ফুটবল

রোনালদের গোলেই ম্যানইউ’য়ের অবিস্মরণীয় জয়

একেবারে অন্তিম মুহূর্তে গিয়ে পার্থক্য গড়ে দিলেন অনেক সাফল্যের নায়ক ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। উজ্জীবিত ভিয়ারিয়ালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথম জয়ের দেখা পেল উলে গুনার সুলশারের দলটি। নইলে মৌসুমে দারুণ শুরুর পর হঠাৎ কক্ষচ্যুত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড শিবিরে জেগেছিল আরেকটি হোঁচটের শঙ্কা।

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ‘এফ’ গ্রুপের ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছে স্বাগতিকরা। পাকো আলকাসেরের গোলে ইউনাইটেড পিছিয়ে পড়ার পর সমতা টানেন আলেক্স তেলেস। আর শেষ সময়ে জয়সূচক গোলটি করেন রোনালদো।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড গোলদাতাকে দলে পেয়েও প্রতিযোগিতাটিতে শুরুটা খারাপ হয়েছিল ইউনাইটেডের। এ মাসের মাঝামাঝি তারা ইয়াং বয়েজের বিপক্ষে শুরুতে এগিয়ে গিয়েও হেরেছিল ২-১ গোলে।

এরপর ঘরোয়া লিগে ফিরে একটি ম্যাচ জিতলেও গেল সপ্তাহটি ভীষণ খারাপ কাটে ম্যানচেস্টারের দলটির। ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের বিপক্ষে হেরে লিগ কাপ থেকে ছিটকে পড়ার পর প্রিমিয়ার লিগে হেরে যায় অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে, এবং এই দুটি পরাজয়ই ঘরের মাঠে।

অবশেষে মিলল জয়ের দেখা এবং সেটি সত্যিই শ্বাসরুদ্ধকর। প্রথমার্ধের পুরোটা সময়ই আক্রমণে আধিপত্য ছিলে স্প্যানিশ দলটির। দ্বিতীয়ার্ধে জমে ওঠে লড়াই। বল দখলে একটু এগিয়ে থাকা ইউনাইটেড ম্যাচে মোট ১৪টি শট নেয়, যার সাতটি ছিল লক্ষ্যে। আর ভিয়ারিয়ালের ১৫ শটের সাতটি ছিল লক্ষ্যে।

দু’দলের শক্তির বিবেচনায় ম্যাচের আগে কাগজে-কলমের হিসেবটা যাই থাকুক না কেন, মাঠের লড়াই শুরু হতেই আক্রমণে প্রভাব বিস্তার করে ভিয়ারিয়াল। প্রথম ১০ মিনিটে দুটি এবং সপ্তদশ মিনিটে আরেকটি নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করে তারা।

ইউনাইটেডের সীমানায় প্রথম ষষ্ঠ মিনিটে ভীতি ছড়ায় তারা। ডিফেন্ডারদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়লেও গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে বসেন আরনট ডানজুমা। চার মিনিট পর ডাচ এই উইঙ্গারের শট ঝাঁপিয়ে ফেরান দাভিদ দে হেয়া।

সপ্তদশ মিনিটে আবারও ইউনাইটেড শিবিরে ডানজুমার হানা। ডিফেন্ডার দিয়োগো দালোতকে ফাঁকি দিয়ে ডি-বক্সে ক্রস বাড়ান তিনি। আর পাকো আলকাসেরের লাফিয়ে নেওয়া হেড লাফিয়ে এক হাত দিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান ইউনাইটেড গোলরক্ষক। খানিক পর আরেকটি বিপজ্জনক আক্রমণে আলকাসেরের শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে গেলে আবারও বেঁচে যায় স্বাগতিকরা।

প্রথমার্ধে বল দখলে ইউনাইটেড অনেক এগিয়ে থাকলেও তাদের আক্রমণে ছিল না কোনো ধার। ৩৭তম মিনিটে একটি হাফ-চান্স অবশ্য পায় তারা; কিন্তু নিজের ছায় হয়ে থাকা রোনালদো দুরূহ কোণ থেকে ঠিকমতো বলে পা লাগাতে পারেননি। পাঁচ মিনিট পর এগিয়েও যেতে পারতো তারা; তাদের একটি শট ঠেকাতে গিয়ে নিজেদের জালে পাঠাতে বসেছিলেন ডিফেন্ডার আলবের্তো মরেনো, পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায় বল।
দ্বিতীয়ার্ধের অষ্টম মিনিটে অবশেষে ‘ডেডলক’ ভাঙে ভিয়ারিয়াল। বাঁ থেকে ডানজুমার গোলমুখে বাড়ানো ক্রসে পা বাড়িয়ে টোকায় বল জালে পাঠান আলকাসের।

এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ অবশ্য স্থায়ী হয়নি তাদের। সাত মিনিট পরই দুর্দান্ত এক গোলে সমতা টানেন তেলেস। ডান দিক থেকে ব্রুনো ফের্নান্দেসের ক্রস ডি-বক্সের বাইরে পেয়ে বাঁ পায়ের জোরালো ভলি করেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার। বক্সে প্রতিপক্ষের অনেক খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়ায়।

আক্রমণের ধার বাড়াতে ৭৫তম মিনিটে একসঙ্গে জোড়া পরিবর্তন করেন সুলশার। বদলি নামার তিন মিনিট পরই দারুণ সুযোগ পান এদিনসন কাভানি, কিন্তু ছয় গজ বক্সের মুখ থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হেড করেন তিনি।

নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়া ম্যাচের পাঁচ মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে উল্লাসে ভাসে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। বাঁ দিক থেকে ফ্রেদের দারুণ ক্রসে হেডে সামনে জেসে লিনগার্ডের পায়ে বল বাড়ান রোনালদো। ভিড়ের মধ্যে ছোট টোকায় ফেরত পাঠান লিনগার্ড আর দুরূহ কোণ থেকে জোরালো শটে গোলটি করেন পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদোর গোল সংখ্যা বেড়ে হলো ১৩৬টি।

দিনের প্রথম ম্যাচে ইয়াং বয়েজকে ১-০ গোলে হারানো আতালান্তা দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে আছে গ্রুপের শীর্ষে।

ইয়াং বয়েজ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পয়েন্ট সমান ৩ করে। চার নম্বরে ভিয়ারিয়ালের পয়েন্ট ১।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + 1 =

Back to top button