আন্তর্জাতিক

সময়ের সাথে বদলে যাচ্ছে সৌদি নারীসমাজ

কালের বিবর্তনে বদলে যাচ্ছে সৌদি আরবের নারীসমাজ। বিশ্লেষকরা বলছেন, একের পর এক দেশটির নারীদের জীবন-যাপনে পরিবর্তন আনছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান।
এরই মধ্যে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি প্রদান, ফুটবল মাঠে বসে খেলা দেখার অধিকার এবং স্কুল-কলেজের মেয়েদের মুঠোফোন ব্যবহার করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেওয়া হয়েছে নারীদের সরাসরি সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুযোগ।
সৌদি নারীরা বলছেন, দুই বছর আগেও সৌদি নারীদের এসব অধিকারের কথা ভাবা ছিল স্বপ্ন। সৌদি বাদশাহ সালমান দুই বছর আগে ভাতিজা মুহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে তার উত্তরসূরি করেন ছেলে মুহাম্মদ বিন সালমানকে। এরপর থেকে সৌদি আরবের সর্বত্র দিনবদলের হাওয়া বইতে শুরু করে রক্ষণশীল দেশ বলে পরিচিত সৌদি আরবে।
দেশটিতে অর্থনৈতিক সংস্কারের নামে তেলভিত্তিক অর্থনীতির নির্ভরতা কমানো, পর্যটন ও শিল্পায়নে গুরুত্ব দেওয়া, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি আর নারীদের অধিকারের বিষয়ে ধাপে ধাপে অনেকটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এর মূল কৃতিত্ব তরুণ ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের। বাবা বাদশাহ সালমান সিংহাসনে থাকলেও কার্যত অনেক ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করছেন এই যুবরাজ। গাড়ি চালানোর অধিকার পেয়েছেন সৌদি নারীরা।
ধাপে ধাপে অধিকার পাওয়া সৌদি নারীরা এবার দেশটির সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া শুরু করেছেন। কয়েক দিন আগে সেনাবাহিনীতে নারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আপাতত মক্কা, মদিনা, রিয়াদ ও আল-কাসিম প্রদেশে সৈনিক পদে নিয়োগ পাচ্ছেন নারীরা।
মাত্র চার বছর আগে সৌদি নারীরা ভোটাধিকার ও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার পান। আগামী সপ্তাহ থেকে সৌদি নারীরা নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খোলার অধিকার পাচ্ছেন। এ ছাড়া সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে বিনোদন পার্ক নির্মাণ করেছে দেশটির সরকার। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবসা করার অনুমতি পেয়েছেন সৌদি নারীরা।
সৌদি নারীদের অধিকার আন্দোলনের নেতা মানাল আর শরিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পশ্চিমা বিশে^র মতো সৌদি নারীরাও এগিয়ে যাবে। পুরুষের পাশাপাশি তারাও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নেবে। নারীরা সৌদি অর্থনীতির চাকাকে সবল করবে। সামাজিক অবস্থান মজবুত করবে তারা।’
বদলে যাওয়া সৌদি আরব সম্পর্কে অনেকে বলছেন, প্রায় ৯ দশক ধরে সৌদি আরবের ক্ষমতায় থাকা বর্তমান রাজবংশের কেউই এসব বিষয় নিয়ে ভাবেননি। শুধু নারী অধিকারের বিষয়ে নয়, অন্য কোনো বিষয়েও সংস্কারের পথে হাঁটেননি তারা। এর কারণ হচ্ছে, দেশটির রক্ষণশীল সমাজের বিরুদ্ধে যেতে চাননি কেউ। সেখানে মুহাম্মদ বিন সালমান অনেকটা নিজের মতো করে নারীদের বদলে যাওয়ার পথ দেখিয়েছেন। এভাবে নতুন করে দিনবদলের চেষ্টা দেশটির ভিশন-২০৩০-এর অংশ। এটাকে সৌদি সরকার নাম দিয়েছে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা।
(সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন/মোস্তফা কাজল, সৌদি আরব থেকে)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × three =

Back to top button