বাসায় বসে আছি। টিভি অন করা। রিমোটের বাটন বদল হচ্ছে ঘন ঘন এ চ্যানেল থেকে ওই চ্যানেল। খবর দেখছি। টিভি স্ক্রলগুলোর চোখেও দৃষ্টি। কোথাও কোনো ব্রেকিং নিউজ দেখা যায় কিনা?
হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে। দরজা খুলতেই চারতলার মাওলা সাহেব। কি ব্যাপার কেমন আছেন? বললাম ভালো।
আপনি? কোথায় ভালো। আবার লকডাউন। কীভাবে কী করবো বুঝতে পারছি না। চলুন লকডাউন দেখে আসি। বললাম-এ কি বলছেন? বাইরে গেলে যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন। তাছাড়া লকডাউন দেয়া হয়েছে ঘরে থাকার জন্য। বিনা প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া অপরাধ।
এতে শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এবার মাওলা সাহেব বললেন, রাখেন আপনার শাস্তি। আমি চললাম। লকডাউন দেখে আসি। যান, লকডাউন দেখে আসুন। তবে, লকডাউন লাল না নীল কিংবা কেমন সেটা জানিয়ে যাবেন কিন্তু। এবার মাওলা সাহেব ক্ষেপে গেলেন। বললেন, আমার সঙ্গে কি ঠাট্টা করছেন? ঠাট্টা কেন করবো? লকডাউন কেমন দেখতে তা জানতে চাওয়া যদি ঠাট্টা মনে করেন তাহলে আমার বলার কিছু নেই। মুখ গোমরা করে মাওলা সাহেব চলে গেলেন।
এবার আমার মনেও প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে আসলে লকডাউন কতটুকু মানা হচ্ছে? প্রশাসন কতটুকু কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে? ভাবতে ভাবতে বাসার নিচে নামলাম। এরপর একটু এগিয়ে দেখলাম মহল্লার রাস্তার মাথার চা দোকানটি খোলা। সেখানে বেশ ক’জন বসে চা খাচ্ছেন। আড্ডা দিচ্ছেন? কিন্তু সার্টার অর্ধেক লাগানো। চা দোকানি আনিসকে জিজ্ঞেস করলাম সার্টার অর্ধেক নামানো কেন?
আরে ভাই বইলেন না সকাল থেকে পুলিশ খুব জ্বালাইতাছে। কিছুক্ষণ পর পর এদিকে আইতাছে। দূর থেইক্কা পুলিশের গাড়ি দেখলেই সাটার নামিয়ে ফেলি।
আবার গাড়ি চলে গেলে সাটার খুলে দেই। অর্ধেক নামাইয়া রাখলে সুবিধা ভাইজান। ফট করে লাগানো যায়। এবার প্রসঙ্গ বদলে বললেন, চা খাইবেন ভাইজান? না, চা খাবো না। এমনিতে এসেছিলাম। চা দোকানি আনিস বললো, ভাইজান দেইখেন এক-দুইদিন একটু কড়াকড়ি থাকবো।
এরপর আগের মতো অইয়া যাইবো। মহল্লার বড় রাস্তায় যাইয়া দেখেন মানুষের কেল্লা মানুষে খায়। সবাই লকডাউন দেখতে বের হইছে। তয়, মেইন সড়কে কড়াকড়ি চলতাছে ভাইজান। সাবধানে থাইকেন।