জাতীয়

স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই নৌযানগুলোতে ব্যাপক ভিড়

সবেমাত্র দেশ থেকে সাধারণ ছুটি তুলে দিয়েছে সরকার। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই সবাই হচ্ছে রাজধানীমুখী। নৌযানগুলো পুরোদমে চলা শুরু করেছে গতকাল থেকে।

সরকারের পক্ষ থেকে বারবার স্বাস্থ্যবিধি মানার জোর তাগিদ থাকলেও সেটা তোয়াক্কা করছে না কেউই। উপরন্তু নৌযানগুলোতে দেখা গেছে ব্যাপক ভিড়। সেখানে যেন নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই।

যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে। এতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

পাটুরিয়া

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ফেরি ও লঞ্চে ঈদের ছুটি শেষে মানুষের ঢল নেমেছে। এই রুটের নৌযানে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। প্রতিটি লঞ্চে ভিড় করে যাত্রীদের উঠতে দেখা গেছে। তাদের অনেককে মাস্কও ব্যবহার করতেও দেখা যায়নি।

যাত্রীদের তদারকি করার জন্য লঞ্চঘাট এলাকায় কেউ নেই। সামাজিক দূরত্ব নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র পুরোটাই উল্টো। প্রতিটি লঞ্চে যাত্রীদের গাদাগাদি করে অবস্থান করতে দেখা গেছে। ঘাটে সামাজিক নিরাপত্তা ও সচেতনতামূলক বিলবোর্ড কিংবা ব্যানারও নেই।

পাটুরিয়া ঘাটে কর্মরত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) ফরিদুল ইসলাম জানান, লঞ্চে সামাজিক দূরত্বে মেনে চলাচল করাতে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। যাত্রীরা সামাজিক দূরত্ব ভেঙে ভিড় করে লঞ্চে উঠে পড়ছেন। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজীর হাট রুটে ৩৩টি লঞ্চ চলাচল করছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম জিল্লুর রহমান জানান, লকডাউন উঠে যাওয়ায় ব্যাপকসংখ্যক দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস পারাপার হচ্ছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ১৫টি ফেরি চলাচল করছে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটের লঞ্চের মালিক কামরুল হাসান কিরন জানান, তারা সামাজিক দূরত্ব মানার চেষ্টা করলেও যাত্রীদের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঘাট এলাকায় দেখা গেলো, তাদের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব মেনে যাত্রী বহনের কোনো তদারকি কমিটি নেই। লঞ্চ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সরকারের উদ্যোগকে সহায়তা করার কোনো প্রস্তুতিই নেই।

দৌলতদিয়া

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে লঞ্চ চালুর পর থেকেই যাত্রীরা সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে পারাপার হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও উদাসীন রয়েছে। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে নৌপুলিশের দুজন করে কনস্টেবল কর্তব্যরত থাকলেও তাদের কোনো তৎপরতা নেই। লঞ্চের স্টাফ ও যাত্রীদের অনেকেরই মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস নেই।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের লঞ্চ মালিক সমিতির সুপারভাইজার মিলন হোসেন বলেন, এই রুটে বর্তমানে ১৬টি লঞ্চ চলাচল করছে। যাত্রীদের জন্য ঘাটে জীবাণুনাশক স্প্রে, সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মুন্নাফ বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী পারাপারের জন্য লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। লঞ্চে গাদাগাদি করে যাত্রী ওঠা ঠেকাতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।

বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা আফতাব হোসেন জানান, করোনার সংক্রমণ রোধে যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য হ্যান্ডমাইক দিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছি। কোনও লঞ্চ যদি অতিরিক্ত যাত্রী ওঠায় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিমুলিয়া

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে মঙ্গলবার সকাল থেকে ১৪টি ফেরি চলছে। মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যান ও যাত্রীদের চাপ নেই। তাই ফেরির জন্য কোনো যানকে ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। লঞ্চ, স্পিডবোট চালু হওয়ায় ফেরিতে যাত্রীদের ভিড় নেই। গণপরিবহন চালু হওয়ায় যাত্রীরা বাসে করে শিমুলিয়া ঘাটে এসে লঞ্চ ও স্পিডবোটে দক্ষিণবঙ্গের দিকে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। অন্যদিকে, কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে ছেড়ে আসা ফেরিগুলোতেও যাত্রীদের তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। কারণ, লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রীরা শিমুলিয়া ঘাটে আসছেন।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক সাফায়েত আহম্মেদ জানান, দক্ষিণবঙ্গের দিকে যাত্রীদের কোনও চাপ নেই। ঘাট ফাঁকা। সারাদিনে মাত্র হাজারখানেক যান পারাপার হয়েছে।

এদিকে, স্পিডবোটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীদের পারাপার করা হচ্ছে বলে দাবি করেন ঘাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ঘাটে দক্ষিণবঙ্গমুখী যাত্রী তেমন নেই। যাত্রীদের হাতে জীবাণুনাশক দেয়া হচ্ছে। ২০ জনের বোটে ১০ জন বসানো হচ্ছে।

মাঝিরঘাট

শরীয়তপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে মাঝিরঘাট-মাওয়া নৌপথের যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অনেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে মাস্ক ছাড়াই যাতায়াত করছেন। মঙ্গলবার (২ জুন) সকালে সরজমিনে দেখা যায়, জাজিরা উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী মাঝিরঘাটে যাত্রী আগের তুলনায় অনেক কম। লঞ্চ ও স্পিডবোটে ঘাটের লোকজন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করলেও যাত্রীরা অনেকেই তা মানছেন না।

লঞ্চে ওঠার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করার ব্যবস্থা রেখেছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি লঞ্চ ও স্পিডবোটে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। লঞ্চের ভাড়া আগে ৩০ টাকা থাকলেও বর্তমানে ৫০ টাকা করা হয়েছে। স্পিডবোটের ভাড়া ১৫০ টাকার জায়গায় এখন ২০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। স্পিডবোটে চার জনের সিটে এখন তিনজন যাত্রী নেয়া হচ্ছে।

হীরা মুক্তা নামের এক যাত্রী বলেন, ভাড়া ৫০ টাকা বাড়ানো হলেও যাত্রীদের এক ফুটেরও কম দূরত্বে বসতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

মাঝিরঘাটের ইজারাদার মোকলেছ মাদবর বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য আমরা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রেখেছি। যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লঞ্চে ওঠার কথা বলছি। কিন্তু যাত্রীদের কেউ কেউ এসব মানতে চান না।

ভোলা

ভোলার বিভিন্ন টার্মিনাল থেকে ঢাকা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুরগামী লঞ্চগুলোতে ঈদের সময়ের মতো ভিড় দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। শুধুমাত্র ইলিশা-ঢাকা রুটের চেয়ার বসানো দুটি ডে সার্ভিসে কিছুটা মানা হয়। অধিকাংশ যাত্রী সতর্কতা অবলম্বন না করায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লঞ্চে আগে ওঠা নিয়ে ছিল এক ধরনের প্রতিযোগিতা। জেলার সাতটি উপজেলা থেকে ঢাকা রুটে চলাচল করছে প্রায় ৩০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ।

যাত্রীদের সুরক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে যাতায়াত করার অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করছিল পুলিশ। তার পরও যাত্রীদের মাঝে সতর্কতা নেই। সরকারি নিয়ম-নীতি ও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না দৌলতখান লঞ্চ টার্মিনালে থামা লঞ্চগুলো। করোনার আতঙ্ক তোয়াক্কা না করে আগের মতোই যাত্রী নেওয়া হচ্ছে সেখানে। এজন্য মঙ্গলবার পুলিশের তদারকিতে নির্ধারিত সময়ের (সন্ধ্যা ৭ টা থেকে ৮টা) আগে দুপুরের মধ্যেই লঞ্চগুলো ভোলা ঘাট ছেড়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র ভোলা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাত্রী পরিবহন করতে হবে। কেউ না মানলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − two =

Back to top button