যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেন যুগের সূচনা
শপথ গ্রহন করেছেন জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস
জো বাইডেন যুগে প্রবেশ করল যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় আজ বুধবার দুপুরে ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক হয়ে গেল জো বাইডেনের। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের কাছে শপথবাক্য পাঠ করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
একই সঙ্গে সহযোগী বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেওরের কাছে শপথবাক্য পড়েন দেশটির প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও এনবিসি এ খবর জানিয়েছে।
শপথের আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছে বিশেষ এই দিনটি উপলক্ষে একটি টুইট করেন বাইডেন। টুইটারে বাইডেন লেখেন, ‘আমেরিকায় এটি একটি নতুন দিন।’
এ ছাড়া শপথ নেওয়ার আগে বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এক টুইট বার্তায় ওবামা লেখেন, ‘অভিনন্দন আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। এখন সময় আপনার।’
এদিকে, বিদায়ী বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পও বাইডেন প্রশাসনের সফলতা কামনা করেছেন। ট্রাম্প আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি জো বাইডেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না। তবে হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, বাইডেনকে লেখা একটি চিঠি রেখে গেছেন ট্রাম্প।
শপথ নেওয়ার জন্য ক্যাপিটল হিলে যাওয়ার আগে স্ত্রী জিল বাইডেনকে সঙ্গে নিয়ে ওয়াশিংটনের একটি চার্চে যান বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে উপাসনার জন্য চার্চে যাওয়া দেশটির বহু পুরোনো রীতি।
ওয়াশিংটনের ক্যাথেড্রাল অব সেন্ট ম্যাথুউ দ্য আপোস্টেলে জো বাইডেন, জিল বাইডেন, কমলা হ্যারিস ও তাঁর স্বামী ডগলাস এমহলফ ছাড়াও অন্য কংগ্রেস নেতারা উপস্থিত হন।
শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন ও জর্জ ডব্লিউ বুশ। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। এ ছাড়া ট্রাম্প না থাকলেও বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও।
বাইডেনের অভিষেক উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিসহ প্রতিটি শহরেই এবার নেওয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে ছিল না গণজমায়েতের সুযোগ। ঘরে বসেই নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা দেখেন মার্কিনিরা। বাইডেনের অভিষেক উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মলের পুরো চত্বর মুড়ে দেওয়া হয় এক লাখ ৯১ হাজার ৫০০ পতাকা দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ও টেরিটরির নির্দেশক ৫৬টি পিলারে করা হয় মনোমুগ্ধকর আলোকসজ্জা।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বাইডেনের শপথ উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় কাজ করেছে ২৫ হাজার সেনাসদস্য। সঙ্গে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার এত কড়াকড়ি থাকলেও বাইডেনের শপথে ওয়াশিংটন ডিসি ছিল জনমানবশূন্য। যদিও অভ্যন্তরীণ হুমকির কোনো ইঙ্গিত নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির অস্থায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার।
সংবাদমাধ্যমকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই অস্থায়ী প্রধান গত সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, বাইডেনের অভিষেক ঘিরে সম্ভাব্য নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের সুরক্ষায় সহায়তা করতে ২৫ হাজারেরও বেশি ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
মিলার জানান, ন্যাশনাল গার্ড সেনাদের প্রত্যেকের ব্যাকগ্রাউন্ড পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। আর এই কাজে এফবিআই সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করেছে।
বিবৃতিতে মিলার বলেছেন, ‘বড় ধরনের নিরাপত্তা ইভেন্টের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা স্বাভাবিক, যদিও আমাদের কাছে অভ্যন্তরীণ হুমকির কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই। তার পরও রাজধানীকে সুরক্ষিত করতে কোনো পাথরই উল্টে দেখতে বাকি রাখছি না আমরা।’
এর আগে গত বছরের ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে জয়ী হন বাইডেন। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী বাইডেন ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। অন্যদিকে ট্রাম্প পান ২৩২টি ইলেকটোরাল ভোট।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের ফল না মেনে তা চ্যালেঞ্জ করায় এবার এই ভোট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে অঙ্গরাজ্যগুলোতে অনুষ্ঠিত এই ভোটের দিকে চোখ রাখছিলেন সবাই। কারণ নির্বাচনের শুরু থেকেই ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করে আসছিলেন ট্রাম্প। এর জন্য তিনি আদালতেও গিয়েছেন, যদিও ভোট জালিয়াতির সব অভিযোগ খারিজ করে দেন আদালত।
গত ৬ জানুয়ারি নতুন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জয় অনুমোদনের দিনে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডব চালান ট্রাম্প সমর্থকেরা। একপর্যায়ে তারা নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ভবনের ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়। মার্কিন কংগ্রেসে এমন সহিংস হামলার ঘটনায় নিন্দার ঝড় ওঠে বিশ্বজুড়ে।
কিন্তু এত কিছুর পরও বিদায় নিতে হলো ট্রাম্পকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউস ছেড়েছেন তিনি। আর শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ডেপুটি বাইডেন।