আন্তর্জাতিক

অং সান সু চি কে না ছাড়লে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে আটক ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চিসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের ছেড়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলেছে, সু চিসহ অন্যদের ছেড়ে না দিলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি এক বিবৃতিতে এ বিষয়টি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে জেন সাকি বলেছেন, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার যেকোনো ধরনের চেষ্টার বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টারও বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপগুলোর ব্যত্যয় ঘটলে মিয়ানমারের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

সেনাবাহিনী পরিচালিত মায়াওয়াদ্দি টিভিতে প্রচারিত একটি ভিডিওতে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ক্ষমতাগ্রহণ করে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে হস্তান্তর করেছে তারা। মিয়ানমারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এমন পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় ছিল। 

গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেই নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি উত্তেজনার মধ্যেই সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে সেনাবাহিনী তাদের আটক করে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

পরে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে দেশে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেওয়া হয় বলে রয়টার্সের খবরে জানানো হয়। মিয়ানমারে বেসামরিক সরকার ও প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিন ধরে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার পর এ ঘটনা ঘটল।

এনএলডির মুখপাত্র মিও নয়েন্ট রয়টার্সকে বলেন, অং সান সু চি, রাষ্ট্রপতি উইন মিন্ট এবং অন্য শীর্ষ নেতাদের সোমবার ভোরে আটক করা হয়েছে। সৈন্যরা দেশের বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তাদের ধরে নিয়ে যায় বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। এসময় তিনি জনগণকে উত্তেজিত না হয়ে আইন অনুসারে প্রতিক্রিয়া দেখানোরও আহ্বান জানান।

গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সেনাবাহিনী আবার ক্ষমতা দখল করবে এমন গুঞ্জন চলছিল। প্রায় পাঁচ দশক ধরে মিয়ানমারের ক্ষমতায় ছিল দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনী। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি নিরঙ্কুশ জয় পায়। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে সেনাবাহিনী। ২০১১ সালে সরাসরি সেনা শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রের পথে ফেরা মিয়ানমারে এটি ছিল দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচন 

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ইয়াঙ্গুনের সিটি হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সু চিকে আটকের পর অভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির এক সাংবাদিক জানান, সিটি হল চত্বরে সেনাবাহিনীর পাঁচটি ট্রাক রয়েছে। যারা কাজে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তাদের সেনাসদস্যরা ফিরিয়ে দিচ্ছেন।

দেশটির বড় শহরগুলোতে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। রাজধানী নেপিডোর এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা যাচ্ছে। নাইপিডোতে টেলিফোন এবং ইন্টারনেট লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

গত বছরের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল এনএলডি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেখানে ৩২২টি আসনই যথেষ্ট, সেখানে এনএলডি পেয়েছে ৩৪৬টি আসন। এছাড়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জন্য সংবিধানে পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত আছে।

এরপরই সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে প্রবল উত্তেজনা দেখা দেয়। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলে দেশটির সেনাবাহিনী। এবার সেই অভিযোগেই অভিযান চালিয়ে সু চিসহ এনএলডির শীর্ষ নেতাদের আটক করা হল।

সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমারে পার্লামেন্টের উদ্বোধনী অধিবেশন হওয়ার কথা। এদিনই ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের আটক করা হলো। যদিও এর আগেই সেনাবাহিনীর হুমকিতে অভ্যুত্থানের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। তখন এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলো।

নির্বাচনে ক্রমাগত জালিয়াতির অভিযোগ করে আসা দেশটির সেনাবাহিনী আগেই বলেছিল, তাদের অভিযোগ আমলে না নিলে বাহিনীর পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই হুমকির মধ্যেই সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র ক্ষমতা দখল করে নেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি। শেষ পর্যন্ত সেটাই হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

এরপর গত শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও মিয়ানমারে অবস্থিত পশ্চিমা দেশগুলোর দূতাবাস দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে সেনা হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানায়। যদিও পরের দিনই দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে অভ্যুত্থানের আশঙ্কা নাকচ করে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সংবিধান মেনে আইন অনুযায়ী কাজ করবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেসের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য আরও ১২ টি দেশ শুক্রবার আলাদা আলাদা বিবৃতি দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে নির্বাচনের ফল পরিবর্তন কিংবা গণতান্ত্রিক রূপান্তর ব্যাহত করার যে কোনও প্রচেষ্টারই তারা বিরোধী বলেও জানিয়েছে।

ওই নির্বাচনে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের ভোটারদের ভোট বঞ্চিত করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী থেকে সমালোচনা করা হয়। আর সেনাবাহিনী সমর্থিত বিরোধী জোট নির্বাচনে দাবি করে নির্বাচনে ৮.৬ মিলিয়ন ভোট জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।

গত সপ্তাহে সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, ‘নির্বাচনে প্রতারণার’ অভিযোগ নিয়ে মিয়ানমারে যে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান না হলে ‘ব্যবস্থা নেওয়ার’ পরিকল্পনা আছে তাদের।

এটি কি অভ্যুত্থান হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ‘সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না’ বলে মন্তব্য করলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three − 1 =

Back to top button