেষণার আরও একটি নমুনা দেখি।
“সংক্রমণের বিস্তার নিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর গবেষক ড. মলয় মৃধা ও রিনা রানী পাল , নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দীপক কে. মিত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক দু’জন গবেষক মিলে যে রিপোর্টটি তৈরি করেন তাতে বলা হয় ১৩ কোটি মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।
জাতিসংঘের নথির মতোই এই রিপোর্টে ধরে নেয়া হয়, এই হারে সংক্রমণ ঘটবে যদি এই ভাইরাস মোকাবেলায় ২৮শে মে’র মধ্যে একেবারেই কোন উদ্যোগ নেয়া না হয়।
তবে এই রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ বিবৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় যে এটি তাদের কোন গবেষণা নয়।”
রিপোর্টটি প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা। (লিংকঃ https://bit.ly/3h7olRo)
রিপোর্টে আশংকা করা হয়, জরুরি ব্যবস্থা নেয়া না হলে বাংলাদেশে করোনায় ৫ লাখ লোক মারা যাবে। একদিনেই মারা যেতে পারে ৮০ হাজার মানুষ। যদিও পরে এই গবেষণা প্রতিবেদন অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্র্যাক এমন আরো কিছু গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করেছে। যা বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। বলে রাখা ভাল, সরকারি তথ্যে আমাদের অনেকের আস্থা তলানিতে। বেসরকারি নামি প্রতিষ্ঠানের তথ্য যদি এমন হয়, তাহলে পরিসংখ্যানের অর্থ কী দাঁড়াবে? বিগ লাই?
লেখক: রুহুল আমিন রিপন, গণমাধ্যমকর্মী