সোশ্যাল মিডিয়ায় ২০২৪ সালের ভাইরাল যতো কথা
‘স্বজন হারানোর বেদনা’ নাকি ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ -কোনটি ছিলো সেরা?
২০২৪ সাল ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় নানা কারণে আলোচিত। আর আলোচিত এ বছরকে আরও আলোচনায় রেখেছিল নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া বেশকিছু কন্টেন্ট। এসবের কোনোটা রাজনীতিবিদের বক্তব্য, তো কোনোটা বিনোদন অঙ্গনের চটকদার ডায়ালগ, কোনোটা আবার টকশোতে ভাইরাল হওয়া মন্তব্য। বছরজুড়েই মানুষের মাঝে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল এসব ডায়ালগ। সাধারণ মানুষের মুখে মুখে যেমন শোনা গেছে, তেমনি ফেসবুকের টাইমলাইনেও বছরজুড়ে ছিল এসব ডায়ালগের চর্চা।
আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ১০টি সেইরকম ফানি ডায়ালগ। এগুলো এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, কোনো প্রেক্ষাপটের সাথে ভাইরাল কোন ডায়ালগ কাকতালীয়ভাবে মিলে গেলেই লোকজন মুখেমুখে চর্চা করেছে সেসব ডায়ালগ। আসুন একঝলকে দেখে নেয়া যাক ২০২৪ সালে ভাইরাল হওয়া ১০টি সংলাপ-
প্রথমেই শেখ হাসিনার ভাইরাল সেই ডায়ালগ। ছাত্রজনতার আন্দোলন চলার সময় থেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন বক্তব্য নেটপাড়ায় ভাইরাল হতে শুরু করে। আন্দোলনের তোপের মুখে তিনি যখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান, তখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ ডায়ালগটি।
এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন তোলে মাওলানা মোস্তাক ফয়েজীর একটি ডায়ালগ। একটি ওয়াজ মাহফিলে বয়ান দিচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ সে মাহফিল ছেড়ে একজন উঠে চলে যেতে চাইলে মাওলানা মোস্তাক ফয়েজী তার বয়ানের মাঝেই বলেন, ‘মুরুব্বি, উহু উহু’। তার ‘এই সোনামণি, বসো, উহু উহু’ ডায়ালগটিও ব্যাপক ভাইরাল হয় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
তাছাড়া ওবায়দুল কাদেরের ‘পালাব না, কোথায় পালাবো’ ডায়ালগও বেশ ভাইরাল হয় এবছর। নেটিজেনদের সৌজন্যে তার আরও কিছু ভাইরাল ডায়ালগ হলো ‘সি হেজ মেইড আস,’ ‘একটু অপেক্ষা করা যায় না’, ‘একটু বলবো না একটা শব্দও বলবো না,’ ‘মাসুদ তুমি কি কোনো দিনই ভালো হবে না’ ইত্যাদি।
হাউন আংকেল ডায়ালগটিও ভাইরাল হয় এবছরই। একটি সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় বিনোদন জগতের প্রিয়মুখ সিমরিন লুবাবার করা একটি মন্তব্যও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়। ডিবি প্রধান হারুণকে তিনি ‘হাউন’ উচ্চারন করায় নেটপাড়ায় বেশ ট্রলের সম্মুখীন হন এ শিশুতারকা। অবশ্য ২০২৩ সালে তার ‘কেন্দে দিয়েছি’ ডায়ালগটিও নেটপাড়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছিল।
এছাড়া কোটা আন্দোলনের সময় ভাইরাল হন শিক্ষার্থী ফারজানা সিঁথি। তার বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি বলার ধরন বেশ বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছিল নেটিজেনদের। এক সেনার সঙ্গে তার বাক-বিতন্ডার ভিডিও নেটপাড়ায় ভাইরাল হয়। সেখানেই তিনি ঐ সেনাকে ’এই ওয়েট ওয়েট, ইটস মাই টার্ন’ বলেন। এ ডায়ালগ টিকটকাররাও তাদের ভিডিও তৈরিতে বেশ লুফে নেন চলতি বছর।
এবছর গ্রামের এক শিশুর ‘প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও’ ডায়ালগটিও ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়। এ বক্তব্য এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, অনেকে এ ডায়ালগকে ডিজে গান বানিয়ে নেচে ভিডিও তৈরি করেছিলেন।
টকশোর ভিডিও ক্লিপও এবছরই নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়, যেখানে উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরী ও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাকবিতন্ডতায় জড়িয়ে পড়েন। এক সময় বিচারপতি মানিক দীপ্তির উদ্দেশে বলেন, আপনি কথা বলবেন না। প্রতি উত্তরে দীপ্তি বলেন, আপনি প্লিজ উত্তেজিত হবেন না।
নাইস অ্যান্ড এট্রাক্টিভ। এবছর সোশ্যাল মিডিয়ায় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের ভাইরাল ডায়ালগ ছিল এটি। দেশের ২২তম এ রাষ্ট্রপতি ফেসবুকে সাংবাদিক ও গায়িকা নবণীতা চৌধুরীর একটি ছবির নিচে নাইস অ্যান্ড এট্রাক্টিভ কমেন্টটি করেন। এরপর থেকেই দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ছবির কমেন্ট বক্সে, কথাবার্তার মাঝপথে ব্যবহার করতে শুরু করে রাষ্ট্রপতির এ ভাইরাল ডায়ালগ।
এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বেশকিছু ভিডিও নেটপাড়ায় ভাইরাল হয় এবছরই। এসব ভাইরাল ভিডিওর বেশিরভাগ ডায়ালগই টিকটকাররা লুফে নেন তাদের ভিডিও তৈরি করার জন্য, যার মধ্যে অন্যতম ‘এই মেয়ে চুপ করো’। ‘এই যে মহিলা এখন মুখটা বন্ধ কেন’ এ ডায়ালগটিও লোকমুখে বেশ জনপ্রিয় ছিল।
সবশেষে বলা যায়- খুনির একটি স্বীকারোক্তিমূলক ডায়ালগও বেশ ভাইরাল হয় এবছর। চট্টগ্রামে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার মো. হাসানের হত্যামামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে শ্বশুরকে খুন করেন পুত্রবধূ আনারকলি। সংবাদমাধ্যমে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আনারকলি বলেছিলেন, ‘আমি দোষী, আমি কি আপনাদের একবারও বলেছি আমি নির্দোষ? তখন আমার আবেগ কাজ করেছে, বিবেক কাজ করেনি।’
এছাড়া ‘নাটক কম করো পিও’, ‘একটু নিচে পিও’, ‘সিঙ্গেল সিঙ্গেল আমি সিঙ্গেল’ ও শেখ হাসিনার ‘স্বজন হারানোর বেদনা’র মতো আরও অনেক ডায়ালগই সাধারন মানুষের মুখে মুখে ছিল ২০২৪ সালজুড়ে।