ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেয়ায় হেফাজত ইসলামের ভারপ্রাপ্ত আমির আল্লামা জুনায়েদ আহমেদ বাবুনগরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী শাসনতন্ত্রের সৈয়দ ফয়জুল করিমদের সহযোগিতা করার অভিযোগে এবার বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, তার ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করা হয়েছে।
আজ বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী এবং তিনিই পরে গণমাধ্যমকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশ হেফাজত ইসলামের একটি আলোচনা সভায় দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক তার বক্তব্যে বলেন, এই দেশে কোনো ধরনের ভাস্কর্য থাকবে না। জাতির পিতার ভাস্কর্যও করতে দেয়া হবে না।
পরবর্তীতে গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজত ইসলামের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, মদিনা সনদে দেশ চললে কোনো ধরনের ভাস্কর্য থাকতে পারবে না এবং এগুলো নির্মাণ বন্ধ না করলে আরো একটি শাপলা চত্ত্বর ঘটাবেন বলেও সরকারকে হুমকি দেন।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে ইসলামিক শাসনতন্ত্রের এক জনসভায় ফয়জুল হক বলেছেন, বাংলাদেশে যদি কোনো ভাস্কর্য তৈরি করা হয় তাহলে সেগুলো ভেঙে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে এবং প্রয়োজনে আবারও শাপলা চত্ত্বরে জমায়েত করা হবে।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, এর আগেও শাপলা চত্ত্বরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সকাল ৬টার মধ্যে শেখ হাসিনার পতন ঘটাবেন এবং সেভাবেই তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপরই বাবুনগরীর হুকুমে হেফাজত ইসলামের ‘জঙ্গিরা’ বায়তুল মোকাররমে অগ্নিসংযোগ করে। এতে সেখানে থাকা পবিত্র কোরআন শরীফ পুড়ে যায়। স্বাধীনতার পর থেকেই তারা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা, দেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে বিশ্বের কাছে দেশকে হেয়পতিপন্ন করার অপচেষ্টা করছে।
‘১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধে পরাজিত গোষ্ঠী জামায়াত, আলবদর, রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীরা পরাজিত হয়ে ১৯৭৫ এর বঙ্গবন্ধুর খুনি নেতৃত্বদানকারী মেজর জিয়াউর রহমান ও তার দল বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য অপকর্ম, বিশৃঙ্খলা ও স্বাধীনতার ইতিহাস ও জাতির পিতার স্মৃতি মুছে ফেলতে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।’
‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এই জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে ঐক্যজোট করে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য তার ছেলে তারেক রহমান ও জঙ্গিবাদীদের দিয়ে গ্রেনেড হামলা চালায়। সেই হামলায় আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছিলেন। এরপর ২০১৪ সালে এই উগ্রবাদী শক্তিগুলো পেট্রলবোমা মেরে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। সেই ধারাবাহিকতায় বেগম জিয়ার নেতৃত্ব ইসলামিক জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীরা তাদের গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার ভাস্কর্যের একটি হাত ভেঙে দেয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের মধুর ভাস্কর্যের একটি কান ভেঙে দেয়।’
‘তাই বাদী মনে করেন যে, জাতির পিতার হাত ভেঙে এই বিএনপি-জামায়াত, হেফাজত ইসলাম, ইসলামিক শামসনতন্ত্রসহ ইসলামিক সংগঠনগুলো দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করে পাকিস্তান বানানোর পরিকল্পনা করছে। তাই তারা স্বাধীনতার স্থাপতি বঙ্গবন্ধুর নাম দেশের মাটি থেকে মুছে ফেলতে চায়। এমতাবস্থায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০০/৫০৬/১০৯ ও ৪২৭ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করছি, অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।’