খেলাধুলাফুটবল

১০ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে লিওঁ

সেমিফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সবাই ম্যানচেস্টার সিটিকে একরকম ঠিক করে ফেলেছিলেন। চ্যাম্পিয়নস লিগের শুরু থেকেই দুর্দান্ত দাপুটে সিটি। কোয়ার্টারে তাদের প্রতিপক্ষ লিওঁ, যারা এবার ফ্রেঞ্চ লিগে সপ্তম হওয়ায় আগামীবার ইউরোপাও খেলবে না। সেই লিওঁ ট্যাকটিকসের খেলায় হারিয়ে দিল পেপ গার্দিওলার দলকে। ৩-১ ব্যবধানের এ জয়ে ১০ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠল ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী এ দল।

বায়ার্ন মিউনিখ-বার্সেলোনা ম্যাচে এমনই গোলবন্যা হয়েছিল যে ঠিকভাবে গোলের বর্ণনা করা যায়নি। একের পর এক গোল হলে তার বর্ণনায় ভিন্নতা আনাও তো কঠিন। ম্যানচেস্টার সিটি ও লিওঁর ম্যাচে সে সমস্যা হয়নি প্রথমার্ধে। মাত্র একটি গোলই হয়েছে, আর সে গোল একটু বিস্তারিত বর্ণনার দাবি করেই।

প্রথম ২০ মিনিট দুই দলই নিজেদের ট্যাকটিকের ওপর বিশ্বাস রেখে খেলেছে। একদিকে সিটি পাসিং ফুটবলের পসরা সাজিয়েছে, ওদিকে লিওঁ বেছে নিয়েছে দুই উইংকে মুক্ত করে প্রতি আক্রমণকে। ২৩ মিনিটে অবশ্য যা হলো তা লিওঁ কোচ রুডি গার্সিয়ার পক্ষে কখনোই আগ থেকে পরিকল্পনা করা সম্ভব ছিল না।

নিজেদের অর্ধ থেকে সেন্টারব্যাক মার্সাল একটা লং পাস দেন তোকো একাম্বির উদ্দেশ্যে। অফ সাইড ফাঁদ ভেদ করতে পেরেছেন কি না এ নিয়ে কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলেন একাম্বি। তাই বলে বল ধরে এগুতে একটু বেশি সময় নিয়ে ফেলেছিলেন। তবু বেশ গতি নিয়েই বক্সের দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এরিক গার্সিয়ার দারুণ এক ট্যাকল তাঁর পা থেকে বল কেড়ে নেয়।

এদিকে একাম্বিকে একা ছুটতে দেখে অনেকটাই এগিয়ে এসেছিলেন গোলরক্ষক এডেরসন। আর গার্সিয়ার ট্যাকলের পর বলটা পড়ল উইংব্যাক ম্যাক্স করনেটের সামনে। ডি-বক্সের কাছে তখন মাটিতে শুয়ে আছেন গার্সিয়া, একাম্বি। আর এগিয়ে আসতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা এডেরসন তাঁদের একটু সামনে। এ তিনজনের জটলার কারণে গোলবার দেখতে পাচ্ছিলেন না করনেট। ৩০ গজ দূর থেকে তাই সম্ভাব্য সেরা কাজটা করলেন।

বাঁ পায়ে যতটা সম্ভব বাঁকানো এক শট নিলেন। হতভম্ব এডেরসন দেখলেন কীভাবে বলটা গোলপোস্ট ঘেষে জালে চলে যাচ্ছে। গোল খেয়ে একটু হুশ ফেরে সিটির। এর আগ পর্যন্ত ম্যাচে কোনো শট নেয়নি দলটি। কাগজে-কলমে ৪-৪-২ ফরমেশনে নামলেও মাঠে ৩-৪-৩ এ খেলছিল সিটি। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ফার্নান্দিনহো সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলছিলেন। আর দুই উইংব্যাক হিসেবে অবাধ বিচরণের স্বাধীনতা পেয়েছেন ওয়াকার ও ক্যানসেলো। মাঝমাঠ ঠিক রাখার কাজটা গুন্দোয়ান ও রদ্রিকে দিয়ে সামনে আক্রমণ সাজানো শুরু করলেন স্টারলিং ও ডি ব্রুইনা। এ দুজনের মাঝে থাকা জেসুস সে তুলনায় একটু ম্রিয়মানই ছিলেন।

কিন্তু রুডি গার্সিয়ার জমাট ৫ জনের রক্ষণ ভেদ করা হচ্ছিল না সিটির। ৪০ মিনিট পর্যন্ত খুব ভালো সুযোগও সৃষ্টি করতে পারেনি পেপ গার্দিওলার দল। ৪২ মিনিটে স্টারলিংয়ের সুবাদে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন রদ্রি। কিন্তু তাঁর দুর্বল শট ঠেকাতে কষ্ট হয়নি লিওঁ গোলরক্ষক লোপেসের। যোগ করা সময়ে দারুণ এক সুযোগ নিজেই হাতছাড়া করেছেন স্টারলিং। ডি ব্রুইনার পাস তাঁকে ফাঁকায় খুঁজে নিয়েছিল গোলবার থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে। কিন্তু শট নিতে একটু দেরি করায় গোলরক্ষক লোপেস এসে পড়েন সামনে, কর্নারের মাধ্যমে বেঁচে যায় লিওঁ।

দ্বিতীয়ার্ধের ১০ মিনিটে ফরমেশন বদলান গার্দিওলা। ফার্নান্দিনহোকে তুলে নিয়ে মাহরেজকে নামান। ফলে চার জনের রক্ষণে ফেরে সিটি। আর মাহরেজকে পেয়ে আক্রমণেও ধার বাড়ে ডি ব্রুইনাদের। তবু লিওঁর পাঁচজনের রক্ষণ ভাঙা হচ্ছিল না তাঁদের। বিশেষ কিছু একটার দরকার পড়ছিল এ রক্ষণ ভাঙার জন্য।

৬৯ মিনিটে মাহরেজ সেটা এনে দিলেন। তাঁর দারুণ এক লব ডি বক্সের ভেতর দারুণ নিয়ন্ত্রণে দখলে নেন স্টারলিং। লিওঁ রক্ষণকে ব্যস্ত রেখে বক্সের মাথায় পাস দেন ডি ব্রুইনাকে। আর দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ব্রুইনা সেটা জালে পাঠিয়ে সমতা ফেরান ম্যাচে।

গোল পেয়ে আরও মরিয়া হয়ে আক্রমণে নামে সিটি। কিন্তু গ্যাব্রিয়েল জেসুসের বাজে শট দুটি ভালো সুযোগ নষ্ট করে দেয়। ৭৭ মিনিটে যে সুযোগ মিস করেছেন জেসুস, তাঁর ওপর রাগ করতেই পারেন স্টারলিং, একটি এসিস্ট নামের পাশে যোগ হলো না বলে। এক মিনিট পরেই সে ভুলের খেসারত দেয় সিটি। হোসেম অওরের এক রক্ষণ চেরা সিটিকে তছনছ করে দেয়। অওরের পাসটা আকাম্বির উদ্দেশ্যে ছিল।

কিন্তু অফসাইডে থাকায় সেটা ধরার চেষ্টা করেননি আকাম্বি। তাঁর বদলে ৩ মিনিট আগেই মাঠে নামা মুসা ডেমবেলে একা ছুটলেন সিটির ডি-বক্সে। আশপাসিটির কোনো ডিফেন্ডার না থাকায় বেশ সময় নিয়ে শট নিলেন।

সে শট এডেরসনের পায়ের নিচ দিয়ে চলে গেল জালে। ৮৬ মিনিটে অবশ্য জেসুসের চেয়েও বড় ভুল করলেন স্টারলিং। খালি গোলপোস্ট পেয়েও বল কীভাবে যেন বাইরে মেরেছেন। আগেরবার তবু ১ মিনিট লেগেছিল। এবার ৪০ সেকেন্ডের মাথায় এর খেসারত দিয়ে সিটি। সেই অওরের এক শট ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন এডেরসন। সে বল গিয়ে পড়ে ডেমবেলের সামনে। ব্যবধান বাড়াতে একদম ভুল করেননি এই স্ট্রাইকার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × four =

Back to top button