বিবিধ

‘মা আপনি ভাত খেয়ে নেন আমি মসজিদে গেলাম’, আর ফিরে আসা হলো না নয়নের

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নিচের ফ্লোরে অসহায়ের মতো হাটছেন বুলবুলি বেগম। সামনে যাকে পাচ্ছেন, তারই হাত-পায়ে ধরছেন আর বলছেন, ‘আমার ছেলের লগে একটু দেখা করায় দেন। হেই বাইচা আছে নাকি মইরা গেছে এইটুক কন। আমার শুধু এই কথাটুক রাখেন আপনারা।’

শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে হাসপাতালের অভ্যর্থনা কক্ষে বসে মা বুলবুলি বেগম বলেন, ‘আমারে এশার নামাজের আগে নয়ন ফোন দিয়া বলে, মা আপনি ভাত খেয়ে ঘুমান। আমি মসজিদে গেলাম। এরপর আর কথা হয়নাই।’

মসজিদে বিস্ফোরণে নয়ন দগ্ধ হয়েছেন এমন খবর তার মাকে ফোন করে বলেন নয়নের এক বন্ধু। নয়নের মা রাতেই লালমনিরহাট থেকে রওনা দিয়ে সন্তানের খোঁজে ঢাকায় আসেন। তবে সন্তানের দেখা পাননি। সন্তান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি। আর মা হাসপাতালের অভ্যর্থনা কক্ষে আহাজারি করছেন।

বুলবুলি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে নয়ন (২৬)। নারায়নগঞ্জের মডেল গ্রুপ গার্মেন্টসের স্যাম্পল সুপারভাইজর হিসেবে কাজ করতো। আমার স্বামী গত ১৫/১৬ বছর ধইরা মানুষিক রোগী। আমার তিন পোলা, এক মাইয়া। সবার বড় হইলো নয়ন। মেয়ের বিয়া দিয়া দিছি। বাকি দুই পোলা ছোট। মাদ্রাসায় পড়ে।’

‘পুরা সংসারের দায়িত্ব আছিল আমার নয়নের উপরে। ১৩ বছর বয়স থিকা ঢাকায় আইসা কাজ করত। ছেলেরে কতো বলছি বিয়া কর, বিয়া কর। ছেলে আমার বিয়া করে নাই। শুনছি হের শরীরের সব নাকি পুইরা গেছে। এখন কেডাই করবো বিয়া আমার পোলারে,’ যোগ করেন বুলবুলি।

রাত ৯ টায় ছেলের বন্ধুদের ফোন পেয়ে রাতের গাড়িতেই ঢাকা আসেন বুলবুলি। অপেক্ষায় আছেন ছেলেকে এক নজর দেখার জন্য। বুলবুলি বলেন,‘ নামাজে যাওয়ার আগে আমারে ফোন দিছিল। আমি খাইছি কিনা জিগাইলো। কইলো আমনে খাইয়া নেন। আমি নামাজ পইড়া আসি৷’

নয়নের বন্ধু বলেন, ‘মসজিদেরই একটা মেসে আমি আর নয়ন থাকতাম। আমি অল্পের জন্য বেচে গেছি। আমি গেছিলাম শপিং এ। নয়ন ফোন দিয়া জিজ্ঞেস করছিলো আমি কখন আসুম৷ বললাম ৯ টা বাজবো৷ বললো, তাইলে নামাজ থেকে ফেরার পথে একবারে খাইয়া ঢুকুমনে। এমনিতে আমরা দুজনে একসাথেই নামাজে যাই। কাল আমি শপিং এ যাওয়াতে আর যাওয়া হয়নাই। নয়তো আমিও আজ বার্ন ইউনিটে ভর্তি থাকতাম।’

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৬ জনে। বাকীদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

নিহতরা হলেন- সাব্বির (২২), দেলোয়ার হোসেন (৪৫), জুয়েল (৭), জামাল (৪০), জুবায়ের (১৪), রিফাত (১৮), হুমায়ুন কবির (৪৩), কাঞ্চন (৩৭), নয়ন (২৭), হুমায়ুন কবির (৭০), মোস্তফা কামাল (৩৫), ইব্রাহিম (৪৩), রিফাত (১৮), জুনায়েদ (১৭), কুদ্দুস বেপারি (৭২) ও রাসেল (৩৪)।

প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩৭ জন গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × four =

Back to top button