রায় শুনতে আদালতে হাজির ওসি মোয়াজ্জেম
ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার রায় আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) ঘোষণা করা হবে। ফেনীতে পুড়িয়ে হত্যার শিকার মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। এরপর তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয় বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস-সামছ জগলুল হোসেন চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। রোমহর্ষক এ মামলায় মোয়াজ্জেমের কী দণ্ড হয় সেই অপেক্ষায় দেশবাসী।
এর আগে গত ২০ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ তারিখ ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এ মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমের অপরাধ দিবালোকের মতো পরিষ্কার। তার সর্বোচ্চ দণ্ড হবে বলে আমরা আশাবাদী।
অন্য দিকে ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, রায় ঘোষণার সময় ওসি মোয়াজ্জেমকে আদালতে হাজির করা হবে। তার উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করা হবে। ওসি মোয়াজ্জেম এ মামলায় খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ফারুক আহম্মেদ।
এই মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্চ মাসের ২৭ তারিখ সকাল ১০টার দিকে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রী নুসরাতকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। এ ঘটনায় অভিযোগ করার জন্য থানায় গেলে বিচারের বদলে তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দিয়ে নুসরাতকে নানাভাবে হেনস্তা করেন সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম।
এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলাটি তদন্ত করার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।
এরপর মে মাসের ২৭ তারিখে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।’ এরপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
জুন মাসের ১৬ তারিখে দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরদিন ১৭ জুন তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল। সেই থেকে মোয়াজ্জেম জেলহাজতে আছেন। জুলাইয়ের ১৭ তারিখে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ৩১ জুলাই মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১২ জন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্যে নুসরাতের মা, ভাই ও দুই সহপাঠী সাক্ষ্য দেন।