ধর্ম ও জীবন

মা-বাবার সম্পদে মেয়ে সন্তানের অধিকার

পাশ্চাত্যের পরিবারতন্ত্রে এবং আমাদের দেশের সেকুলার অনেক মুসলিম পরিবার ইসলামের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ হলো- ইসলাম উত্তরাধিকার আইনে মা-বাবার সম্পত্তিতে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের অর্ধেক দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ।’ (সূরা আন নিসা : ১১)

এটি ইসলামের এমন একটি বিষয় যার পেছনে সুবিচার, ন্যায়পরায়ণতা এবং যুক্তি আছে। এটা মনে রাখতে হবে, ইসলামকে বুঝতে হলে ইসলামের কোনো একটি বিষয়কে অপর বিষয় থেকে আলাদা করে বোঝা সম্ভব নয়। কারণ ইসলামের একটি বিধান ও একটি ব্যবস্থা অপর বিধান ও ব্যবস্থার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই ইসলামকে সামগ্রিকভাবে বুঝতে হবে। ইসলাম থেকে ফায়দা পেতে হলেও শরিয়তের একটি বিধান কার্যকর করে তার থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করা যাবে না। ইসলামের সুফল পেতে হলে ইসলামের সব আকিদা, সব ইবাদত, সব আইন ও সব আখলাক কার্যকর করতে হবে। তবেই তা থেকে এমন সুফল লাভ করা যাবে যেরূপ সুফল রাসূল সা: ও সাহাবাদের যুগে লাভ করা গিয়েছিল।

আরো মনে রাখতে হবে, ইসলাম পুরুষের ঘাড়ের ওপর অনেক দায়িত্ব আরোপ করেছে। তার তুলনায় নারীদের ওপর তেমন কোনো আর্থিক দায়দায়িত্ব আরোপ করেনি। আর এ দায়িত্বের কারণেই ছেলেদেরকে মেয়েদের তুলনায় মা-বাবার সম্পত্তি থেকে দ্বিগুণ অংশ দিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কোনো লোক একটি বিয়েযোগ্য ছেলে ও একটি বিয়েযোগ্য মেয়ে রেখে মারা গেলেন; আর রেখে গেলেন তিন লাখ টাকার সম্পত্তি। এমতাবস্থায় দেখা যায়, মেয়ে এক লাখ টাকা, আর ছেলে দুই লাখ টাকার সম্পত্তি পায়। তাই প্রাথমিক অবস্থায় যে কারো মনে হতে পারে এ ক্ষেত্রে মেয়ের প্রতি ইসলাম অবিচার করেছে। বৈষম্যমূলক বিধান দিয়েছে। একটু সামনে গেলেই দেখা যাবে, মেয়ের প্রতি কোনো অবিচার করা হয়নি, বৈষম্যও করা হয়নি। বরং মেয়ে ছেলের তুলনায় অনেক বেশি পাচ্ছে। ধরুন মেয়েটি বিয়ে করল। এমতাবস্থায় সে তার স্বামীর কাছ থেকে দুই লাখ টাকা দেনমোহর স্বরূপ লাভ করল। বাবার কাছ থেকে পাওয়া এক লাখ আর স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া দুই লাখ টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স নিয়ে সে সংসার জীবন শুরু করল। আর তার ভরণ পোষণের যাবতীয় দায়দায়িত্বও অর্পিত হলো তার স্বামীর ওপর। মোট কথা, তার নিজের আর্থিক কোনো দায়দায়িত্ব ছাড়াই সে তিন লাখ টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স নিয়ে তার সংসার জীবন শুরু করল।

অন্য দিকে, ছেলেটি যখন বিয়ে করতে গেল তখন দেখা গেল, তাকে তার স্ত্রীকে দুই লাখ টাকা দেনমোহর হিসেবে দিতে হচ্ছে। সে তার বাবার কাছ থেকে যে দুই লাখ টাকা পেয়েছিল সেই দুই লাখ টাকাই তার স্ত্রীকে দেনমোহর হিসেবে দিয়ে দিলো। সাথে সাথে স্ত্রীর ভরণ পোষণের যাবতীয় দায়দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নিলো। এভাবে শূন্য পকেটে কোনো ব্যাংক ব্যালেন্সবিহীন অবস্থায় তাকে সংসার জীবন শুরু করতে হলো।

এ উদাহরণে দেখা গেল, মেয়েটি বাবার সম্পত্তি কম পেলেও ইসলামের অন্যান্য বিধানের কারণে ছেলের তুলনায় অনেক বেশি সুযোগ লাভ করেছে। যার কারণে দেখা গেল, ইসলাম তার ওপর কোনো অন্যায় করেনি। তাকে তার বাবার সম্পত্তির অর্ধেক দিয়েছে সত্য, কিন্তু তার সাথে তাকে তার স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহর পাওয়ার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। আবার তার খাওয়া পরা ও ভরণ পোষণের কোনো দায়িত্বই তার নিজের ওপর রাখেনি বরং তার সব দায়দায়িত্ব তার স্বামীর ওপরই অর্পণ করেছে। সুতরাং ইসলাম তার প্রতি কোনো অন্যায় তো করেইনি, বরং তাকে ছেলের তুলনায় অনেক বেশি আর্থিক সুযোগ দিয়েছে।

যারা ইসলামের উত্তরাধিকার আইনের বিরুদ্ধে আভিযোগ করে তারা ইসলামী আইনের কেবল এক দিক দেখেছে; তার অন্য দিক দেখেনি। মেয়েরা যে মা-বাবার সম্পদ থেকে ছেলেদের তুলনায় অর্ধেক পায় কেবল সেটাই তারা দেখেছে। কিন্তু অন্য কারো সম্পদ থেকে যে তারা পুরুষদের সমান বা আরো বেশি সম্পদ পায় তা তারা চোখে দেখেনি। এখানে নিচে তার বিবরণ পেশ করছি।

যেমন কোনো ব্যক্তি যদি মা-বাবা ও তার সন্তান রেখে মারা যান; তখন মা-বাবা উভয়ে সেই সন্তানের সম্পদ থেকে সমান অংশ পান। ইসলাম বাবাকে পুরুষ বলে মায়ের চেয়ে বেশি সম্পদ দেয় না। এ ক্ষেত্রে ইসলাম নারী-পুরুষের অংশে কোনো ধরনের তারতম্য করে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তার মাতা-পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে।’ (সূরা আন নিসা : ১১)

অনুরূপভাবে যদি কোনো নারী তার স্বামী ও একটি কন্যা রেখে মারা যান; এমতাবস্থায় তার স্বামী তার সম্পদের চার ভাগের একভাগ পান। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীগণ যা রেখে গেছে তার অর্ধেক, যদি তাদের কোনো সন্তান না থাকে। আর যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তারা যা রেখে গেছে তা থেকে তোমাদের জন্য চার ভাগের এক ভাগ।’ (সূরা আন নিসা : ১২)

অন্য দিকে তার কন্যা তার সম্পদের অর্ধেক পায়। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক।’ (সূরা আন নিসা : ১১)

এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, নারী-পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণ সম্পদ বেশি পায়। কারণ যে নারী মারা গেছে তার স্বামী তার সম্পদ পেয়েছে মাত্র চার ভাগের এক ভাগ; আর মেয়ে পেয়েছে তার দ্বিগুণ অর্থাৎ অর্ধেক। এ ছাড়া এ মেয়ের ভরণ পোষণের সব দায়িত্ব তার বাবার। মেয়ে তার মায়ের কাছ থেকে যা পায় তার সব কিছু তার সঞ্চয়ে থাকে। তার একটি কানাকড়িও তাকে নিজের জন্য খরচ করতে হয় না।

এভাবে যারা অমুসলিমদের ইসলামের দাওয়াত দেবেন তাদেরকে ইসলামের যেসব বিধান আর আইন কানুন ও ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অমুসলিমদের আপত্তি আছে তা তাদের সামনে যৌক্তিকভাবে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে হবে। তবেই তারা তাদের দাওয়াতের সুফল লাভ করবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + one =

Back to top button