অন্যান্যসম্মান ও স্বীকৃতি

মুঘল সম্রাট আকবরের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজ জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবরের মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে মহান শাসকদের অন্যতম তিনি। মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট তিনি। পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। 

বৈরাম খানের তত্ত্বাবধানে তিনি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৬০ সালে বৈরাম খাঁকে সরিয়ে আকবর নিজে সকল ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু আকবর ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তার চালিয়ে যান। ১৬০৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত উত্তর ভারত তার সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। আকবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেন।

আকবরকে অনেক ঐতিহাসিক মুঘল সম্রাটদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মনে করা হয়। তাকে ‘আকবর দ্য গ্রেট’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর চোট লাগার ফলে তার বাবা মুঘল সম্রাট নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ুনের মৃত্যু হয়। এরপরই মাত্র ১৩ বছর বয়সে অভিষেক হয় আকবরের। তখনো মুঘল সাম্রাজ্যের এতটা বিস্তার হয়নি। কিশোর আকবরের জন্য তাই সময়টা ছিল কঠিন।

আকবর রাজ্যবিস্তারের ব্যাপারে শক্তির পাশাপাশি অন্য কৌশলগুলোর দিকেও লক্ষ্য রাখেন। তিনি ভারতবর্ষের বিখ্যাত যোদ্ধা জাতি রাজপুতদের অনেক রাজাদের সঙ্গে সম্বন্ধ করেন তাদের মেয়েদের বিয়ে করার মধ্য দিয়ে। এভাবে আকবরের রাজ্য সহজভাবে বিস্তার লাভ করে, তার শাসনের ভিত আরও পাকাপোক্ত হয়।

ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন ভারতবর্ষে আকবর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আকবর বুঝতে পারেন, ধর্মগুরুরা নিজেদের স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করেন। তিনি এ-ও উপলব্ধি করেন যে, সব ধর্মই এক স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু তার প্রবর্তিত ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান ছিল খুবই পক্ষপাতদুষ্ট ও অদ্ভুত।

দীনি এলাহি চালুর পর সম্রাটের বিরুদ্ধে কিছু সুবেদার বিদ্রোহ করেন ও তার ছোট ভাই মির্জা হাকিমকে সম্রাট ঘোষণা করেন, যাতে কিছু মাওলানা ও মৌলভীর সমর্থন ছিল। আকবর শক্ত হাতে এই বিদ্রোহ দমন করেন ও তার ধর্মীয় উপলব্ধির বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন।

সম্রাট আকবর বিভিন্ন গ্রন্থ অনুবাদ করান, যার মধ্যে হিন্দু পুরাণ, মহাভারত উল্লেখযোগ্য। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের একটি পরিপূর্ণ শাসননীতি প্রবর্তন করে যান, যা আওরঙ্গজেব পর্যন্ত টিকে ছিল। কিন্তু তার শেষ সময় ভালো কাটেনি।

আকবরের জীবদ্দশায় তার দুই ছেলের মৃত্যু হয়। ছেলে সেলিম তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ২৭ অক্টোবর ১৬০৫, মধ্যরাতে জিল্লে এলাহি জালালুদ্দিন মুহাম্মদ আকবরের মৃত্যু হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 20 =

Back to top button