Lead Newsশিক্ষাঙ্গন

হাত নয়, পায়ের জোরেই বিউটির বিউটিফুল রেজাল্ট

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে কোনো বাধা নয় তা আবারও প্রমাণ করলেন জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার শিবপুর গ্রামের অদম্য মেধাবী প্রতিবন্ধী বিউটি খাতুন। পার্শ্ববর্তী দুপচাঁচিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৪.৬৭ পেয়েছেন তিনি।
জাগোবিডিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইতিপূর্বে বিউটি খাতুন পা দিয়ে লিখে প্রাথমিক শিক্ষা সমপানী এবং জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রতিটি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। প্রাথমিক ও জেএসসিতে বৃত্তিও লাভ করেন।
জীবনের সব বাধা পেরিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চান বিউটি খাতুন। তার এমন সাফল্য রীতিমতো ক্ষেতলাল উপজেলাসহ জয়পুরহাটবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
বিউটি খাতুন উপজেলার শিবপুর গ্রামের দরিদ্র বায়োজিদ হোসেন ও রহিমা বেগমের মেয়ে। বাবার অভাবের সংসারে দুই সন্তানের মধ্যে বিউটি আকতার ছোট। বড় ছেলে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর করেছেন।
বিউটি খাতুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক শাখায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চান। তার পছন্দের তালিকায় প্রথমে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পেলেও খুশি হবেন। ভবিষ্যতে তিনি পড়ালেখা শেষ করে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চান। তিনি বলেন, লেখাপড়ার পেছনে তার মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। মা তার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন।
বাবা বায়োজিদ হোসেন বলেন, মেয়ে যখন দুটি হাত ছাড়াই জন্ম নিল, তখন তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। বিউটি লেখাপড়া করতে পারবে, এটা ভাবনাতেই ছিল না। শুধু চিন্তা হতো, মেয়েটা একা একা তার প্রয়োজনীয় কাজ সামলাতে পারবে তো?
মা রহিমা বেগম বলেন, বিউটির পড়ার বিষয়ে কোনো চিন্তা ছিল না। কারণ, পড়তে পারলেও লেখাটাই ছিল বিউটির জন্য প্রধান সমস্যা।
তিনি বলেন, প্রথমের দিকে তিনি মেয়েকে পা দিয়ে লেখা শেখানোর চেষ্টা করাতেন। ঘরের মেঝেতে বসিয়ে তার ডান পায়ের আঙুলের ফাঁকে কলম ধরিয়ে দিতেন। শুরুর দিকে খুব সমস্যা হতো। তবে প্রতিনিয়ত বিউটি চেষ্টা চালিয়ে যেত। একপর্যায়ে পা দিয়ে লেখা আয়ত্তে আনে সে। রহিমা আরও বলেন, বিউটির অদম্য মনোবলই তাকে এত দূর নিয়ে এসেছে। যতই কষ্ট হোক, তাকে উচ্চশিক্ষিত করে তুলবো।
ক্ষেতলালের আকলাস শিবপুর শ্যামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আকাম উদ্দীন আকন্দ বলেন, বিউটি আক্তার পা দিয়ে লিখে তার বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে।
দুপচাঁচিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সামছুল হক বলেন, মেয়েটি মেধাবী। নিয়মিত ক্লাস করতো। পা দিয়ে লিখলেও তার ইংরেজি ও বাংলা দুটি লেখায় ভালো। অধ্যক্ষের ধারণা, পা দিয়ে লেখার জন্য খুব দ্রুত লিখতে একটু সমস্যার কারণে আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেনি বিউটি।
জয়পুরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, শিক্ষাকালে বিউটির যেন কোনো অসুবিধা না হয় এজন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 4 =

Back to top button