ক্যাম্পাসজীবন

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি দুই ভাইয়ের সাফল্য

তীর্থ আচার্য্য যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্যের ওয়েইন স্টেইট ইউনির্ভাসিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সাফল্যের সাথে ব্যাচেলর ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। করোনা মহামারির কারণে গত ৫ মে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান করেছে ওয়েইন স্টেইট ইউনির্ভাসিটি। তীর্থর বড় ভাই তন্ময় আচার্য্যও একই  বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রি অর্জন করে।

হবিগঞ্জ শহরের ডাকঘর এলাকায় বেড়ে ওঠা তীর্থ আচার্য্য মাতৃছায়া কেজি স্কুলে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরে ভর্তি হন শাইনিং স্টার কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে। দুই বছর অধ্যয়নের পর  হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি পিতামাতার সাথে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন।

মিশিগান রাজ্যের হ্যামট্রাম্যাক সিটির কোসিয়াস্কো মিডল স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ডেট্রয়েট ক্যাস টেকনিক্যাল হাই স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য এই স্কুল থেকে একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড টপ থ্রি লাভ করেন।

২০১৭ সালে ফুল স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন ওয়েইন স্টেইট ইউনির্ভাসিটিতে। মিশিগানের ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কৃতিত্বের সাথে শেষ করেছেন তার ব্যাচেলর ডিগ্রী। বর্তমানে তিনি আমেরিকান এক্সেল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের আইটি  ইন্টার্ন (শিক্ষানবিশ) হিসেবে কাজ করছেন। তীর্থ মিশিগান রাজ্য থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সুপ্রভাত মিশিগানের সম্পাদক চিন্ময় আচার্য্য ও গৌরি আচার্য্য বেবীর দ্বিতীয় পুত্র।

এদিকে তীর্থর বড় ভাই তন্ময় আচার্য্য একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করে সাফল্যের সাথে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন।

তন্ময় বিগত ২০০৭ সালে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৮৮ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। ২০০৯ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এসএসসিতে ভাল ফলাফলের জন্য সিলেট বিভাগ এবং এবং এইচএসসিতে ঢাকা বিভাগ থেকে থেকে শিক্ষা বৃত্তি লাভ করেন। ২০১০ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে এক বছর লেখাপড়া করেন। বর্তমানে তিনি ওয়েইন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করছেন।

প্রবাস জীবনের প্রথমদিকে পরিবারের আর্থিক কষ্টের কারণে সাপ্তাহিক মজুরির ভিত্তিতে একটি কোম্পানিতে কাজে যোগ দেন। এক সময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স (স্নাতক) কোর্সে ভর্তি হন। পরিবারকে সাহায্য করার জন্য কাজের পাশাপাশি চালিয়ে যান লেখাপড়াও। নির্দিষ্ট সময়ে স্টার মার্ক পেয়ে অনার্স (স্নাতক) কোর্স সম্পন্ন করেন।

এছাড়া তিনি কোর্স সম্পন্নকালে আমেরিকান এক্সেল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের আইটি অ্যাপ্লিকেশন ইঞ্জিনিয়ার এবং হারমান ইন্টারন্যাশনালে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে ইন্টার্ন (শিক্ষানবিশ) করেছেন। তিনি ওয়েইন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন। ওয়েইন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি ছাত্র সংঘের প্রাক্তন সেক্রেটারিও তিনি।

তিনি ওয়েইন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেট্রয়েট মাল্টিকালচারাল অর্গানাইজেশনের একজন প্রাক্তন প্রতিনিধি এবং শো সমন্বয়কারী। মিশিগান টিউটোরিয়াল হোমে একজন অবৈতনিক টিউটর হিসেবেও কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি সফটওয়্যার ভেলিডেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে এলজি ইলেকট্রনিক্সে কর্মরত রয়েছেন।

শিক্ষার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও দক্ষতা, সাফল্য দেখাচ্ছেন হবিগঞ্জের ছেলে তন্ময়। গত বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এলজি ইলেক্ট্রনিক্সের অটো ভেইকেল ইলেকট্রিক্যাল কম্পোনেন্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রদত্ত স্টার রিকগনিশন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। সার্টিফেকেটের পাশাপাশি দেয়া হয়েছে এক হাজার ডলার পুরস্কার। কর্মদক্ষতা, কঠোর পরিশ্রম ও কর্তব্যনিষ্ঠার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর এলজি ইলেক্ট্রনিক্স এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + seven =

Back to top button