সামাজিক দূরত্ব মেনে মসজিদে জুমা নামাজ আদায়
শর্ত সাপেক্ষে মসজিদ খোলার প্রথম জুমায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আজ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ সারাদেশের মসজিদে মুসল্লিরা জুমার নামাজ আদায় করেছেন।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার বিগত চার জুমা সাধারণ মুসল্লিদের জন্য মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ রেখেছিল। সীমিত সংখ্যক মুসল্লি নিয়েই জামাত আদায় করা হতো। সরকার বৃহস্পতিবার জোহর নামাজ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্ত সাপেক্ষে মসজিদ উন্মুক্ত করে দেয়।
আজ মসজিদগুলোর প্রবেশ পথে এবং অজুখানায় সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও জীবাণুনাশক বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সকাল থেকেই মসজিদ স্যাভলন দিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। বিভিন্ন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে আসবেন।
দুপুর ১২টার পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের গেইট খুলে দেয়া হয়। মসজিদের উত্তর গেইটে জীবাণুনাশক বুথ স্থাপন করা হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লাইন দিয়ে এক এক জন মুসল্লি বুথের ভেতর দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করেন। এক কাতার পর পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। অধিকাংশ মুসল্লিই মুখে মাস্ক পড়ে মসজিদে যান। মসজিদের পূর্ব সাহানেও মুসল্লিদের কাতার ভরে যায়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় মসজিদে সংকুলান না হওয়ায় বিভিন্ন মসজিদের বাইরে রাস্তার ওপর মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেছেন।
আজ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে খুৎবাহ পূর্ব বয়ানে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহিবুল্লাহ হিল বাকি নদভী বলেন, আলেম ওলামাদের অনুরোধে সরকার মসজিদ খুলে দিয়েছে। মসজিদ খুলে দেয়া মানেই ভয়ঙ্কর মহামারী করোনাভাইরাস চলে যায়নি। প্রত্যেক মুসল্লিকে নিজ নিজ উদ্যোগেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে আসতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলতে হবে। আপনার জন্য কেউ করোনা সংক্রমণের মুখোমুখি যাতে না হন সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পেশ ইমাম বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারী থেকে রেহাই পেতে বেশি বেশি তওবা ইস্তিগফার করতে হবে। মাহে রমজানে বেশি বেশি দান-সদকা আদায় করতে হবে। সমাজের অসহায় গরীব মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। যাকাতের অর্থ গরীব অসহায় পরিবারের মাঝে সঠিকভাবে বন্টন করতে হবে।
ইমাম বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কোনো মু’মিনের উচিৎ নয়, এমন মুসিবতের মধ্যে ফেলে দেয়া যে মুসিবত সে সহ্য করতে পারবে না। তিনি বলেন, আপনার জন্য অপর ভাই যাতে করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত না হন সে জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন মসজিদের বয়ানে মাহে রমজানে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব সর্ম্পকে ব্যাপক আলোচনা করা হয়।
রাজধানীর ইসলামবাগ বড় জামে মসজিদে জুমা পূর্ব বয়ানে খতীব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি চার জুমা পর মসজিদে আসার সুযোগ করে দেয়ায় মহান আল্লাহপাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করে বলেন, বালা-মুসিবত আল্লাহই দেন এবং তিনিই তুলে নিবেন। বাকি সারাজীবন আমরা নিয়মিতভাবেই যাতে মসজিদে আসতে পারি আল্লাহপাক সে সুযোগ করেদিন। আমিন! খতীব স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ অনুসরণ করেই মসজিদে আসার গুরুত্বারোপ করেন। দক্ষিণ মুগদা ব্যাংক কলোণী রসুলবাগ জামে মসজিদের খতীব আল্লামা আব্দুল গনি বলেন, মাহে রমজান রহমত, বরকত কুরআন নাযিলের মাস। এই রহমতের মাসে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে হেফাজতের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।
তিনি স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে মসজিদে আসার অনুরোধ জানান। তিনি মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার কারণে কেউ মহামারী সংক্রমণে আক্রান্ত হলে তার দায় আপনাকেই নিতে হবে। এমন ঝুঁকিতে কেউ যাতে না পড়েন সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। চকবাজার শাহী মসজিদেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জুমার নামাজ আদায় করা হয়। মসজিদের খতীব মাওলানা মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ভয়াবহ মহামারী থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহপাকের রহমতের বিকল্প নেই। তিনি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সকলকে মসজিদে আসার অনুরোধ জানান।